ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৫ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে যেসব বিষয়ে আলোচনা হলো এনসিপির

প্রকাশিত: ২২:৫২, ২৪ মে ২০২৫

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে যেসব বিষয়ে আলোচনা হলো এনসিপির

ছ‌বি: সংগৃহীত

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আমন্ত্রণে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর একটি প্রতিনিধি দল শনিবার সন্ধ্যায় তাঁর বাসভবন ‘যমুনা’য় বৈঠকে অংশ নেয়। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সংকট ও উত্তরণের পথ খুঁজে বের করার লক্ষ্যেই এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠক শেষে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, ড. ইউনূস বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যে ধারাবাহিক আলোচনায় বসছেন, সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই এনসিপির সঙ্গে এদিন বৈঠক হয়। বৈঠকের শুরুতেই এনসিপি প্রধান উপদেষ্টার প্রতি সমর্থন জানায় এবং তাকে অনুরোধ করে যেন তিনি গণভুত্থানের যে আদর্শ ও প্রতিশ্রুতি নিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন, তা পূরণে কার্যকর উদ্যোগ নেন।

আলোচনায় এনসিপি জানায়, জুলাই ঘোষণাপত্র বাস্তবায়নের যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। সরকার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে ঘোষণাপত্র প্রকাশের আশ্বাস দিলেও নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও তা হয়নি। এনসিপি এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানায়। ড. ইউনূস এ বিষয়ে আশ্বস্ত করে বলেন, জুলাই মাসের মধ্যেই এটি প্রকাশিত হতে পারে।

বৈঠকে এনসিপি আরও জানায়, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া অত্যন্ত ধীরগতিতে চলছে। যে সঞ্চয়পত্র দেওয়ার কথা ছিল তা এখনও সব শহীদ পরিবার পায়নি এবং প্রতিশ্রুত মাসিক ভাতাও এখনও চালু হয়নি। এ অবস্থায় দ্রুত পুনর্বাসন এবং আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করার দাবি জানায় এনসিপি।

এনসিপি মনে করে, শেখ হাসিনার শাসনামলে অনুষ্ঠিত জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনগুলো ছিল জনমতবিরোধী ও অনিয়মপূর্ণ। ভোটাধিকার হরণ, রাতের বেলায় ভোট প্রদানসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে তারা ওই নির্বাচনগুলোকে অবৈধ ঘোষণা করার দাবি জানায়। সেই সময়ের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও এ নির্বাচনগুলো প্রত্যাখ্যান করেছিল বলেও তারা উল্লেখ করে।

বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ওপর এনসিপির আস্থার ঘাটতি রয়েছে বলে তারা জানায়। তাই কমিশন পুনর্গঠন করে দ্রুত স্থানীয় সরকারের নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব দেওয়া হয়, যাতে জনগণ ন্যায্য নাগরিক সেবা পেতে পারে।

আলোচনায় এনসিপি আরও জানায়, বিচার, রাজনৈতিক সংস্কার এবং নির্বাচন—এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে কেন্দ্র করে একটি সমন্বিত রোডম্যাপ ঘোষণা করা প্রয়োজন। তারা বলে, জুলাই গণহত্যার বিচার, সংস্কারের জন্য জুলাই সনদের ঘোষণা এবং গণপরিষদ ও আইনসভা নির্বাচনের একটি নির্দিষ্ট সময়সূচি সরকারকে একত্রে তুলে ধরতে হবে। একটি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে এসব পদক্ষেপ জরুরি।

এনসিপির পক্ষ থেকে স্পষ্ট করা হয় যে, অন্তর্বর্তী সরকারের যেসব উপদেষ্টা রয়েছেন, বিশেষ করে ছাত্র উপদেষ্টারা, তারা কোনও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি নন বরং গণভুত্থানের পক্ষ থেকে সরকারের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। তাই তাদের পদত্যাগ দাবি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মন্তব্য করে এনসিপি। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে কোনও দলকে জড়ানো উচিত নয় বলেও তারা জানান।

নাহিদ ইসলাম জানান, ড. ইউনূস কিছুটা হতাশা প্রকাশ করেছেন কারণ গণভুত্থানের যে স্বপ্ন ও প্রতিশ্রুতি নিয়ে তিনি দায়িত্বে এসেছিলেন, তা বাস্তবায়নে নানা পক্ষ থেকে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে এবং কেউ কেউ সেই অঙ্গীকার থেকে সরে আসছে। এতে সংস্কারের কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং একটি নতুন বাংলাদেশ গঠনের পথ কঠিন হয়ে উঠছে।

বৈঠকে এনসিপি ড. ইউনূসকে আহ্বান জানায়, তিনি যেন রাজনৈতিক চাপ উপেক্ষা করে জনগণ ও গণভুত্থানকারী ছাত্রজনতার প্রতি দায়বদ্ধ থাকেন এবং সেই দায়বদ্ধতা থেকেই তার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তারা মনে করে, সকল রাজনৈতিক দলের চেয়ে বড় হলো জনগণের আকাঙ্ক্ষা, এবং সেই আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটানোই এই সরকারের মূল দায়িত্ব।

ভিডিও দেখুন: https://www.youtube.com/watch?v=dO3T580WJN8

এম.কে.

×