
ছবি: সংগৃহীত
জোটবদ্ধ হচ্ছে আওয়ামীপন্থী এয়ারলাইন্স টিকিট সিন্ডিকেট চক্র, টার্গেট মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যগামী শ্রমিক
গঠন করছে জিএসএ ফোরাম
অন্তর্বর্তী সরকারের দৃঢ় পদক্ষেপে এয়ারলাইন্স টিকিট সিন্ডিকেট যখন প্রায় বন্ধ হতে চলছে , প্রবাসী শ্রমিকদের মুখে যখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ঠিক তখনই মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে এয়ার টিকেটিং ব্যবসায় গত ১৫ বছরে সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণকারী চক্র। নতুন করে গড়ে তুলছে এয়ারলাইন্স জিএসএ ফোরাম অব বাংলাদেশ নামের নতুন সংগঠন। শুধু তাই নয় এই চক্র বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে কিছু অসাধু ও আওয়ামী দোসর কর্মকর্তাকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ -আটাবে প্রশাসক বসানোর পাঁয়তারা চালাচ্ছে। যার কিছুই অবগত নন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও সচিব। যেহেতু টিকিট সিন্ডিকেট বন্ধে সক্রিয় আটাব বর্তমান কমিটি তাই এই কমিটি থাকলে সিন্ডিকেট চক্র সফল হতে পারছে না। এই চক্র বিভিন্ন দেশি- বিদেশি এয়ারলাইন্সকে বেনামে গ্রুপ টিকিট বিক্রির জন্য হুমকি-ধামকি দিয়ে চলছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই এয়ারলাইন্স টিকিট সিন্ডিকেট চক্রের নেপথ্যে রয়েছে মানিলন্ডারিং এর দায়ে ব্যাংক একাউন্ট ফ্রীজ হাওয়া গ্যালাক্সি ইন্টারন্যাশনালের কর্ণধার আহমেদ ইউসুফ ওয়ালিদ ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বিদেশ যাত্রায় নিষেদ্ধাজ্ঞা প্রাপ্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক পরিচালক মাহবুবুল আনাম।সুযোগসন্ধানী এই দুই ব্যক্তি এখন নিজেদের স্বার্থে জেনারেল সেলস এজেন্টদের নিয়ে এয়ারলাইন্স জিএসএ ফোরাম অব বাংলাদেশ নামে নতুন সংগঠন বানিয়ে নিজেদের অতীত কালিমা থেকে মুক্তির পাঁয়তারা করছে।
সরকারি এক তদন্তে আন্তর্জাতিক ১১টি এয়ারলাইন্স, তাদের জেনারেল সেলস এজেন্ট (জিএসএ) এবং ৩০টি ট্রাভেল এজেন্সির বিরুদ্ধে ব্যাপক হারে টিকিট মূল্যের কারসাজি ও প্রতারণার অভিযোগ উন্মোচিত হয়েছে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বিদেশগামী বাংলাদেশি শ্রমিকরা। এই কেলেঙ্কারির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন গ্যালাক্সি ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ ইউসুফ ওয়ালিদ। তিনি সৌদিয়া, কাতার এয়ারওয়েজ, সালাম এয়ার, জাজিরা এয়ারওয়েজ, ওমান এয়ার এবং থাই এয়ারওয়েজের মতো বড় এয়ারলাইন্সের জিএসএ হিসেবে কাজ করেন। তদন্ত প্রতিবেদনে তাকে টিকিট সরবরাহ ও মূল্যের নিয়ন্ত্রণে অন্যতম মূল ভূমিকা পালনকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কার্যালয়ে পাঠানো প্রতিবেদনে দেখা গেছে, অনেক ক্ষেত্রে যাত্রীর নাম ছাড়াই গ্রুপ বুকিংয়ের মাধ্যমে টিকিট বরাদ্দ করে তা মজুদ রাখা হতো। পরে সেগুলো হোয়াটসঅ্যাপের মতো অনানুষ্ঠানিক মাধ্যমে বিক্রি করা হতো দ্বিগুণ বা তিনগুণ দামে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের নেতৃত্বাধীন সরকারের উচ্চপর্যায়ের কমিটির রিপোর্ট পর্যালোচনায় এমন তথ্য মিলেছে। সেই রিপোর্টের সূত্র ধরে গ্যালাক্সির কর্ণধার প্রেসিডেন্ট ও সিইও আহমেদ ইউসুফ ওয়ালিদ, তার পরিবার এবং তার নেতৃত্বাধীন অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে পৃথক তদন্ত শুরু করেছে দুর্র্নীতি দমন কমিশন দুদক এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট।
গ্যালাক্সি ট্রাভেল ও গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলো বিদেশে মানিলন্ডারিংয়ে জড়িত এবং দুবাই এবং লন্ডনে শতকোটি টাকা মূল্যের ফ্ল্যাট ও অন্যান্য ব্যবসা আছে বলেও রিপোর্ট মিলেছে। তারা অনেক টাকা কর ফাঁকি দিয়েছে বলেও প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা মিলেছে। রিপোর্ট বলছে, এক গ্যালাক্সি প্রায় ৮টি এয়ারলাইন্সের জিএসএ নিতে সক্ষম হয় মূলত শেখ হাসিনা সরকারের আশীর্বাদে। ফ্যাসিস্টের দোসর ওয়ালিদ আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী একাধিক নেতার ছত্রছায়ায় এবং তাদের প্রভাব খাটিয়ে এটা হাসিল করেছেন। এনবিআর সূত্র এটা নিশ্চিত করেছে যে, কর ফাঁকির অভিযোগে আহমেদ ইউসুফ ওয়ালিদ ও তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। শুধু তাই নয় ইউসুফ ওয়ালিদের মালিকানাধীন দা ওয়ে হোটেলে নিয়মিত পার্শ্ববর্তী একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থা মিটিং করে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
গত জানুয়ারিতে অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) সংবাদ সম্মেলনের পরপরই মন্ত্রণালয় ১১ ফেব্রুয়ারি এক প্রজ্ঞাপনে জানায়, যাত্রীর নাম ও পাসপোর্ট অনুলিপি ছাড়া কোনো টিকিট বুক করা যাবে না। এই নির্দেশনার ফলে মজুদকৃত টিকিটগুলো গ্লোবাল ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমে (জিডিএস) ছাড়তে বাধ্য হয় এয়ারলাইন্সগুলো, ফলে দাম কমে আসে ও স্বচ্ছতা ফিরে আসে।
অপরদিকে দেশের এয়ারলাইন্স সিন্ডিকেটের অপর ব্যক্তি মাহবুব আনাম। বিদেশে অর্থ পাচার, অবৈধ জুয়া ও ক্যাসিনো কারবার, ক্ষমতার অপব্যবহার, টেন্ডার ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগে গত বছরের ২৮ নভেম্বর মাহবুব আনাম ও তার পরিবারের সদস্যদের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। তাকে একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় দুর্নীতি দমন কমিশনে।
ওয়ালিদ-মাহবুব গং এবার নেমেছে নতুন মিশনে সরকারকে চাপে রাখতে এভিয়েশন ব্যাবসায়িদের সামনে রেখে গড়ে তোলার চেষ্টা করছে এয়ারলাইন্স জিএসএ ফোরাম অব বাংলাদেশ নামের নতুন সংগঠন। এদিকে মন্ত্রণালয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে আটাবে প্রশাসক নিয়োগের বিষয়টি গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে ।
এসইউ