
দৈনিক জনকণ্ঠ
সাল১৯৯১ , ঠাকুরগাঁও জেলার রুহিয়া ইউনিয়নের রামনাথ হাটের উল্টোদিকে, প্রগতি সংঘ ক্লাবের পাশে গড়ে ওঠে একটি স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান "বিদ্যানিধি পাঠাগার"।
১০৬ জন সদস্য এবং প্রায় নয় শতাধিক বই নিয়ে যাত্রা শুরু করে এই পাঠাগার। এর পেছনে মূল উদ্যোক্তা ছিলেন এলাকার গুণী কবি, রাজনীতিবিদ ও সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল হক বোম বোর্ড।
গ্রন্থাগারটি ছিল নিবন্ধিত বেসরকারি পাঠাগার (তালিকাভুক্তি নং টাঁক/০৪/২০১১)। প্রতিষ্ঠার পর পাঠকসংখ্যা ছিল উল্লেখযোগ্য। শিক্ষার্থী, শিক্ষক, বইপ্রেমীসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ এখানে আসতেন পড়তে, জানাতে, শিখতে। এটি ছিল এলাকার সাংস্কৃতিক ও জ্ঞানভিত্তিক চর্চার কেন্দ্র।
কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সেই দৃশ্যপট পাল্টে যেতে থাকে। একপর্যায়ে পাঠাগারটির জায়গায় পশু হাসপাতাল স্থাপিত হলে এটি প্রগতি সংঘ অফিসে স্থানান্তর করা হয়। নতুন স্থানে পর্যাপ্ত জায়গা ও কাঠামোর অভাব, নিয়মিত তদারকির অভাব এবং পৃষ্ঠপোষকতার ঘাটতিতে পাঠাগারটির কার্যক্রম ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে পড়ে।
আজ বিদ্যানিধি পাঠাগার শুধু নামেই বেঁচে আছে। এলাকার তরুণ প্রজন্মের অনেকে জানেন না এমন একটি পাঠাগারের অস্তিত্ব রয়েছে। দীর্ঘদিন কোনো কার্যক্রম না থাকায় এটি কার্যত অপ্রাসঙ্গিক ও অবহেলিত হয়ে পড়েছে।
কমিটির সভাপতি মনোয়ার হোসেন এবং গ্রন্থাগারিক জিল্লুর রহমান বলেন, “যদি প্রতিটি নিবন্ধিত গ্রন্থাগারে এমপিওভুক্ত স্কুলের মতো সরকারি স্কেলে একজন সহকারী গ্রন্থাগারিক কাম ক্যাটালগার নিয়োগ দেওয়া হতো, তাহলে এই পাঠাগারগুলো টিকে যেত। তরুণ সমাজ বইমুখী হতো, মাদকমুক্ত সমাজ গড়া সহজ হতো।”
সমাজসেবক আনসারুল হক বলেন, “একটি সমাজের রূপরেখা বদলে দিতে পারে একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার। আজকের ছাত্ররাই ভবিষ্যতের নেতৃত্ব দেবে। তাদের মানসিক বিকাশের জন্য পাঠাগার অপরিহার্য।”
রুহিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনিরুল হক বাবু বলেন, “এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাড়লেও পাঠাগারের সংখ্যা বাড়েনি। এটি সমাজের জন্য দুঃখজনক। গ্রন্থাগার গড়ে তোলা শুধু দায়িত্ব নয়, প্রয়োজনও বটে।”
গিন্নি দেবী আগরওয়াল মহিলা মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ বদরুল ইসলাম বলেন, “গ্রন্থাগার সবার জন্য উন্মুক্ত—এখানে বয়স, ধর্ম, পেশা কোনো বাধা নয়। তাই একে বলা হয় ‘পিপলস ইউনিভার্সিটি’। কিন্তু বিদ্যানিধি পাঠাগার তার সেই সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারেনি।”
ঠাকুরগাঁও জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারের সহকারী লাইব্রেরিয়ান মাহাবুবা আক্তার মনে করেন, “জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের সরাসরি নজরদারি ও সহায়তা প্রয়োজন। সরকারের নীতিগত সহায়তা ছাড়া এই পাঠাগারগুলোর পুনর্জীবন অসম্ভব।”
বিদ্যানিধি পাঠাগার আজ এক নিঃশব্দ স্মৃতি। অথচ এটি হতে পারত একটি এলাকার শিক্ষার আলোকবর্তিকা। আজ প্রয়োজন সরকারি উদ্যোগ, স্থানীয় নেতৃত্ব ও সচেতন নাগরিকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। পাঠাগার যেন আর শুধু অতীতের গর্ব হয়ে না থাকে, বরং ভবিষ্যতের পথপ্রদর্শক হয়ে উঠে।
হ্যাপী