ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৫ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

অতীতের গৌরবময় দিনের স্মৃতিচিহ্ন ভিতরবন্দ জমিদার বাড়ি

মোঃ শাহীন আলম, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম

প্রকাশিত: ০১:৪২, ২৫ মে ২০২৫

অতীতের গৌরবময় দিনের স্মৃতিচিহ্ন ভিতরবন্দ জমিদার বাড়ি

ছবি: জনকণ্ঠ

কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে অনেক ঐতিহাসিক নিদর্শন। তেমনি একটি নিদর্শন হলো কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দ জমিদার বাড়ি।  প্রাচীন এই জমিদার বাড়িটি আজো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে, যেন সময়ের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে।

কবে নাগাদ এবং কার দ্বারা এই জমিদার বংশ বা জমিদার বাড়ি প্রতিষ্ঠিত তার সঠিক তথ্য জানা যায়নি। ব্রিটিশ শাসনামলে এই ভিতরবন্দ পরগণাটির সদর দপ্তর ছিল রাজশাহীতে। পরবর্তীতে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তর মাধ্যমে জমিদারী প্রথা চালু হলে এই ভিতরবন্দ পরগণার সদর দপ্তর রাজশাহী থেকে ভিতরবন্দতে স্থানান্তরিত হয় এবং সেই থেকে এখানে জমিদারীর গোড়াপত্তন ঘটে।

আশ্চার্যের বিষয় হচ্ছে ভারত উপমহাদেশের সকল জমিদার বাড়ি ইট, সুরকি ও রড দিয়ে তৈরি হলেও এই জমিদার বাড়িটি কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। তবে বাড়ির প্রবেশদ্বার ইট ও সুরকি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।

ভিতরবন্দ জমিদার বাড়ির স্থাপত্যশৈলী এবং কাঠামো আজও বিস্মিত করে দর্শনার্থীদের। মূল ভবনটির ছাদে ধাপবিশিষ্ট নকশা, টিনে মোড়া ছাদ, এবং পুরনো দেয়ালের মাঝে এখনো জমিদার আমলের গন্ধ মেলে। বাড়িটির আশপাশে ছড়িয়ে আছে শানবাঁধানো উঠান, প্রাচীন বৃক্ষরাজি এবং কিছু ভগ্নপ্রায় স্থাপনা, যা জমিদারি আমলের গৌরবময় অতীতকে মনে করিয়ে দেয়।

স্থানীয়রা জানান, এই বাড়িটি এক সময় ছিল এলাকার প্রশাসনিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। জমিদারের উদ্যোগে আয়োজন হতো নাটক, সংগীতানুষ্ঠান, এবং বিভিন্ন উৎসবের। এখন যদিও বাড়িটি পরিত্যক্তের কাতারে চলে গেছে, তবুও এটি ইতিহাসপ্রেমী মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু।

দুঃখজনকভাবে, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধীরে ধীরে নষ্ট হচ্ছে এই ঐতিহাসিক নিদর্শন। প্রয়োজন যথাযথ সংরক্ষণ উদ্যোগ ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মও জানতে পারে এই জমিদার বাড়ির ইতিহাস এবং সংস্কৃতির কথা।

ভিতরবন্দ জমিদার বাড়ি শুধু একটি পুরোনো বাড়ি নয়, এটি একটি ইতিহাস, একটি পরিচয়, একটি সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি—যা আমাদের অতীতকে জীবন্ত করে তোলে।

সাব্বির

×