ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২

আফগান তথ্য ফাঁস: ঝুঁকিতে ব্রিটিশ গোয়েন্দা ও আফগান সহায়তাকারীরা

প্রকাশিত: ০৭:৪৯, ১৮ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ০৭:৫০, ১৮ জুলাই ২০২৫

আফগান তথ্য ফাঁস: ঝুঁকিতে ব্রিটিশ গোয়েন্দা ও আফগান সহায়তাকারীরা

ছবিঃ সংগৃহীত

ব্রিটিশ বিশেষ বাহিনী (এসএএস) ও গোয়েন্দা সংস্থা এমআই৬-এর সদস্যসহ ১০০-এর বেশি ব্রিটিশ কর্মকর্তার পরিচয় ফাঁস হয়েছে আফগান পুনর্বাসন স্কিম সম্পর্কিত এক গুরুতর তথ্য ফাঁসের ঘটনায়। এতে হাজার হাজার আফগান নাগরিকের জীবনও ঝুঁকিতে পড়েছে।

এই তথ্য ফাঁসের বিষয়টি এতদিন একটি “সুপার ইনজাংশনের” আওতায় গোপন রাখা হয়েছিল। তবে বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ হাইকোর্টের আদেশে এর কিছু অংশ প্রকাশের অনুমতি দেয়া হয়, যার ফলে গণমাধ্যমে এখন এই ঘটনার বিস্তারিত প্রকাশ করা সম্ভব হয়েছে।

প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ব্রিটেনের সঙ্গে আফগানিস্তানে ২০ বছরের যুদ্ধে কাজ করা ১৯ হাজার আফগান নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্যও এই ফাঁসের শিকার হয়েছে। এই নাগরিকরা যুক্তরাজ্যে পুনর্বাসনের জন্য আবেদন করেছিলেন এবং অনেকেই তালেবানের প্রতিশোধমূলক হামলার ঝুঁকিতে ছিলেন।

এই তথ্য ফাঁসের ঘটনা ঘটে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে, কিন্তু ব্রিটিশ সরকার তা জানতে পারে ২০২৩ সালের আগস্টে, যখন এক ব্যক্তি আফগানিস্তান থেকে ফেসবুকে ওই ডেটার অংশ প্রকাশ করে বাকি অংশও ফাঁস করার হুমকি দেন।

বিবিসি জানিয়েছে, ওই ব্যক্তি যখন তথ্য ফাঁস করেন, তখন ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তার আবেদন দ্রুততার সঙ্গে প্রক্রিয়াজাত করে এবং তাকে যুক্তরাজ্যে নিয়ে আসে। সরকারের একাধিক সূত্র এই ঘটনাকে “মূলত ব্ল্যাকমেইল” হিসেবে অভিহিত করেছে।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানালেও বলেছে, “যে কেউ আফগান পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় যুক্তরাজ্যে আসেন, তাকে কঠোর নিরাপত্তা যাচাইয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়।”

তথ্য ফাঁসের বিষয়টি জানার পর সরকার গোপনে চালু করে “আফগানিস্তান রেসপন্স রুট (ARR)” নামে একটি পুনর্বাসন স্কিম। ক্ষতিগ্রস্তদের অনেককেই এই তথ্য ফাঁসের বিষয়ে জানানোও হয়নি। ইতোমধ্যে এই স্কিমের মাধ্যমে প্রায় ৪,৫০০ আফগান ও তাদের পরিবারকে যুক্তরাজ্যে আনা হয়েছে এবং আরও ২,৪০০ জনকে আনার পরিকল্পনা রয়েছে, যার সম্ভাব্য খরচ ধরা হয়েছে ৮৫০ মিলিয়ন পাউন্ড।

তথ্য ফাঁসের মূল কারণ ছিল লন্ডনে ব্রিটিশ স্পেশাল ফোর্সেস সদর দপ্তরের এক কর্মীর ভুল। তিনি মাত্র ১৫০ জনের ডেটা পাঠানোর কথা ভেবে এক সরকারি-বহির্ভূত ব্যক্তিকে ইমেইল করে বসেন ৩০,০০০-এর বেশি আবেদনকারীর তথ্য।

প্রতিরক্ষা সচিব জন হিলি সংসদে বলেন, “এটি প্রতিরক্ষা বিভাগের একটি গুরুতর ভুল” এবং তিনি স্বীকার করেন যে, এটি আফগান পুনর্বাসন প্রকল্পসংক্রান্ত একাধিক তথ্য ফাঁসের মধ্যে একটি মাত্র ঘটনা।

ছায়া প্রতিরক্ষা সচিব জেমস কার্টলিজ এই ফাঁসের জন্য সাবেক কনজারভেটিভ সরকারের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করেছেন, যাদের আমলেই এই ঘটনা সামনে আসে।

তবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এখনো জানায়নি যে, এই ঘটনার ফলে আফগানিস্তানে কতজন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বা জীবন হারিয়েছেন। তালেবান সরকার বলেছে, তারা এই ফাঁসের জেরে কাউকে আটক বা পর্যবেক্ষণে রাখেনি।

কিন্তু ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারের সদস্যরা বিবিসিকে জানিয়েছেন, তথ্য ফাঁসের পর তালেবান তাদের প্রিয়জনদের খোঁজ নেওয়া আরও জোরদার করেছে।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, “বিশেষ বাহিনীর বিষয়ে দীর্ঘদিনের সরকারি নীতিমালার আওতায় আমরা মন্তব্য করি না। তবে স্পর্শকাতর অবস্থানে থাকা আমাদের কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করি।”

সূত্রঃ বিবিসি 

নোভা

×