ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৫ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

আজ ভয়াল ২৫ মে

আইলার আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয় খুলনার উপকূলীয় জনপদ

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস

প্রকাশিত: ২২:৫১, ২৪ মে ২০২৫

আইলার আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয় খুলনার উপকূলীয় জনপদ

২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলা

জীবনের সে এক ভয়াবহ দিন। দুপুরে বাঁধ ভেঙে জল ঢুকে গেল, চোখের সামনে সব ভেসে গেল। ঘরসহ চলে গেল সব কিছু। গরু ছাগল কোথায় গেল খবর নাই। প্রতিবছরই দুর্যোগে পড়তে হয়। এ ছাড়া আমাদের বাঁচার অবস্থা নাই। প্রলঙ্করকারী ঘূর্ণিঝড় ‘আইলা’র কথা মনে করে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন দাকোপের কামার খোলা এলাকার সুস্মিতা রায়। ওই সময় কামারখোলা ইউনিয়নের ঢাকী নদীর বাঁধের ভাঙনে ছোট জালিয়াখালী গ্রামটি একেবারে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। জমি পরিণত হয় খালে। 
শুধু তিনিই নন, ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ ভুলতে পারেন না। ১৬ বছর আগে ওই ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলায় আঘাত হানে। এতে ল-ভ- হয়ে যায় সুন্দরবন সংলগ্ন খুলনার দাকোপ ও কয়রা এবং সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলা। প্রাণ হারান ১৯৩ জন। দুই লাখ ৪৩ হাজার ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয় এবং ৯৭ হাজার একরের আমন ফসল পুরোপুরি নষ্ট হয়।

প্রাথমিকভাবে আইলার ক্ষয়ক্ষতি খুব কম হলেও দীর্ঘমেয়াদে এর ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়ে। চার উপজেলার ৭১১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত  হয়। ১২টি ইউনিয়নের ২২৫টি গ্রাম পুরোপুরি নোনাপানিতে তলিয়ে যায়। ঘরবাড়ি ও পেশা হারিয়ে উপদ্রুত এলাকা থেকে বাস্তুহারা হয়ে পড়ে দুই লাখ ৯৭ হাজার মানুষ। আজ রবিবার (২৫ মে) আইলার ১৬ বছর। এখনও গা শিউরে ওঠে দিনটির কথা মনে করে।
শক্তির দিক দিয়ে আপেক্ষাকৃত দুর্বল ৪ মাত্রার (১ হচ্ছে সর্বোচ্চ শক্তি) এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বাঁধের ব্যাপক ক্ষতির কারণ হিসেবে বলা হয়, বিভিন্ন স্থানে চিংড়ি ঘের ও হ্যাচারির জন্য অবৈধভাবে বেড়িবাঁধ কেটে, ফুটো করে এবং স্লুইস গেট স্থাপন করে নোনাপানি প্রবেশ করানোর ফলে বেড়িবাঁধগুলো আগে থেকেই দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে গিয়েছিল। যা আইলার প্রভাবে সৃষ্ট সামান্য জলোচ্ছ্বাসের ভেঙে যায়। কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের বাসিন্দা আমিরুল আজাদ বলেন, আইলার কারণে কয়রা উপজেলার ৭ ইউনিয়নের মধ্যে ৬টি নোনা পানিতে তলিয়ে যায়। মোট ৪৯টি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। এরমধ্যে পবনা, পদ্মপুকুর, পাথরখালী, শিকারিবাড়ী ও আংটিহারার ভাঙন আবারও বাঁধতে দুই বছর এবং হারেজ খালীর ভাঙন বাঁধতে তিন বছরেরও বেশি সময় লাগে।

এই সময় গোটা এলাকা নোনা পানিতে তলিয়েছিল। ওই দুর্যোগের পর ১৬ বছরে অনেক কিছুই পাল্টে গেছে। প্রথম কয়েক বছর তো লবণ পানিতে কৃষি, মাছ, ফসল কিছুই হয়নি। এখন অবস্থা কিছুটা পাল্টেছে। তারপরও সব সময় বাঁধ নিয়ে ভয়ে থাকতে হয়। সে কোনো ঝড়ের সিগন্যাল এলে বুকের মধ্যে সেই স্মৃতি ভেসে ওঠে।

×