ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৫ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

নীল বা সাদা নয় শিক্ষক হোক রংহীন

সিনথিয়া ইসলাম

প্রকাশিত: ২০:৩৪, ২৪ মে ২০২৫; আপডেট: ২০:৩৮, ২৪ মে ২০২৫

নীল বা সাদা নয় শিক্ষক হোক রংহীন

রংহীন শিক্ষক, আপাতদৃষ্টিতে মনে হতেই পারে শিক্ষকের কোনো রং হয় নাকি? শিক্ষকের যদি কোনো রং নাই থাকে তাহলে রংহীন শিক্ষক বলার কারণ কি? আমিও বিগত সময়ে মনে করতাম শিক্ষক শিক্ষকই। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে শিক্ষকদের কিছু দল আবিষ্কার করলাম। এখানে শিক্ষকদের সাদা, নীল, গোলাপী রঙে বিভক্ত করা হয়। বিভক্ত করা হয় বললে ভুল হবে, আসলে শিক্ষকরাই নিজেদের দলীয় স্বার্থে এভাবে নিজেদের মধ্যে এই বিভক্তি করেছে।
এখানে নীল, সাদা, গোলাপী রং দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত শিক্ষকগণ নিজেদের পরিচয় দিয়ে থাকেন। অথচ একজন ব্যক্তি যখন শিক্ষক তখন তার প্রধান দায়িত্ব দল মত এর বাইরে গিয়ে শুধু শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করা। অথচ আমরা দেখেছি জুলাইয়ের অভ্যুত্থানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কিভাবে তার শিক্ষার্থীদের শত্রুর মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন ক্যাম্পাস তার নিয়ন্ত্রণে নেই। অথচ এই হাজার হাজার শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব তার কাধে ছিল। আমরা আরও অনেক শিক্ষকদের দেখেছি যারা শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। এছাড়া বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পেছনে প্রশাসন কর্তৃক ক্ষমতাশীন ছাত্রসংগঠনের প্রতি নীরব প্রশ্রয় এর অন্যতম কারণ। দলীয় স্বার্থ রক্ষাই যখন মূখ্য হয়ে দাঁড়ায় তখনই এ ধরনের ঘটনাগুলো ঘটতে দেখা যায়। বিগত সময়ে এবং বর্তমান সময়ে এসেও এগুলো পরিলক্ষিত হয়।
৫ আগস্টের পরে আমরা দেখেছি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পদত্যাগ চাওয়া হচ্ছে। সেখানে শিক্ষকদের সঙ্গে অনেক সময় অসৌজন্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে। আমরা খেয়াল করলে দেখতে পাই, আগের মতো আমরা আর শিক্ষকদের সম্মান করছি না। নীতি নৈতিকতার জায়গা থেকে আমরা অনেক দূরে সরে এসেছি, আমাদের শিক্ষকরাও যেন কিছু মনে করছে না। কিন্তু আমাদের এই বিপর্যয় কেন? একজন শিক্ষকের রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকতেই পারে। কিন্তু এই পরিচয়টি যখন শিক্ষক পরিচয়ের চেয়ে মুখ্য হয়ে যায়, তখনই আসলে বিভাজন সৃষ্টি হয়। তখন শিক্ষার্থীদের স্বার্থও দলীয় স্বার্থের নিচে চাপা পরে যায়। ফলে আমরা শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সম্পর্কের অবনতি দেখতে পাই। শিক্ষকদের এই দলীয় স্বার্থকেন্দ্রিক চিন্তা ভাবনা শুধু ছাত্র শিক্ষক এর সুসম্পর্কই নষ্ট করছে না, শিক্ষক নিয়োগ থেকে শুরু করে প্রশাসনিক কাজ এর ওপরও এর প্রভাব লক্ষ্য করা করা যায়। শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আমরা স্লোগান দিতে বাধ্য হচ্ছি। এগুলো আসলে কেন হচ্ছে, এটা কি শুধুই শিক্ষার্থীদের নৈতিক অধঃপতন নাকি শিক্ষকদেরও দায় আছে? শিক্ষকদের মধ্যেও নৈতিক স্বার্থের চেয়ে দলীয় স্বার্থই মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তাই শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারী আমাদের প্রত্যকের নীতি-নৈতিকতার জায়গা মজবুত করতে হবে। কারণ নৈতিক অধঃপতনের কারণেই আমাদের আজকের এই বিপর্যয়। তাছাড়া নীতি-নির্ধারণী জায়গা থেকেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে কিভাবে আসলে এই সমস্যা গুলোর সমধান করা যায়। আমরা শিক্ষকদের মাঝে কোনো ভেদাভেদ চাই না। আমরা চাই এই রংহীন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের যৌথ সহযোগিতায় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আবারো স্বমর্যাদায় অধিষ্ঠিত হয়।

লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

প্যানেল

×