ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৫ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ডিজিটাল আসক্তি: প্রভাব ও প্রতিকার

প্রকাশিত: ২২:৫১, ২৪ মে ২০২৫

ডিজিটাল আসক্তি: প্রভাব ও প্রতিকার

প্রযুক্তির উৎকর্ষতার এই যুগে স্মার্টফোন, কম্পিউটার, সোশ্যাল মিডিয়া এবং অনলাইন গেমিং আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। তবে, এর অতিরিক্ত ব্যবহার ডিজিটাল আসক্তির মতো মারাত্মক সমস্যা তৈরি করছে, যা মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিচ্ছেন, এই আসক্তি দীর্ঘস্থায়ী হলে তা ব্যক্তিগত, পারিবারিক এবং সামাজিক জীবনে বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি করতে পারে।

ডিজিটাল আসক্তির লক্ষণ

  • দিনের বেশিরভাগ সময় ইন্টারনেট বা ডিজিটাল ডিভাইসে ব্যয় করা।

  • অফলাইন থাকলে বিরক্তি, উদ্বেগ বা অস্বস্তি বোধ করা।

  • কাজ, পড়াশোনা বা সামাজিক সম্পর্কে অবহেলা করা।

  • ঘুমের সময় কমে যাওয়া বা অনিদ্রা দেখা দেওয়া।

  • বারবার ফোন বা নোটিফিকেশন চেক করার প্রবণতা।

ডিজিটাল আসক্তির প্রভাব

শারীরিক স্বাস্থ্যে প্রভাব:

  • চোখের সমস্যা (ড্রাই আই সিনড্রোম, দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া)।

  • ঘাড় ও কাঁধে ব্যথা (Text Neck Syndrome)।

  • স্থূলতা ও শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা।

  • অনিয়মিত ঘুম ও ক্লান্তি।

মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব:

  • উদ্বেগ, হতাশা ও একাকিত্ব বোধ বৃদ্ধি।

  • মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে যাওয়া।

  • সামাজিক দক্ষতা হ্রাস ও বাস্তব জীবনে সম্পর্কে অবনতি।

প্রতিকারের উপায়

১. ডিজিটাল ডিটক্স: প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় ডিজিটাল ডিভাইস থেকে দূরে থাকা।
২. সময় ব্যবস্থাপনা: স্ক্রিন টাইম লিমিট সেট করা বা অ্যাপ ব্যবহার করে ডিজিটাল ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ।
৩. শারীরিক কার্যকলাপ: নিয়মিত ব্যায়াম, হাঁটা বা বাইরের ক্রিয়াকলাপে অংশ নেওয়া।
৪. সামাজিক সংযোগ: বাস্তব জীবনে বন্ধু ও পরিবারের সাথে সময় কাটানো।
৫. পেশাদার সহায়তা: প্রয়োজনে মনোবিদ বা কাউন্সেলরের পরামর্শ নেওয়া।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

মনোবিজ্ঞানী ড. ফারহানা আহমেদ বলেন, "ডিজিটাল আসক্তি ধীরে ধীরে ব্যক্তিকে সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন করে তোলে। এর থেকে মুক্তি পেতে সচেতনতা এবং আত্মনিয়ন্ত্রণ জরুরি।"

শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেনের মতে, "শিশু-কিশোরদের মধ্যে এই আসক্তি বেশি দেখা যাচ্ছে। অভিভাবকদের উচিত সন্তানের ডিজিটাল ব্যবহার পর্যবেক্ষণ করা এবং বিকল্প শখ তৈরি করতে উৎসাহিত করা।"

সরকারি ও সামাজিক উদ্যোগ

বাংলাদেশ সরকার ডিজিটাল আসক্তি রোধে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে স্কুল-কলেজে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন এবং মেন্টাল হেলথ সাপোর্ট সেন্টার স্থাপন। এছাড়াও, সামাজিক সংগঠনগুলো ডিজিটাল ব্যালেন্স নিশ্চিত করতে  আয়োজন করছে।

 

ডিজিটাল প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে সহজ করলেও এর অতিরিক্ত ব্যবহার ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। সচেতনতা ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আমরা ডিজিটাল আসক্তি এড়িয়ে সুস্থ ও সুন্দর জীবনযাপন করতে পারি।

সাব্বির

×