
ছবি: দৈনিক জনকন্ঠ।
দেশের জীববৈচিত্র্যের সমৃদ্ধ ভাণ্ডার চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য সংলগ্ন বন। গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী বাংলাদেশের সর্বাধিক প্রজাতির উদ্ভিদ প্রজাতির আবাসস্থল এই চুনতি বনাঞ্চল। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে অধিক ৬৯১ প্রজাতির উদ্ভিদ প্রজাতি শনাক্ত ও রেকর্ড করা হয়েছে এই বনের প্রকৃতি থেকে। পর্ণমোচী ও চিরহরিৎ মিশ্র প্রকৃতির এই ফরেস্ট বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদের যেমন মূল্যবান আধার ঠিক তেমনই এর বৈশ্বিক ও জলবায়ুগত গুরুত্ব অপরিসীম ও অপরিমেয়।
এ অনন্য সাধারণ বনাঞ্চল দেশের স্থলভাগের বৃহত্তম স্তন্যপায়ী প্রাণী এশিয়ান হাতির আবাসস্থল। দক্ষিণ-পূর্ব উপমহাদেশীয় জীববৈচিত্র্যের আবাসস্থল এ অতি গুরুত্বপূর্ণ বনাঞ্চলটি ক্রান্তীয় মিশ্র-চিরহরিৎ বনভূমি যা হালকা থেকে খাড়া ঢাল বিশিষ্ট পাহাড়ি ভূপ্রকৃতির অনবদ্য নান্দনিকতায় সমৃদ্ধ। প্রায় ৩৭ হাজার একর বনভূমি নিয়ে বিস্তৃত এ বনাঞ্চল চট্টগ্রাম জেলার লোহাগড়া, সাতকানিয়া, বাঁশখালী এবং কক্সবাজার জেলার পেকুয়া ও চকোরিয়া উপজেলায় বিস্তৃত।
দুটি বনবিভাগের অধিক্ষেত্রে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের সাতগড়, বড়হাতিয়া হারবাং ও বরইতলী এবং চট্টগ্রাম বন্যপ্রাণী বিভাগের চুনতি, আজিজনগর, হারবাং, পুঁইছড়ি, নাপোড়া, চাম্বল ও জলদি মোট ৩টি রেঞ্জের ১১টি বিটের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণে বনটি রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। এ বনের প্রায় ২০ হাজার একর বনভূমি নিয়ে ১৯৮৬ সালে চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়েছে।
চুনতি বনটি মূলত ছোটহাতিয়া, সোনাকানিয়া, হারবাং, তেলিয়াকাটা, বরইতলী, বড়হাতিয়া, জঙ্গল বড়হাতিয়া, চাকফিরানী, সাতগড়, চুনতি, জঙ্গল চুনতি, জঙ্গল রশিদের ঘোনা, রশিদের ঘোনা, কুলপাগল, রিজার্ভ হারবাং, জঙ্গল পুঁইছড়ি, নাপোড়া, চাম্বল ও জলদী মোট ২০ টি মৌজার ৩৭১৮২ একর বনভূমি নিয়ে গঠিত। সরকারি সংরক্ষিত এ বনভূমির সীমানা চিহ্নিত হয়নি সুদীর্ঘ দিনেও।
ফলে স্থানীয় জনসাধারণ, কুতুবদিয়া সহ উপকূলীয় বসতিহারা জনগোষ্ঠী এবং বাস্তুচ্যুত মানুষরা সময়ের পরিক্রমায় এ বনের বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে বসতি স্থাপন, কৃষি জমি সম্প্রসারণ, পানের বরজ তৈরি, পাহাড় কর্তন করে রাস্তাঘাট নির্মাণ, বাধ দিয়ে মাছের ঘের নির্মাণ, বালু উত্তোলনের জন্য বালুমহল করা ইত্যাদির মাধ্যমে জবরদখল ও খণ্ডিত করেছে বনের প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণীর আবাসস্থলকে।
সর্বশেষ, বিগত সরকারের সময়ে অপরিকল্পিত ও অদূরদর্শী সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এই বনকে বিখণ্ডিত করে লোহাগড়া-কক্সবাজার রেললাইন স্থাপনের মাধ্যমে অপরিমেয় ক্ষতি সাধন করা হয়েছে এই বনের। সেই সঙ্গে বন বিভাগের অবৈজ্ঞানিক আকাশমনি বনায়ন, ক্ষমতাবান রাজনৈতিক নেতাদের বনভূমি দখল করে ফলের বাগান ও বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণের মাধ্যমে বারবার দখলে নিয়েছে।
মিরাজ খান