ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৫ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ইসরাইলি নৃশংসতা অব্যাহত

গাজা এখন ক্ষুধার রাজ্য অনাহারে বাড়ছে মৃত্যু

জনকণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০০:১১, ২৫ মে ২০২৫

গাজা এখন ক্ষুধার রাজ্য অনাহারে বাড়ছে মৃত্যু

ইসরাইলি হামলায় আহত শিশুর চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের সামনে এক মায়ের অপেক্ষা

গাজা এখন ক্ষুধার রাজ্যে পরিণত হয়েছে। বর্বর ইসরাইলের টানা অবরোধে ওষুধ, খাদ্য ও সুপেয় পানিশূন্য হয়ে পড়েছে ছোট্ট এই ফিলিস্তিনি ভূখ-। ইসরাইলি নিষ্ঠুরতায় সবচেয়ে কষ্টে রয়েছে উপত্যকার লাখ লাখ শিশু। সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পুষ্টিকর খাবার না পেয়ে গাজার বেশিরভাগ শিশুর পাঁজরের হাড় দেখা যাচ্ছে। অনেকের  দাঁড়ানোর শক্তিও নেই। প্রতি মুহূর্তেই আসছে অনাহারে মৃত্যুর খবর। শনিবার পর্যন্ত অনাহারে মারা গেছে ৩০ ফিলিস্তিনি। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, কয়েক দিনে অন্তত ৩০ জন অনাহার সম্পর্কিত ঘটনায় মারা গেছে। তবে প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি। 
এর মধ্যে সামান্য পরিসরে গাজায় ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দেয় ইসরাইল। দীর্ঘদিন পর ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশের পর পরই তা লুটে নিতে আসছে ক্ষুধার্ত লোকজন। এ সময় তাদের ওপর গুলি চালাচ্ছে ইসরাইলি সৈন্যরা। শনিবার এভাবে কয়েক ট্রাক আটা লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যেই গাজায় হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইল। উপত্যকায় গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি হামলায় শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। খবর আলজাজিরা, আনাদোলু ও বিবিসি অনলাইনের। 
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস বলেছেন, ফিলিস্তিনিরা গাজা যুদ্ধের ‘নিষ্ঠুরতম পর্যায়ে’ রয়েছে। সেখানে দীর্ঘ ইসরাইলি অবরোধ আংশিকভাবে শিথিল করার পর এক ডজনেরও বেশি ত্রাণবাহী ট্রাক লুট করা হয়েছে।
হামাসকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে নতুন করে সম্প্রসারিত আক্রমণ চালানোর সময় ইসরাইল সীমিত পরিমাণে খাদ্য সরবরাহ পুনরায় শুরু করার ঘোষণা দেওয়ার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে ত্রাণ আবারও প্রবেশ শুরু করেছে। 
গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থার কর্মকর্তা মোহাম্মদ আল-মুগাইর বলেন, শুক্রবার ইসরাইলি বিমান হামলায় কমপক্ষে ৭১ জন নিহত হয়েছে, এবং ‘ডজন ডজন আহত হয়েছে এবং ধ্বংসস্তূপের নিচে বিপুল সংখ্যক লোক চাপা পড়ে রয়েছে। অ্যান্তনিও গুতেরেস গাজায় চলমান সমস্যাগুলোর দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে গাজায় প্রবেশের জন্য প্রায় ৪শ’ ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হলেও মাত্র ১১৫টি ট্রাক প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘যাই হোক, এখন পর্যন্ত অনুমোদিত সমস্ত সাহায্য এক চা চামচ সাহায্যের সমান, যখন সাহায্যের বন্যা বয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হয়।
তিনি বলেছেন, ইসরাইলি সামরিক আক্রমণ ভয়াবহ মাত্রায় মৃত্যু ও ধ্বংসের সঙ্গে আরও তীব্রতর হচ্ছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি শনিবার জানায়, ‘বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির ট্রাকগুলো বেকারিতে যাওয়ার পথে ১৫টি ‘ট্রাক লুট করা হয়। জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘ক্ষুধা, হতাশা এবং আরও খাদ্য সহায়তা আসছে কি না তা নিয়ে উদ্বেগ, ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তাহীনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই ইসরাইলি সরকারকে ‘দ্রুত আরও বেশি পরিমাণে খাদ্য সহায়তা গাজায় পৌঁছানোর তাগিদ দেন গুতেরেস। 
উল্লেখ্য, মার্চ মাসের পর গত সোমবার থেকে গাজায় প্রথমবারের মতো ত্রাণ সরবরাহ শুরু হয়। গাজা নগরীর বাসিন্দা সোবি ঘাটাস বলেন, আমি বিবেকবানদের কাছে আমাদের জন্য বিশুদ্ধ পানি ও খাবার পাঠানোর আবেদন করছি।
তিনি বলেন, আমার মেয়ে রুটি চাইছে, আর আমাদের কাছে তাকে দেওয়ার মতো কিছুই নেই। ওদিকে হামাসের হাত থেকে বাঁচতে নিরীহ ফিলিস্তিনিদের বন্দি করে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করার অভিযোগ এসেছে ইসরাইলের বিরুদ্ধে। শনিবার এক মার্কিন গণমাধ্যমের খবরে উঠে এসেছে এমন ভয়াবহ তথ্য। খবরে বলা হয়েছে, ইসরাইলি সেনারা আগে গাজার ঘর-বাড়ি, টানেল ও হাসপাতালে আটক ফিলিস্তিনিদের পাঠিয়ে বিপজ্জনক কিছু আছে কি না তা পর্যবেক্ষণ করে।

এতে স্থানগুলোতে কোনো বিস্ফোরক থাকলেও ফিলিস্তিনিরাই প্রথমে আক্রান্ত হয়। এরপর নিরাপদ হলে সেনারা সেখানে প্রবেশ করে। এই পদ্ধতিতে ফিলিস্তিনিদের ‘মশা’র সঙ্গে তুলনা করে ইসরাইলি সৈন্যরা।  দেশটির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ব্রিগেড কমান্ডার বলেছিল, যাও মশা ধরে আনো। এমনকি প্রশিক্ষণের প্রেজেন্টেশনেও ছিল এমন স্লাইড। 
৩৬ বছর বয়সি আবু হামাদান জানান, গাজা উপত্যকার বাড়িগুলোতে তাকে প্রথমে পাঠানো হতো বোমা বা অস্ত্রধারীদের খোঁজে। আবু হামাদান জানান, তারা আমাকে মারধরও করেছে। এসব না করলে আমাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন বলেছে, মানবঢাল হিসেবে ফিলিস্তিনিদের ব্যবহার এখন সাধারণ নিয়মে পরিণত হয়েছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এটি একটি যুদ্ধাপরাধ। ইসরাইলের সুপ্রিম কোর্ট ২০০৫ সালে এই চর্চা নিষিদ্ধ করে। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরাইলি হামলায় ১৯ মাসে গাজায় ১৭ হাজারের বেশি শিশু নিহত হয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন এক প্রতিবেদনে জানায়, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় ১৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি শিশু নিহত হয়েছে। এর মধ্যে এক বছরের কম বয়সী রয়েছে ৯১৬ জন। এক থেকে পাঁচ বছর বয়সের মধ্যে রয়েছে ৪ হাজার ৩৬৫ জন। ছয় থেকে ১২ বছরের মধ্যে রয়েছে ৬ হাজার ১০১ জন। আর নিহতদের মধ্যে ১৩ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে ৫ হাজার ১২৪ জন।

×