ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২

হারিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতির অলঙ্কার কদম ফুল

মো: জিয়াউল হক, বাকেরগঞ্জ, বরিশাল

প্রকাশিত: ১৩:৩৫, ১৮ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৩:৩৬, ১৮ জুলাই ২০২৫

হারিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতির অলঙ্কার কদম ফুল

ছবিঃ সংগৃহীত

বর্ষা যেমন প্রকৃতিতে সূচিশুদ্ধতা দিয়ে আসে তেমনি বর্ষার অলংকার হিসেবে কদমফুল তার আপন মহিমায় নিজেকে সৌন্দর্যের সবটুকু দিয়ে মেলে ধরে। ষড়ঋতুর এ দেশে আষাঢ়-শ্রাবণ এই দুই মাস বর্ষা ঋতু। কিন্তু দিন দিন প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে চিরচেনা বর্ষার স্মারক কদম ফুল। বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার গ্রাম কিংবা শহরের এক সময়ে সর্বত্রই বর্ষার আগমনীতে নিজেদের মেলে ধরতো আপন মহিমায় কদম ফুল।

উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়নের সড়কের দুইপাশে গাছের বনে এমন কি বাড়ির আঙিনায় বর্ষা এলেই চোখে পড়তো কদম ফুলের। কিন্তু কদম গাছ এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। কদম ফুল না ফুটলে যেন বৃষ্টি ঝরে না, যে কদমকে নিয়ে এতো কিছু আষাঢ়ের বার্তবাহক সেই প্রিয় ফুলের গাছ হারিয়ে যেতে বসেছে। কদম এখন যেন একটি দুর্লভ ফুলের নাম। কদমের শুভ্ররাগে হৃদয় রাঙিয়ে নেয়ার দিন যেন এখন হারিয়ে গেছে। শুধু শহর নয় গ্রাম থেকেও হারিয়ে যাচ্ছে কদম। কদম ফুলকে বলা হয়ে থাকে বর্ষার বিশ্বস্ত দূত। কাঠফাঁটা রোদের গরমের পর বর্ষা মানেই গুচ্ছ গুচ্ছ কদমফুলের উপস্থিতি। বর্ষা মানে কদমফুলের মতই তুলতুলে নরম বৃষ্টির রিনিঝিনি শব্দের ধ্বনি।
প্রাচীন সাহিত্যের একটি বিশাল অংশজুড়ে রয়েছে কদম ফুলের আধিপত্য। 

বর্ষার আগমনের বার্তা নিয়ে হাজির হওয়া কদম ফুল বর্তমানে যেন হারিয়ে যাচ্ছে কালের গর্ভে। বর্ষায় সবার আগে যে ফুলের নামটি উঠে আসে তা হলো কদম। বৃষ্টি মিশ্রিত বাতাসে কদম ফুলের ঘ্রাণ যেন ভাসিয়ে নিয়ে যেত স্বপ্নের কোনো রাজ্যে। হলুদ ও সাদার মিশ্রণে কদম ফুলের পাপড়িতে লেগে থাকা বৃষ্টির ফোঁটা যেন হীরের আভা ছড়িয়ে দিত।

তবে প্রকৃতির মাঝ থেকে কদমগাছ হারিয়ে গেলেও বাংলা সাহিত্যের রিমিঝিমি আষাঢ় কদম ফুলকে তার সঙ্গী করে রাখবে চিরতরে।

স্থানীয় আরেফিন ফিরোজ জনকণ্ঠকে জানান, রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের চর বোয়ালিয়া গ্রামে যেতেই সড়কের পাশে পুকুরপাড়ে একটি কদম গাছ কদমফুলের সৌন্দর্য ছড়িয়েছে। স্থানীয় পথচারীরা ফুলের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হচ্ছে। অনেকেই আবার ফুল ছিড়ে নিয়ে যাচ্ছেন ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের আনন্দ দেয়ার জন্য। এখন আর আগের মত অহরহ কদম গাছের দেখা মেলে না। মাঝেমধ্যে গ্রামীণ জনপথে দুই একটা কদম গাছ চোখে পড়ে। কদম গাছের কাঠ তেমন মূল্যবান না হওয়ায় এখন আর কেউ কদম গাছ রোপন করে না। তাই ধীরে ধীরে কদম গাছ গ্রাম থেকেও হারিয়ে যাচ্ছে। 

বাকেরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুনীতি কুমার সাহা  বলেন, মানুষ আধুনিক যুগে প্রাকৃতিক সৌদর্য্যকে ভুলে কৃত্রিম সৌন্দর্য তৈরি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় বাঙালি সংস্কৃতি ভুলতে বসেছে। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় গাছগাছালি ও ফল-ফুল। লাভের অংকের হিসেব মেলানোর জন্য মানুষ আর তার বাড়ির আঙিনায় কদম ফুলের গাছ লাগাতে চাইছে না। কদম গাছের জায়গায় এখন তারা মেহোগনি, রেইন্ট্রিসহ নানান দামি দামি কাঠের গাছ রোপণে করছেন। এ অবস্থা বিরাজমান থাকলে পরিবেশ বিপর্যয়ের এ অবস্থা থেকে উত্তোরণের জন্য সরকার পাশাপাশি সামাজিকভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।
 

নোভা

×