
ছবি: প্রতীকী
কক্সবাজারে এলজিইডি অফিসে ঠিকাদারদের হয়রানি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এলজিইডির সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলীর ঘুষ বাণিজ্যে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঠিকাদাররা।
ঠিকাদারদের সাথে দুর্ব্যবহার, ঘুষের টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ ও কথামতো টাকা না দিলে গালমন্দ করার অভিযোগ উঠেছে সহকারী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে। এলজিইডি কক্সবাজারস্থ কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমের এসব অনৈতিক কর্মকাকাণ্ডের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছেন জেলার ঠিকাদার এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ।
জানা যায়, কয়েক মাস আগে কক্সবাজারে যোগদান করেন সিনিয়র সহকারী প্রকৌশরী জাহাঙ্গীর আলম। চকরিয়ায় দায়িত্ব পালনকালীন স্থানীয় ঠিকাদার ও এলজিইডির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তুপের মুখে তাকে কক্সবাজারে বদলি করা হয়। কক্সবাজারে যোগদানের পর তার ঘুষ বাণিজ্যের অভ্যাসটা যেন ঠিকই রয়ে গেছে।
সম্প্রতি ঘুষের টাকার জন্য কক্সবাজারের স্থানীয় দুইজন ঠিকাদারের সঙ্গে তুমুল বাক-বিতন্ডা হয়েছে। এ ব্যাপারে ঠিকাদার সমিতির তেৃবৃন্দের কাছে পৃথক পৃথক অভিযোগ দিয়েছেন তারা। ঠিকাদারগণ তার অপসারণ দাবি করেছেন।
উল্লেখ্য, কিছুদিন আগে সহকারী প্রকৌশরী জাহাঙ্গীর আলমকে কক্সবাজার থেকে অন্যত্র বদলি করা হলে জাহাঙ্গীর এলজিইডি চট্টগ্রামের এক কর্মকর্তাকে মোটা অঙ্কের টাকায় ম্যানেজ করে ঠিকই কক্সবাজারে থেকে যান। বদলি ঠেকাতে সক্ষম হওয়ার পর তিনি অরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। তার পছন্দের ঠিকাদারকে ডেকে এনে অফিসিয়াল গোপনীয়তা ফাঁস করে তাকে কাজ পাইয়ে দিতে তৎপর থাকেন তিনি।
কুমিল্লায় দায়িত্ব পালনকালীন অবস্থায় তার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন তার প্রথম স্ত্রী। তার বিরুদ্ধে ঠিকাদারগণ দুনীতি দমন ব্যুরো (দুদক) কার্যালয়েও অভিযোগ দিয়েছেন বলে তথ্য মিলেছে। তবে তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি এবং আপস-মীমাংসা সঠিক নয় দাবি করে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগগুলো সত্য নয়।
অনৈতিক লেনদেন, ঠিকাদারদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার এবং টেন্ডার পেতে তার পছন্দের ঠিকাদারকে গোপনে তথ্য প্রদানসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। কক্সবাজার এলজিইডিতে ২৫-৩০ বছরের বেশি সময় ধরে ঠিকাদারি কাজে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের সঙ্গেও তিনি অনৈতিক লেনদেনের বিষয়ে খারাপ আচরণ করে থাকেন বলে অভিযোগ করেছেন ঠিকারগণ।
সরকার তাকে কক্সবাজারবাসীর সেবার জন্য বদলি করে কক্সবাজারে পাঠালেও তিনি তা উপেক্ষা করে চলছেন বারবার। অভিযোগ উঠেছে, কুমিল্লায় দায়িত্বে থাকাকালীন তার দুর্ব্যবহার সহ্য করতে না পেরে এক কর্মকর্তার আকস্মিক মৃত্যু হলে কুমিল্লা এলজিইডি অফিসের সমস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তার অপকর্মের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে। পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তাকে চকরিয়াতে বদলি করা হয়।
কয়েক মাস আগে কক্সবাজার এলজিইডি অফিসে এসে ঘুষের লেনদেন এবং বিভিন্ন কাজে ভাগ বসিয়ে টাকার পাহাড় গড়ছেন এই জাহাঙ্গীর। তার ধমকের কাছে অফিসের অনেকে অসহায় অবস্থায় চাকরি করছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। এমনকি তার ঊর্ধ্বতন অফিসার জেলা নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে একাধিকবার ঝগড়া হয়েছে। তাকে তিনি ধমকও দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
দুর্নীতির বিষয়ে প্রতিবাদ করলে ঠিকাদার এসোসিয়েশনের সদস্যদের সঙ্গে তার একাধিকবার ঝগড়া ও অবৈধ লেনদেনের বিষয়ে তর্কাতর্কি হয়েছে বলে জানা গেছে। ঠিকাদারদের কেউ কেউ বলেছেন, তার দুর্নীতির কারণে কক্সবাজার এলজিইডির বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প স্থবির হয়ে পড়েছে। মোটা অঙ্কের ঘুষের টাকা সময়মতো দিতে না পারায় একধিক ঠিকাদার কাজ করতে পারছেন না বলে জানা গেছে।
তার অন্যায় আবদার রক্ষা করতে না পেরে কক্সবাজার ঠিকাদার এসোসিয়েশন অসহায় হয়ে পড়েছে। অতি দ্রুত তাকে অপসারণপূর্বক তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা না নিলে কক্সবাজার ঠিকাদার এসোসিয়েশনের সদস্যরা বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেওয়ার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। তাই তাকে অতি দ্রুত প্রত্যাহার করতে ঠিকাদারগণ এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার কাছে দাবি জানিয়েছেন। কক্সবাজার এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন খান বলেন, ‘আমার অধীনস্থ কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্তক্রমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
রাকিব