
ছবি: সংগৃহীত
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না সম্প্রতি এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে গোপালগঞ্জের সমাবেশে হামলার ঘটনায় সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছেন। তিনি এই হামলাকে সরকারের ব্যর্থতা এবং আওয়ামী লীগের পেশিশক্তি প্রদর্শনের নির্লজ্জ উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তার মতে, এই ঘটনা প্রমাণ করে আওয়ামী লীগ এখনো সন্ত্রাসের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি।
সাক্ষাৎকারের শুরুতে মান্না গত জুলাই বিপ্লবের 'বীর শহীদ' আবু সাঈদসহ ৫২' থেকে এ পর্যন্ত দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নিহত সকল শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। এরপর তিনি গোপালগঞ্জের ঘটনা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তার মতে, এই হামলা গোপন ছিল না; বরং শেখ হাসিনার নির্দেশের কথা আগের দিন থেকেই ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছিল। এ ধরনের খবর জানার পরও সরকার কেন হামলা ঠেকাতে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি, তা নিয়ে তিনি প্রশ্ন তোলেন। মিটফোর্ডে ঘটে যাওয়া অমানবিক ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, "পুলিশ কি করলো? বুধবার রাত গেল, বৃহস্পতিবার সারাদিন গেল, রাত গেল, পরদিন জুম্মা পর্যন্ত পুলিশ নো অ্যাকশন, গভমেন্টের কোনো অ্যাকশন নেই। তার মানে সামগ্রিক ব্যাপারটাতে একদম প্রধানত প্রধানত দায়ী করছি সরকারকে।"
মান্না এনসিপি জোটের নেতাদের ধন্যবাদ জানান, যারা হামলার আশঙ্কা জেনেও সমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি উল্লেখ করেন, রাজনৈতিক দলগুলো প্রায়শই প্রতিপক্ষের বাধা উপেক্ষা করে কর্মসূচি পালন করে, কারণ জনগণের কাছে তাদের মোকাবেলা করার সক্ষমতা প্রমাণ করা জরুরি। কিন্তু এক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। তিনি বলেন, "পুলিশ অসহায়ের মত দাঁড়িয়েছে। তারা কোনো কাজ করছে না। এত বড় অসহায় কোনোদিন পুলিশকে দেখা যায়নি।" তার মতে, শেষ পর্যন্ত সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ করলেও, এটা সরকারের কৃতিত্ব নয়, কারণ সেনাবাহিনী হলো 'লাস্ট রিসোর্ট'। সরকারের উচিত ছিল আগেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা।
মাহমুদুর রহমান মান্নার মতে, এই হামলার মধ্য দিয়ে পরাজিত ও স্বৈরাচারী শক্তি জানান দিয়েছে যে তারা এখনো ঐক্যবদ্ধ এবং লড়াই করার ক্ষমতা রাখে। এই ঘটনা সারাদেশে একটি বার্তা দিয়েছে যে তারা আবার প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং সংগঠিত হচ্ছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, "গভমেন্ট কি করবে এ ব্যাপারে?"। তিনি বলেন, অভ্যুত্থানের পর প্রশাসনের ভেঙে পড়া স্বাভাবিক, কিন্তু জনগণের ক্ষোভের মুখে পুলিশ যেভাবে নিষ্ক্রিয় ছিল, তা সরকারেরই দায়। তিনি আরও বলেন, "ডক্টর ইউনূস দুইবার তাদের সাথে বসলেন। তাদেরকে একবার করে বললেন না, যা হয়েছে। দিস ফার, নো ফারদার। তোমরা যারা যারা এই ধরনের অত্যাচার নির্যাতন করেছ, প্রমাণ আছে তাদের বিচার আমাকে করতে হবে, জনগণের দাবি। কিন্তু বাকি যারা আছো নির্দোষ, তাদের কোনো শাস্তি হবে না। তোমরা সব যাও, তোমাদের ডিউটি করো। তোমাদের সবাইকে আসতে হবে। যারা তারপরও আসবে না, বরখাস্ত করে দিন।"
এই ঘটনার পর মানুষের মনে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন তৈরি হয়েছে আসন্ন নির্বাচন নিয়ে। মান্না আশঙ্কা প্রকাশ করেন, গোপালগঞ্জ বা শরীয়তপুরের মতো জায়গায় কীভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে, যেখানে পরাজিত শক্তি এখনো সহিংসতা চালিয়ে যাচ্ছে। তার মতে, সরকার এই ফ্যাসিবাদী শক্তিকে মোকাবিলা করতে বা আত্মস্থ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
সাব্বির