ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৫ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

রাজউকের গৃহায়ন ব্যবসা বন্ধের দাবি

ড্যাপ সংশোধন করে বাসযোগ্য আবাসন গড়ার তাগিদ

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:০২, ২৫ মে ২০২৫

ড্যাপ সংশোধন করে বাসযোগ্য আবাসন গড়ার তাগিদ

২০২২ এর ড্যাপ আইন অপরিকল্পিত

২০২২ এর ড্যাপ আইন অপরিকল্পিত। রাজউক যে শ্রেণির জন্য ড্যাপ করেছে তা জনস্বার্থে নয়।  বৈষম্যপূর্ণ ড্যাপ বাতিল করে সংশোধনী আনা জরুরি। এ ছাড়া রাজউককে গৃহায়ন ব্যবসা বন্ধের দাবি জানানো হয়। আর এই দাবি না মানলে আরও কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। তবে ইউনূস সরকারকে চাপ না দিয়ে সহযোগিতা করতে হবে। শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাব তফাজ্জল হোসেন হলরুমে ‘আবাসন সেক্টরের সংকট ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গোল টেবিল বৈঠকে বক্তারা এ কথা বলেন। 
ঢাকা সাউথ ডেভেলপারস ফোরামের সভাপতি মো. ফখরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন এফবিসিসিআইএর সাবেক সহ-সভাপতি আবুল কাসেম হায়দার, ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্ট বাংলাদেশ (আইএবি) এর সহ-সভাপতি স্থপতি ড. আবু সৈয়দ মোস্তাক আহমেদ, রিহ্যাব ফাইন্যান্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. আব্দুর রাজ্জাক, ঢাকা সিটি ল্যান্ড অনার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডিসিএলএ) এর প্রধান সমন্বয়ক ড. দেওয়ান এমএ সাজ্জাদ,  উত্তরা ডেভেলপারস ফোরামের সভাপতি মো. ইব্রাহিম সরকার, মিরপুর রিয়েল এস্টেট ফোরামের জেনারের সেক্রেটারি মুহাম্মদ শামীম হাসান।
প্রধান অতিথির বক্তব্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, প্রকৃত পক্ষে ডেভেলপার বিজনেসে যারা নিয়মিত তাদের সংগঠন করা উচিত। রাজনৈতিক দলের কোনো নেতা বা এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত নেই তাদের এখানে প্রয়োজন নেই। আপনাদের কষ্ট ও ব্যথা আপনারা ভালো বুঝবেন।  রাজনৈতিক নেতারা যে কোনো দাবি আদায়ের আন্দোলনে যুক্ত হলেও তারা টাকার কাছে বিক্রি হয়ে যায়। আপনাদের যৌক্তিক আন্দোলনের মাধ্যমে রাজউকের যে নিয়ম বা সিস্টেম আছে তা ভেঙে দিতে হবে। সিস্টেম না ভাঙতে পারলে কোনো লাভ নেই। নিয়মের দোহাই দিয়ে একশ্রেণির ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিয়ে আসছে রাজউক। যা চরম বৈষম্য। আপনারা লড়াই করে যান যতক্ষণ বেঁচে আছি আমি আপনাদের পাশে আছি। 
মানুষ জন্মলগ্ন থেকেই বৈষম্যের শিকার। এই বৈষম্য দূর করার জন্য ড. ইউনূসকে সংস্কারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের অনুরোধ জানান। একশ’ বছরের কুসংস্কার ১০ দিনে করা সম্ভব নয়। সংস্কার শব্দটা খুবই সহজ কিন্তু তা বাস্তবায়ন করা কঠিন। আর মানুষকে যার যার জায়গা থেকে সৎ হওয়ার পরামর্শ দেন। এদিকে ড্যাব সংশোধনী আনার তাগিদ দেন।   
ঢাকা সাউথ ডেভেলপারস ফোরাম (ডিএসএফ) ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার একটি রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ড. হারুনর রশিদ কী-নোট স্পিকার উপস্থাপন করেন। এ সময় তিনি বলেন,  উক্ত সংগঠনের উদ্যোগে আবাসন সেক্টরের সংকটসমূহ উত্তরণের জন্য এই গোল টেবিল বৈঠকে আমরা একত্রিত হয়েছি।
আবাসন ব্যবসার বিভিন্ন সমস্যা/সংকটের কারণে ঢাকার আবাসন শিল্প ও এ খাতের প্রায় ২০০ লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রিগুলোও এখন সর্বসংকটে। জিডিপিতে প্রায় ১৫ শতাংশ অবদান রাখা এসব শিল্প রীতিমতো স্থবির হয়ে গেছে। এর মধ্যে বৈষম্যমূলক ড্যাপ ২০২২-৩৫ এর কারণে ও প্রস্তাবিত ইমরাত নির্মাণ বিধিমালা-২০২৫ এখন পর্যন্ত গেজেট আকারে প্রণীত না হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে আবাসন ব্যবসায়ে সংকট বিদ্যমান রয়েছে। ড্যাপে হ্রাসের কারণে ভবনের উচ্চতা এবং আয়তন একেবারে কমে গেছে। ২৩ আগস্ট ২০২২ সালে ড্যাপের প্রজ্ঞাপন প্রকাশের পর থেকে ভবন নির্মাণ করার জন্য জমির মালিক ও ডেভেলপার কোম্পানির সঙ্গে পূর্বের মতো জমি সাইনিং হচ্ছে না। এ কারণে নতুন আবাসন প্রকল্পের সংখ্যা কমে গেছে। এতে সংযোগ শিল্পগুলোর পণ্যের চাহিদা ব্যাপকভাবে কমে লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রিগুলো হুমকির মুখে।
তিনি বলেন, দিল্লিতে যেখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৩৬২ জন বসবাস করে তার পরও তাদের ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে খরচ বেশি। অথচ ঢাকায় প্রতি বর্গকিলোমিটারে বসবাস করছে ১ হাজার ১১৯ জন। ফলে আমাদের কম জায়গায় বেশি খরচ প্রয়োজন। কিন্তু ড্যাপ ও নির্মাণ বিধিমালায় আমাদের দেশে সেই হিসেবে খরচ কম হওয়ায় ডেভেলপার কোম্পানিগুলো নতুন নতুন প্রজেক্ট নিতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।  ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন ফি আদায়ে সরকারের ধার্যকৃত ফি অনেক বেশি ও বৈষম্যমূলক। পুরানো ও নতুন ফ্ল্যাটের রেজিস্ট্রেশন ফি একই হওয়ায় পুরানো ফ্ল্যাটের মার্কেট তৈরি হয়নি। নির্মাণ সামগ্রীর লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধি হওয়ায় আবাসন সেক্টরের উত্তরণের পথে একটি বড় বাধা সৃষ্টি হয়েছে।

দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীলতার অভাবে অনেক ক্রেতা প্লট/ফ্ল্যাট ক্রয় করতে আস্থাহীনতায় ভুগছে। ফলে আবাসন শিল্পের প্লট/ফ্ল্যাট বিক্রি অনেক হারে কমে গেছে (৫০ শতাংশ কমে গেছে)। যতটুকু বিক্রি হচ্ছে তাও আবার পূর্বের চেয়ে কম দরে। সরকার দীর্ঘদিন ধরে আবাসিক গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দিয়ে এলপিজি কোম্পানিগুলোকে উচ্চ হারে মুনাফা করার সুযোগ করে দিচ্ছে। ফলে ডেভেলপারকে আবাসিক গ্যাস সংযোগ না থাকায় কম মূল্যে ফ্ল্যাট বিক্রি করতে হচ্ছে। এমনকি বিগত সরকারের আমলে আবাসিক ভবনের গ্যাস সংযোগের ডিমান্ড নোটের টাকা জমা নিয়েও দীর্ঘদিন যাবৎ গ্যাস সংযোগ দিচ্ছে না। ঢাকা ওয়াসার পানির সংযোগ ও বিলের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলকভাবে পানির বিলের সমপরিমাণ স্যুয়ারেজ বিল আদায় করছে।

নিয়মিত মাসিক বিল পরিশোধের পরও ভবন হ্যান্ডওভারের সময় আবাসিক সংযোগের ক্ষেত্রে পুনরায় প্রতি বর্গফুট ছাদ মাপে অতিরিক্ত পানির বিল ধার্য ও আদায় করছে। যা এ সেক্টরের সঙ্গে তামাশা ও প্রতারণার শামিল। সরকার নির্মাণাধীন ভবনে বিদ্যুৎ বিল বাণিজ্যিক হারে আদায় করছে, যা যুক্তিযুক্ত নয়। যেহেতু, আবাসন একটি শিল্প সেহেতু নির্মাণাধীন ভবনে বিদ্যুৎ বিল, শিল্প বিল করা উচিত। আবাসিক সংযোগের ক্ষেত্রে সোলার বাধ্যতামূলক করে মূলত সোলার কোম্পানিগুলোকে ব্যবসায়ের সুযোগ করে দিচ্ছে। 
তিনি আরও বলেন, আপনারা নিশ্চয়ই অবগত যে, প্রায় ৪০ লাখ শিক্ষিত ও আধা শিক্ষিত কর্মকর্তা-কর্মচারী উক্ত আবাসন শিল্পের সঙ্গে জড়িত। প্রায় ২০০টি লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রি উক্ত ব্যবসায়ের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। প্রচুর বৈদেশিক রেমিটেন্স আহরণে রিয়েল এস্টেট সেক্টর প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। অর্থনীতিতে গতিশীলতা আনার জন্য অবশ্যই আবাসন শিল্প ও সংযোগ শিল্পের স্থবিরতা হতে দ্রুত উত্তরণ ঘটাতে হবে।
কাঠামোগত পরিকল্পনা প্রণয়ন করে তাঁর ভিত্তিতে ড্যাপ ২০২২-৩৫ সংশোধন ও নির্মাণ বিধিমালা-২০২৫ দ্রুত গেজেট আকারে প্রকাশ করা। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ফ্ল্যাট ও প্লট রেজিস্ট্রেশন ব্যয় উল্লেখযোগ্য হারে কমাতে হবে। ফ্ল্যাটের সেকেন্ডারি মার্কেট তৈরির ক্ষেত্রে নামমাত্র ট্রান্সফার ফি নির্ধারণ করতে হবে। ড্যাপের প্রস্তাবিত রাস্তার আলোকে খরচও ছোট ছোট প্লট একীভূত করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২০ কাঠায় ব্লকভিত্তিক খরচ দিতে হবে।

জনঘনত্ব বিবেচনায় কাঠাভিত্তিক ৩.৫ হারে ফ্ল্যাট নির্মাণের অনুমোদন দেওয়ার ব্যবস্থা করা। বিশেষ প্রকল্পের জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্রের বিধান বাতিলপূর্বক রাজউক অফিসে চালুর মাধ্যমে ভবন নির্মাণের অনুমোদন সহজিকরণ করতে হবে। আবাসিক গ্যাস সংযোগ চালু করা ও পূর্বের জমাকৃত ডিমান্ড নোটের আলোকে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকদের গ্যাস সংযোগের ব্যবস্থা নেওয়া।

×