ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

নাম উঠল মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টারে

বেগম রোকেয়ার সুলতানা’স ড্রিম পেল ইউনেস্কোর স্বীকৃতি

মোরসালিন মিজান 

প্রকাশিত: ২৩:০৪, ৮ মে ২০২৪; আপডেট: ০১:৫৬, ৯ মে ২০২৪

বেগম রোকেয়ার সুলতানা’স ড্রিম পেল ইউনেস্কোর স্বীকৃতি

নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার লেখা কল্পকাহিনী ‘সুলতানা’স ড্রিম’ ইউনেস্কোর মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টারে স্থান পেয়েছে।

নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার নাম চিরকাল গভীর শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসার সঙ্গেই উচ্চারণ করে আসছে বাঙালি। তবে এবার আরও বড় পরিসরে উচ্চারিত হলো এই মহীয়সীর নাম। ইউনেস্কো তাঁর সাহিত্যকৃতীর বিশেষ স্বীকৃতি দিল। খ্যাতিমান লেখিকার কল্পকাহিনী ‘সুলতানা’স ড্রিম’কে ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘের বিশেষ সংস্থা।

বহুবিধ বিচার বিশ্লেষণ ও ভোটাভুটি শেষে এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে প্রায় ১১৯ বছর আগের রচনাকে। গত ৬ মে থেকে মঙ্গোলিয়ায় শুরু হওয়া ইউনেস্কো মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় কমিটির দশম সাধারণ সভা থেকে এই স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। দশ দিনব্যাপী সভার অষ্টম দিনে বুধবার প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে ‘সুলতানা’স ড্রিম’র নাম উল্লেখ করা হয়।
আবেদনসহ সভায় যোগ দিয়েছেন ইউনেস্কোতে বাংলাদেশ জাতীয় কমিশনের উপ-মহাসচিব জুবাইদা মান্নান এবং স্বীকৃতি চেয়ে আবেদন করা প্রতিষ্ঠান মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। জনকণ্ঠ থেকে হোয়াটসঅ্যাপে মফিদুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে খবরটি নিশ্চিত করেন তিনি। জানান, বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যায় ভোটাভুটির মাধ্যমে বেগম রোকেয়ার ‘সুলতানা’স ড্রিমকে’ নির্বাচিত করা হয়। এ সংক্রান্ত সনদও তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে জানান বিশিষ্ট এই লেখক-গবেষক। 
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তিনি বলেন, বেগম রোকেয়া এখনো কত প্রাসঙ্গিক, কত অনুপ্রেরণার তা এই স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে বোঝা যায়। ইউনেস্কো নারী জাগরণে তাঁর অবদানকে মূল্যায়ন করেছে। ‘সুলতানা’স ড্রিমে’ যে স্বপ্নের কথা লেখিকা তুলে ধরেছেন সেই স্বপ্ন এই স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে আবারও সামনে এলো বলে মন্তব্য করেন তিনি।  ইউনেস্কোর ওয়েবসাইটেও রোকেয়া এস. হোসেন এবং তাঁর লেখা ‘সুলতানা’স ড্রিম’র কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ ছাড়াও ১৩ দেশের মোট ২০টি উপাদান বিবেচনায় নিয়েছে আঞ্চলিক কমিটি।   
মফিদুল হক জানান, এই স্বীকৃতির জন্য আগে আবেদন করতে হয়। তার পরও বাকি থাকে অনেকগুলো ধাপ। ইউনেস্কোর সব শর্ত পূরণ হওয়ার পরই একটি আবেদন তারা বিবেচনায় নেয়। আবেদন করতে হয় কোনো প্রতিষ্ঠানকে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে যেহেতু বেগম রোকেয়ার নানা স্মৃতি নিদর্শন রয়েছে তাই জাদুঘরের পক্ষ থেকে নমিনেশন ফাইল উপস্থাপন করা হয়েছিল। যথাযথভাবে উপস্থাপন, রিভিউ কমিটির পরামর্শ, সংশোধনী, সবশেষে ভোটাভুটির মাধ্যমে একটা ভালো ফল এসেছে বলে জানান তিনি।

বলার অপেক্ষা রাখে না, বেগম রোকেয়ার রচনা সংখ্যা অনেক। বেশিরভাগ রচনায় নারী মুক্তির কথা জোর দিয়ে বলেছেন তিনি। নারীর অধিকারের জন্য লড়াই করে যাওয়ার কথা বলেছেন। বলেছেন তাঁর  স্বপ্নের কথা। ‘সুলতানা’স ড্রিম’ তেমনই এক স্বপ্ন। ১৯০৫ সালে মাদ্রাজ থেকে প্রকাশিত দ্য ইন্ডিয়ান লেডিজ ম্যাগাজিনে ‘সুলতানা’স ড্রিম’ প্রথম প্রকাশিত হয়। পরে ১৯০৮ সালে প্রকাশিত হয় বই আকারে। ‘সুলতার স্বপ্ন’ শিরোনামে বাংলায় বইটি প্রকাশিত হয় ১৯২২ সালে।

বিশ্বসাহিত্যের ইতিহাসে ধ্রুপদী নারীবাদী কল্পকাহিনীর আদিতম উদাহরণ হিসেবে দেখা হয় বইটিকে। সমাজ তখন সম্পূর্ণরূপে নারীর প্রতিকূলে। আরেক শেকলের নাম ধর্ম। এই সব বাধার বিপরীতে দাঁড়িয়ে অত্যন্ত  সাহসের সঙ্গে লিখে গেছেন তিনি। আলোচ্য বইটিতে এক নারীবাদী স্বপ্নরাজ্য নারীস্থানের বর্ণনা দিয়েছেন লেখিকা। এতে দেখা যায়, সমাজে নারী ও পুরুষের প্রচলিত ভূমিকা বদলে গেছে। নারীরা সমাজের যাবতীয় অর্থনৈতিক কর্মকা-ের প্রধান চালিকাশক্তি। অন্যদিকে, পুরুষেরা প্রায় গৃহবন্দি। এ সমাজে কোনো অপরাধ নেই।

এখানে প্রচলিত ধর্মটি ‘ভালোবাসা ও সত্যের’ কথা বলে। স্বপ্ন হলেও, তখন থেকে আজ পর্যন্ত ‘সুলতানা’স ড্রিম’ অনন্য এক সাহিত্যকর্ম হিসেবে পাঠকের কাছে সমাদৃত। প্রতিবাদী চেতনা থেকে লেখা ‘সুলতানার স্বপ্ন’ অবলম্বনে স্প্যানিশ নির্মাতা ইসাবেল হারগুয়েরা একটি অ্যানিমেশন চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। এটিও বেশ বিখ্যাত হয়েছে। তবে অনেক দিন খোঁজাখুঁজি করেও বাংলাদেশে ‘সুলতানা’স ড্রিম’ বইটি পাওয়া যায়নি।

×