
রোহিঙ্গারা মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্র পাড়ি দিচ্ছে
মিয়ানমারে ভয়াবহ মানবিক সংকটের কারণে রোহিঙ্গারা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ঝুঁকিপূর্ণ নৌযাত্রায় বিভিন্ন দেশে পাড়ি দিচ্ছে বলে জানিয়েছে ইউএনইএচসিআর। সংস্থাটি জানিয়েছে, যাত্রাকালে শুধু দুইদিনে নৌকাডুবিতে ৪২৭ জনের মতো মৃত্যু হয়েছে । চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়া জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের সহায়তা কমিয়ে দেওয়ার কারণেই এমন ঘটনা ঘটছে।
জাতিসংঘের বরাত দিয়ে চীনের বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের সহায়তা তহবিল কমে যাওয়ায় এই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন দিকে চলে যাওয়ার এমন ঝুঁকি নেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। সংস্থাটি অভিযোগ করে বলেছে, মানবিক খাতে সহায়তা কমে যাওয়া এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ও পশ্চিমারা মানবিক খাতে তাদের বাজেট কমিয়ে প্রতিরক্ষা খাতে বাজেট বৃদ্ধির জন্যই রোহিঙ্গারা এমন মৃত্যুর ঝুঁকি নিচ্ছে। সংস্থাটি আরও জানায়, এসব রোহিঙ্গা বর্ষা মৌসুমের মধ্যেই সমুদ্রপথে যাত্রা বেছে নেয়। যা এটি তাদের চরম হতাশা ও নিরাপত্তাহীনতার ইঙ্গিত বহন করে।
বার্তা সংস্থা সিনহুয়া জানিয়েছে, রাশিয়া ও চীন নিয়ে উদ্বেগ বাড়ায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে প্রধান দাতারা বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলো প্রতিরক্ষা খাতে বেশি বিনিয়োগ করতে গিয়ে মানবিক খাতের তহবিল কমিয়ে দিয়েছে।
জাতিসংঘের উদ্বাস্তু বিষয়ক সংস্থা-ইউএনইএচসিআর জানিয়েছে, গত ৯ ও ১০ মে ডুবে যাওয়া দুই নৌকায় ৫১৪ রোহিঙ্গা ছিলেন। এরা বাংলাদেশের কক্সবাজারের বিভিন্ন শিবির এবং মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে রওনা দিয়েছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে মাত্র ৮৭ জনকে জীবিত উদ্ধার করা গেছে। ৪২৭ জনের সম্ভাব্য মৃত্যু রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য এই বছরের সবচেয়ে বেদনাদায়ক ঘটনা।
সংস্থাটির এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক ব্যুরোর পরিচালক হাই কিয়াং জুন বলেছেন, তহবিল কমার কারণে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। এই ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতি রোহিঙ্গাদের জীবনে ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলছে। যার ফলে নিজেদের ও পরিবারের জন্য নিরাপদ, সুরক্ষিত ও মর্যাদাপূর্ণ জীবনের সন্ধানে তারা আরও বিপজ্জনক যাত্রা করতে বাধ্য হচ্ছে।
বাংলাদেশসহ আশ্রয়দানকারী দেশগুলোতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জীবনকে স্থিতিশীল করতে এবং মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বাস্তুচ্যুতদের জন্য আরও আর্থিক সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর। ২০২৫ সালে তাদের জন্য ৩৮৩.১ মিলিয়ন ডলারের সহায়তার অনুরোধ করা হলেও এখন পর্যন্ত মাত্র ৩০ শতাংশ পূরণ হয়েছে।
২০২৪ সালে ইউএনএইচসিআর যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি অনুদান পেয়েছে, যা তাদের মোট অনুদানের ৪০ শতাংশ।
ইউএনএইচসিআরের একজন মুখপাত্র বলেছেন, খরচ কমানোর অংশ হিসেবে তারা মার্চ মাসে ৩০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি পূর্বপরিকল্পিত কার্যক্রম স্থগিত করেছেন। ইউএনএইচসিআর-এর এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের আঞ্চলিক ব্যুরোর পরিচালক হাই কিউং জুন বলেন, মানবিক পরিস্থিতির অবনতি এবং তহবিল কাটছাঁট রোহিঙ্গাদের জীবনে ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে। তারা এখন নিজেদের ও পরিবারের জন্য নিরাপত্তা, সুরক্ষা এবং মর্যাদাপূর্ণ জীবনের সন্ধানে বিপজ্জনক পথ বেছে নিচ্ছে।
সংস্থাটি বাংলাদেশসহ রোহিঙ্গা শরণার্থী আশ্রয়দানকারী দেশগুলো ও মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুতদের জীবনের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে আরও আর্থিক সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে। ২০২৫ সালের জন্য ইউএনএইচসিআর-এর চাওয়া ৩৮৩ দশমিক ১ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র ৩০ শতাংশ তহবিল জোগাড় হয়েছে।
২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ইউএনএইচসিআর-কে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি অনুদান দিয়েছে, যা সংস্থাটির মোট অনুদানের ৪০ শতাংশ। মার্চ মাসে সংস্থাটি ব্যয় সীমাবদ্ধতার কারণে ৩০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি পরিকল্পিত কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে।