ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বাংলাদেশ নিয়ে আবার ষড়যন্ত্র

মেজর আহমেদ ফেরদৌস (অব.)

প্রকাশিত: ২০:৫০, ২৪ মে ২০২৫

বাংলাদেশ নিয়ে আবার ষড়যন্ত্র

৩৬ জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখেছিল নতুন এক বাংলাদেশ গড়ার। ২০০০ লাশ ও ২২০০০ অধিক আহতের বলিদান বৃথা যাবে না- এই মর্মে সমগ্র বাংলাদেশ উজ্জীবিত হয়। ড. ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত সরকারকে ফ্যাসিস্ট ও তার দোসররা ছাড়া সবাই স্বাগত জানায়। বাংলাদেশের জনগণ আশার আলো দেখা শুরু করে। ‘এর পরই শুরু হয় ষড়যন্ত্র’-জুডিসিয়াল ক্যু, আনসার বিদ্রোহ, যত্রতত্র অন্যান্য দাবি-দাওয়া নিয়ে সরকারকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখে ফ্যাসিস্ট রেজিমের ঘাপটি মেরে থাকা লোকজন। দেশি-বিদেশি  এসব ষড়যন্ত্রকারী এতটা সংগঠিত যে আজ তারা সরকার ও দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর মাঝে তৈরি করেছে এক মনস্তাত্ত্বি¡ক দূরত্ব। গুজব রটিয়ে তারা দেশকে বিভাজিত করতে অনেকটা এগিয়ে গেছে।
উপরোক্ত ঘটনা বিশ্লেষণ করতে দেওয়ার আগে নিজেকে তথা জনগণকে কিংবা আমাদের সচেতন ও একতার অভাবকে দায়ী করতে চাই। এই বিভক্তি রাষ্ট্রের জন্য কতটা ধ্বংসাত্মক ও ক্ষতিকারক আর কিয়দাংশ কি আমরা অনুধাবন করতে পেরেছি?
জাতীয় ইস্যুতে দলমত নির্বিশেষে বাংলাদেশের পতাকার নিচে বিভাজনের দায়ভার রাজনৈতিক দলগুলোর দূরদর্শিতার অভাব, সরকারের নমনীয় ভাব ও প্রশাসনের মাঝে ঘাপটি মেরে থাকা আমলাদের বহন করতে হবে। এ বিভাজিত মতাদর্শিক ভাবনাকে এক ছাতার নিচে একত্রিত করার দায়িত্ব ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিতে হবে। রাগ/অভিমান হতে দূরে সরে আসতে হবে। রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে জাতীয় ইস্যুতে এক হতে জনগণের যা করণীয় তা জনগণ করতে প্রস্তুত। এখানে নেতৃত্ব একটা ফ্যাক্টর তা যে কোনো পর্যায়েই হোক না কেন? এত শক্তিশালী ফ্যাসিস্ট রেজিমকে জনগণ উৎখাত করতে পারলে বর্তমান সমস্যাও সমাধান সম্ভব।

মোটা দাগে বাংলাদেশের বর্তমান সমস্যাগুলো কি?
১। সরকার ও সেনাবাহিনীর মনস্তাত্ত্বিক  দ্বন্দ্ব
২। সংস্কার ও নির্বাচন
৩। রাজনৈতিক দলসমূহের বিভাজন বিশেষত বিএনপি ও এনসিপির দ্বন্দ্ব
৪। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কাক্সিক্ষত উন্নতি না হওয়া
৫। বন্দর, করিডর নিয়ে উদ্বেগ।
মোটামুটি এসব সমস্যার বাইরেও আরেকটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ খাত নিয়ে ষড়যন্ত্রের আলামত পাওয়া যাচ্ছে। যা নিয়ে জনসচেতনতা গড়তে আজ দৃষ্টিপাত করতে চাই।

বিদ্যুৎ নিয়ে ষড়যন্ত্র
(ক) বিদ্যুৎ খাতের দুর্নীতি : সূত্র প্রথম আলো ৩ ডিসেম্বর ২০২৪–‘বিদ্যুতে ৬০০ কোটি ডলার নয় ছয়’- ফ্যাসিস্ট সরকারের ১৫/১৬ বছরে নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কমিশন ১০% ও ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ ৫০০ কোটি ডলার অর্থাৎ ৭৫,০০০ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে, যা বাংলাদেশের অর্থনীতির শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
২০১০ সালে জারি করা হয় সবচেয়ে বিতর্কিত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, দফায় দফায় এটির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে, যার ফলে দুর্নীতির ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে।
ফ্যাসিস্ট আমলে বিদ্যুতের মহাউন্নয়ন (?) হলেও জনগণকে লোডশেডিংয়ের অত্যাচার নীরবে সহ্য করতে হয়েছে। এ ছাড়াও দুর্নীতির কারণে সরকার জনমত উপেক্ষা করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্য অযৌক্তিক হারে বৃদ্ধি করেছে।
বিদ্যুৎ নিয়ে যে চুরি হয়েছে তা পুকুর চুরি নয়। এ যেন মহাসাগর চুরি। আর এই চুরিকে বৈধতা দিয়েছে বহুল বিতর্কিত সেই আইন। যদিও বর্তমান সরকার সেই আইনটি বাতিল করেছে, কিন্তু জনগণকে তো এর বোঝা বইতে হচ্ছে ঘাম ঝরানো পরিশ্রম করে অর্জিত অর্থ দিয়ে।
সমকাল ২৫ আগস্ট ২০২৪-এ জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশনের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলমের একটি লেখায় তিনি শিরোনাম দিয়েছেন ‘অলিগার্ক সৃষ্টি করে লুণ্ঠন হয়েছে জ্বালানি খাতের নীতি।’
বাংলাদেশের জনগণ এতদিন বাক স্বাধীনতার অভাব, গুম, খুন, আয়নাঘরের ভয়ে এসব অলিগার্ক তথা সামিট পাওয়ার, ভারতের আদানী গ্রুপ ও রিলায়েন্সের নামসহ বহু দেশীয়/কোম্পানির মাধ্যমে লাখ লাখ কোটি টাকার বিদ্যুৎ দুর্নীতি নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছে। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ ও ব্যাংকিং সেক্টরে যে দুর্নীতি হয়েছে তা দিয়ে বাংলাদেশের ৬/৭ বছরের বাজেট প্রণয়ন করা সম্ভব।

(খ) বিদ্যুৎ খাতে অন্তর্বর্তী সরকারের সফলতা : এই সেক্টরটি এতটাই দুর্নীতিতে নিমজ্জিত যে এখানে লাখ লাখ প্যাঁচ। একেকটা পঁ্যাঁচ এতটাই জটিল যে এখানে প্যাঁচ খুলতে গেলে সাগরে সুঁই খোঁজার মতন দুরূহ বিষয়। তার পরও বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণে কিছুটা ডিসিপ্লিন আনা গেছে বিধায় গত রমজানে দেশবাসী নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পেয়েছে। ফ্যাসিস্ট আমলে কৃত আন্তর্জাতিক বিদ্যুৎ চুক্তিগুলো আইনি জটিলতায় বাতিলেও সরকারকে বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে। এর মাঝে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় ও বিদ্যুৎ সম্পর্কিত দপ্তরগুলোতে বিদ্যুৎ দুর্নীতির উচ্ছিষ্টভোগীরা নিজের পিঠের চামড়া বাঁচাতে ক্রমাগত আমলাতান্ত্রিক জটিলতা তৈরি করছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের আরেকটি ‘পেইন’ ছিল জ্বালানি বিক্রেতাদের পেমেন্ট। ফ্যাসিস্ট রেজিমেন্টের সামাহীন দুর্নীতি, ব্যাংকিং খাতের লুটপাট ও বৈদেশিক মুদ্রা তহবিল পাচারের কারণে রিজার্ভ ১৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। ফলে বর্তমান সরকার বৈদেশিক জ্বালানি বিক্রেতাদের বিল পরিশোধ করতে পারছিল না। জ্বালানি বিক্রেতারা জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া শুরু করে। এতে দেশের জ্বালানি ও অর্থনৈতিক খাত ধ্বংস হওয়ার দোরগোড়ায় পৌঁছে যায়। সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরে আসায় ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকার সম্প্রতি কাতার ভ্রমণে কাতার সরকারকে এলএনজি বাবদ বিল পরিশোধ করে (২৫৪ মিলিয়ন ডলার)।

গ) বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বাপবিবো) নিয়ে যড়যন্ত্র
বাংলাদেশের মোট বিদ্যুৎ চাহিদার ৮০% পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও এর ৮০টি সমিতি জনগণকে দিয়ে থাকে। মোট প্রায় ৩.৭০ কোটি গ্রাহক নিয়ে এই বোর্ডের কার্যক্রম। ১৯৭৭ সালে মরহুম প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়াউর রহমানের সময় পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের কার্যক্রম শুরু হয়। যুক্তরাষ্ট্রের গ্রামাঞ্চলে সফলভাবে বিদ্যুতায়ন বোর্ডের কল্যাণে আজ প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জে বিদ্যুত সেবা প্রদান সম্ভব হয়েছে। প্রান্তিক পর্যায়ে বিদ্যুৎ পৌঁছানোর কারণে জাতীয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পেয়েছে। আজ তাই বিদ্যুৎ মৌলিক সেবারূপে প্রতিষ্ঠিত।
বাংলাদেশে পল্লী বিদ্যুৎ ৮০টি সমিতির মাধ্যমে গ্রাহককে সেবা দিচ্ছে। এর মাঝে ১২/১৪টি সমিতি লাভজনক। বাকিগুলো লোকসানের বোঝা নিচ্ছে। যেহেতু এটি একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান তাই এরা গ্রামের কৃষক, গরিব জনগোষ্ঠীর কাছে ভর্তুকি তথা লোকসানে বিদ্যুৎ দিচ্ছে, যা সরকারের নৈতিক দায়িত্ব। এই প্রতিষ্ঠান যদি প্রাইভেট কোম্পানির হাতে দিয়ে দেওয়া হয়, তখন কৃষক, শ্রমিককে উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ কিনতে হলে তাদের পক্ষে বিদ্যুৎ সেবাগ্রহণ কি সম্ভব হবে?
১২/১৪টি লাভজনক পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রাহককে ভর্তুকি ছাড়া বিদ্যুৎ দেওয়াতে লাভজনক হতে পারছে। বিগত সরকারের সময় এ লাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলো অলিগার্ক গোষ্ঠীরা খেয়ে ফেলতে এক গভীর চক্রান্তে লিপ্ত হয়। এসব অলিগার্ক এতটাই ক্ষমতাবান ছিল যে, তারা ফ্যাসিস্ট রেজিমে যা ইচ্ছা তাই করেছিল। বিদ্যুৎ সেক্টরকে এরা লুটেপুটে খেয়ে এদের কুনজর পড়ে পল্লী বিদ্যুতের লাভজনক ১২/১৪টি সমিতির ওপর। আল্লাহর বিশেষ রহমত ৩৬ জুলাই ২০২৪ আসায় এদের সেই ষড়যন্ত্র বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু এদের লুটপাটের উচ্ছিষ্ট অংশ ভোগকারী ব্যক্তিরা পর্দার আড়াল হতে এই অলিগার্কদের পৃষ্ঠপোশকতায় চক্রান্ত শুরু করে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের অংশ হিসেবে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডে নেওয়া হয় একটি বড় ধরনের সংস্কার উদ্যোগ, যা বিভিন্ন গণমাধ্যম দ্বারা জানা যায়। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড আন্দোলনকারীদের যৌক্তিক দাবিগুলোকে আমলে নিয়ে নিয়োগ, পদোন্নতি বিভিন্ন ওয়েলফেয়ারমূলক কার্যক্রম নেওয়াতে এ প্রতিষ্ঠানের ৪৬,৪৫৪ জন কর্মকর্তা/কর্মচারীর মাঝে সন্তুষ্টি ও গ্রাহকবান্ধব বিদ্যুৎ সেবা প্রদানে স্পিরিট জাগে।
সরকারি চাকরির বিধিমালা মোতাবেক ৩ বছরের পর বদলি একটি স্বাভাবিক বিষয়। পল্লী বিদ্যুতে এতটাই অরাজকতা ছিল যে একজন কর্মী একই স্থানে ২০/২৫ বছর ধরে কর্মরত, তাও কি তার নিজ গ্রামের বাড়ির কাছের সমিতিতে। সরকারি বিধিমালা মোতাবেক তাই সংস্কারের পদক্ষেপ হিসেবে বিভিন্ন স্তরে বদলি প্রক্রিয়া শুরু হলে সুবিধাভোগী শ্রেণির স্বার্থে আঘাত লাগে। আর এ সুযোগটি কাজে লাগিয়ে পল্লী বিদ্যুতের অসৎ, বরখাস্তকৃত তৎকালীন ফ্যাসিস্ট রেজিমের রাজনৈতিক সুবিধাভোগী চক্রান্তকারীরা আবার সক্রিয় হয়। পল্লী বিদ্যুতের সংস্কার উদ্যোগকে বন্ধ করতে যড়যন্ত্রকারীরা তাদের দীর্ঘদিনের সিন্ডিকেট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় আবার বিদ্যুৎ খাতকে অস্থিতিশীল করছে তা বের করতে হবে।
দীর্ঘদিনের এই সিন্ডিকেট ভাঙতে কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা/কর্মচারীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্র বাদী হয়ে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা করে। এতে ১০/১২ জনের জেল হয়। বর্তমানে তারা জামিনে আছে। দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার জন্য প্রশাসনিক ব্যবস্থার আলোকে বেশ ক’জনকে চাকরি হতে বরখাস্ত করা হয়। লঘু পাপে কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অন্যত্র বদলি করা হয়।
সম্প্রতি এ সংস্কারের বিরুদ্ধে আওয়ামী দোসরদের ব্যাকআপে একটা গ্রুপ অস্থিরতা শুরু করে। এই দোসররা আওয়ামী আমলে সরকারি কর্মকর্তা হয়েও প্রকাশ্যে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মা ডাকে ও মরহুম প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়াউর রহমান যিনি এই প্রতিষ্ঠানের জনক তাকে স্বৈরশাসক হিসেবে আখ্যায়িত করেন। এই আন্দোলনকারীদের নেতৃত্বে পল্লী বিদ্যুতের বরখাস্তকৃত এজিএম রাজন কুমার দাসের বিভিন্ন ভিডিওতে এর প্রমাণ ইউটিউব ও সোশ্যাল মিডিয়াতে পাওয়া যায়। আওয়ামী ন্যারেটিভের অংশ হিসেবে তিনি ফ্যাসিস্ট রেজিমে পল্লী বিদ্যুতে বিএনপি-জামায়াতের লোকজনের কথা বলেন। অথচ যারা একটু বিবেকবান তারা ভালো করেই জানেন যে ফ্যাসিস্ট রেজিমে এ রকম বিএনপি-জামায়াতপন্থি লোকজন সরকারি প্রতিষ্ঠান তো দূরের কথা সশস্ত্র বাহিনী হতেও বের করে দেওয়া হয় স্বৈরাচারী কায়দায়।
এই রাজন কুমার দাস অবৈধভাবে অর্জিত বিপুল টাকার জোর ও ফ্যাসিস্টদের প্ররোচনা/পৃষ্ঠপোষকতায় যে পল্লী বিদ্যুৎকে নিয়ে আবার বড় ধরনের অস্থিরতা শুরু করেছে তার প্রমাণ সম্প্রতি শহীদ মিনারে কয়েক শত লোক নিয়ে আন্দোলনের নামে ষড়যন্ত্র তা দৃশ্যমান। এরা সোশ্যাল মিড়িয়ায় নানা প্রকার বিভ্রান্তমূলক গুজব ও অপতথ্য দিয়ে যাচ্ছে।
এই আন্দোলনের নেপথ্যের খল নায়কদের পরিচিতি, উদ্দেশ্য, বিপুল পরিমাণ অর্থের উৎস কি তা সাধারণ জনগণ নিজ বিবেকবুদ্ধি নিয়ে বিবেচনা করবে- এটাই কাম্য।
একজন নাগরিক হিসেবে এই আন্দোলনে আমিও শরিক হতে চাই। যদি এ আন্দোলন বিদ্যুৎ সেক্টরের লাখ লাখ কোটি টাকার দুর্নীতি, অব্যবস্থা, রাজনীতিকরণের বিপক্ষে জনকল্যাণে হয়। বিদ্যুতের যে ভয়াবহ অরাজকতা হয়েছে এবং জনগণের টাকা লুট হয়েছে সেই ইস্যু নিয়ে আন্দোলন হলে বাংলাদেশের সকল জনগণ তথা ছাত্র-জনতাও সমর্থন পাবে।
আমরা চাই কুইক রেন্টালের নামে ৯০টি প্রতিষ্ঠান যারা বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেও হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেÑ তা ফেরত আনতে জনগণকে একত্রিত করতে।
আমরা চাই লুটপাটের কারণে অযৌক্তিক বিদ্যুৎ বিল যাতে জনগণের ওপর না বর্তায়- তার সুব্যবস্থা।
আমরা চাই বিদ্যুতের লুটেরাদের বিচার। আমরা চাই গ্রাহকবান্ধব বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। জনগণের এ মৌলিক অধিকারে যে/যারাই সৎ নিয়তে কাজ করবে তাতে অটোমেটিক জনসমর্থন পাবে। বাংলাদেশের জনগণ বোকা নয়। তাদের যা তা বুঝিয়ে পার পাওয়া যাবে না। তারা অনেক সচেতন।
বাংলাদেশের স্বার্থ পরিপন্থি ষড়যন্ত্রকারীরা সাবধান। আমরা ৭১ ও ২৪ এ অর্জিত আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা হারিয়ে অন্ধকার ভবিষ্যতে আর যেতে চাই না। রাষ্ট্র ও সরকার ভিন্ন বিষয়। সরকার নিয়ে আমাদের সমালোচনা থাকতেই পারে। গঠনমূলক সমালোচনা আমাদের বুদ্ধিভিত্তিক সমাজ ও জনগণের মৌলিক অধিকার। আজ আমরা সরকারে সমালোচনা ও বাক স্বাধীনতা ফেরত পেয়েছি। কিন্তু এটি অর্জন করতে বহু জীবন/রক্ত ঝরাতে হয়েছে। হাজার হাজার লোককে গুম হতে হয়েছে। লক্ষাধিক মানুষকে মামলা-মোকদ্দমায় কোর্ট কাছারির দুয়ারে দুয়ারে যেতে হচ্ছে। অনেকের জেল হয়েছে। বিনা বিচারে জেলে অনেকের জীবনের শ্রেষ্ট সময় পার করতে হচ্ছে।
বাংলাদেশের ওপর কি তা হলে শনির দশা চলছে? না হলে এত ষড়যন্ত্র কেন হচ্ছে? রাষ্ট্রের বিষয়ে আমরা একতাবদ্ধ হতে ব্যর্থ হলে পরবর্তী প্রজন্ম আমাদের ক্ষমা করবে কি? আমাদের সকলের শুভবুদ্ধির উদয়  হোক।

লেখক : নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক

প্যানেল

×