ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঘরেই রাজউকের সেবা

প্রকাশিত: ২০:৫০, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১

ঘরেই রাজউকের সেবা

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) বিড়ম্বনার কথা সবার জানা। ভবন নির্মাণে নকশা অনুমোদনসহ ভ‚মি সংক্রান্ত নানা কাজে মানুষকে যেতে হয় রাজউকে। এই প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হননি এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন। এতদিন প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী নক্সা অনুমোদনের জন্য আবেদন করতে হতো। আবেদন সম্বলিত একটি ফাইল কতদিন নাগাদ তৈরি হবে এবং প্রক্রিয়া শুরু হবে, জানত না কেউ। ফাইল তৈরির পর শুরু হতো এক টেবিল থেকে আরেক টেবিলে ঘোরাঘুরি। কখনও কখনও মাঝপথেই গায়েব হয়ে যেত সেই ফাইল। বিশেষ ব্যবস্থায় আবার তা খুঁজে বের করে ছুটতে হতো এর পেছনে। কতদিনে অনুমোদিত নক্সা হাতে পাওয়া যাবে, তা বলা ছিল দুঃসাধ্য। শুধু তাই নয়, অনেক সময় প্রতারণারও শিকার হতেন গ্রাহক। নকল নক্সা নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তেন পরবর্তী সময়। এই দীর্ঘসূত্রতা এবং ভোগান্তির কারণ শুধু লাল ফিতার দৌরাত্ম্য নয়, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মানসিকতাও ছিল জড়িত। গ্রাহকদের এই ভোগান্তি থেকে মুক্তি দেয়ার জন্য বর্তমান সরকার বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। চালু হয়েছে অনলাইন আবেদন এবং অনলাইনে নক্সা অনুমোদন। এই পদ্ধতিকে আরও জনবান্ধব করতে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়েছে ইলেকট্রনিক কনস্ট্রাকশন পারমিটিং সিস্টেম (ইসিপিএস) প্রকল্প। এই পদ্ধতিতে ভবন নির্মাণের প্রক্রিয়ায় আবেদন থেকে শুরু করে নক্সা অনুমোদন এবং সলভেন্সি সার্টিফিকেট পর্যন্ত সব কার্যক্রম সম্পন্ন হবে অনলাইনে। আবেদনকারী ঘরে বসেই এসব সেবা পাবেন। এ বিষয়ে রাজউক, ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্টস বাংলাদেশ (আইএবি) এবং বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জানানো হয়, স্বল্পতম সময়ে সকল নির্মাণ কাজের সুষ্ঠু সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিদেশী সংস্থার পরামর্শে এবং দক্ষ জনবল নিয়ে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে এই সিস্টেমের উন্নয়ন করা হয়েছে। এটি চালু হলে ভবন নির্মাণের প্রক্রিয়ার আবেদন, নির্দিষ্ট সময়ে অনলাইনের মাধ্যমেই ল্যান্ড ক্লিয়ারেন্স, কনস্ট্রাকশন পারমিট, নকশা অনুমোদন, সলভেন্সি সার্টিফিকেটসহ সকল কার্যক্রম অনলাইনে সম্পন্ন হবে। আবেদনকারী সকল সেবা পাবেন ঘরে বসেই। সর্বশেষ অবস্থা জানার জন্য আবেদনকারীকে কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে না। অনলাইনের মাধ্যমেই তিনি সব তথ্য জানতে পারবেন। বিভিন্ন সার্ভিস ফি নিজের সুবিধামতো যে কোন স্থান থেকে জমা দিতে পারবেন। অর্থ পরিশোধের মাধ্যম হিসেবে ব্যাংকিং সিস্টেমসহ মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেমও এখানে সংযুক্ত থাকবে। নক্সা অনুমোদনের ক্ষেত্রে সম্পৃক্ত সব পক্ষ একসঙ্গে, এক প্ল্যাটফর্ম থেকে সেবা দেবেন। ইসিপিএস বর্তমানে পাইলটিং করার লক্ষ্যে রাজউকের জোন-৩, সাবজোন-২ ও জোন-৪ এলাকায় প্রাথমিকভাবে চালু করা হয়েছে। পরবর্তী সময় রাজউকের সব জোন ও সাবজোন এই সিস্টেমের আওতায় আসবে। ঢাকাকে একটি পরিবেশবান্ধব মহানগর হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে রাজউক। সঠিক সময়ে অনলাইনের মাধ্যমেই এখন থেকে গ্রাহকরা এই সেবা পাবেন। তবে দক্ষ জনবলের অভাবে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন যেন থেমে না যায় সেই প্রত্যাশা জনসাধারণের। দীর্ঘদিন পর রাজউকের ভোগান্তি লাঘবে সরকার একটি সময়োপযোগী উদ্যোগ নিয়েছে। কোন কারণে যেন এই সেবা থেকে বঞ্চিত না হয় মানুষ।
×