ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

পরিবার ছোট হচ্ছে

-

প্রকাশিত: ২০:৪৯, ২৪ মে ২০২৫

পরিবার ছোট হচ্ছে

সম্পাদকীয়

সাম্প্রতিক বাংলাদেশে পরিবারের আকার ছোট হয়ে আসছে। প্রতিদিন দেশে ২ হাজার ২০০ নতুন পরিবার যোগ দিচ্ছে পারিবারিক জীবনে। বাবা-মা, ভাই-বোন, ছেলে-মেয়ে, চাচা-চাচি নিয়ে একসঙ্গে বসবাস করার মতো পরিবার কমে যাচ্ছে ইদানীং।  সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, একান্নবর্তী পরিবার প্রথা ভেঙে অণুপরিবার গঠনের নেতিবাচক প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ছে শিশু ও প্রবীণ জনগোষ্ঠীর ওপর।

কারণ, জীবনের পড়ন্তবেলায় জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের দেখভাল ও সেবাশুশ্রƒষা খুব বেশি প্রয়োজন। অন্যদিকে পরিবারের সবচেয়ে ক্ষুদ্র সদস্যের আদব-শিষ্টাচার শেখাতে মুরব্বিদের অবদান ও প্রভাব সবচেয়ে বেশি। জীবনের কঠিন বাস্তবতায় যৌথ পরিবারগুলো ভেঙে যাওয়ায় এই দুই শ্রেণির নাগরিকরা খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মানুষের নাগরিক জীবনের এ পরিবর্তন ভালো না মন্দ, তা নিয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রে একাডেমিক আলোচনা তুলনামূলক অনেক কম।
জনসংখ্যা বিজ্ঞানের ভাষ্যে, পরিবার তিন ধরনের। যৌথ পরিবারে থাকে স্বামী-স্ত্রী, তাদের সন্তান, বাবা-মা, ভাই-বোন, চাচা-চাচি, দাদা-দাদি। অণুপরিবারে থাকে, স্বামী-স্ত্রী ও তাদের সন্তান-সন্তুতি। বর্ধিত পরিবারে থাকে, স্বামী-স্ত্রী ও তাদের সন্তানের সঙ্গে বাবা-মা, ভাই-বোন থাকেন। সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিবর্তন, দ্রুত নগরায়ণ এবং ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবোধ যৌথ পরিবার ভেঙে অণুপরিবার হওয়ার পেছনে কারণ হিসেবে কাজ করে। আর্থসামাজিক রূঢ় বাস্তবতায় যৌথ পরিবার ভেঙে অণুপরিবারের বিকাশ ঘটছে। পরিবারের সংখ্যা বাড়লেও এর আকার দিন দিন ছোট হতে দেখা যাচ্ছে।

অর্থাৎ পরিবারের গড় সদস্য সংখ্যা কমে আসছে। শহর কিংবা গ্রামের বাড়িতে এখন বড় পরিবার খুব একটা দেখা যায় না। ১৯৯৪ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, শহরে পরিবারগুলোর আকার ছোট হওয়ার প্রবণতা গ্রামের চেয়ে কিছুটা বেশি। গ্রাম ও শহরে পরিবারের আকার ভেদে তারতম্য রয়েছে।
জাতিসংঘ ১৯৯৩ সাল থেকে প্রতিবছর ১৫ মে আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। এবারের প্রতিপাদ্য ছিলÑ ‘পরিবারকে ঘিরেই টেকসই উন্নয়নের ভিত্তি গড়া’। আন্তর্জাতিক সংস্থাটি বলছে, প্রতিটি পরিবারের নিরাপত্তা ও সহায়তা দেওয়ার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের। পরিবারের সদস্যদের অধিকার, সক্ষমতা ও দায়িত্বের বিষয়ে দৃষ্টি রাখাও সরকারের দায়িত্ব। যে কোনো রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাঠামোর পরিবার হোক না কেন, শক্তিশালী পরিবারের পক্ষে সরকারের অবস্থান থাকবে ইস্পাত কঠিন।

নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি কিংবা  অণুপরিবার হলো, স্বামী-স্ত্রী ও তাদের সন্তান নিয়ে গঠিত ছোট পরিবার, যা বর্তমান যুগের বাস্তবতায় খুবই প্রাসঙ্গিক। দ্রুত নগরায়ণ, সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিবর্তন, ব্যক্তি স্বাধীনতা যৌথ পরিবার ভেঙে অণুপরিবার তৈরির অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে। পৃথিবীর যে কোনো জনপদে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের দেশীয় ঐতিহ্যবাহী যৌথ পরিবার ভেঙে অণুপরিবার হওয়ার সঙ্গেও সংখ্যা বৃদ্ধির সম্পর্ক আছে। পরিবার ছোট হওয়ার সম্পর্ক রয়েছে রাষ্ট্রের পরিবার পরিকল্পনার সঙ্গেও

×