ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ভয়ঙ্কর কিশোর গ্যাং

প্রকাশিত: ২০:৪১, ১৪ জানুয়ারি ২০২১

ভয়ঙ্কর কিশোর গ্যাং

করোনার মহাদুর্ভোগে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্ব হতবিহ্বল, দিশেহারা। ইউরোপসহ উন্নত বিশ্বে দ্বিতীয় ঢেউ সামলানো ছাড়াও নতুন অন্য সংক্রমণের আভাসে সবাই বিচলিত। তবে নির্দ্বিধায় বলা যায়, বাংলাদেশের অবস্থান খুব বেশি অসহনীয় হয়নি এখনও। আক্রান্তের সংখ্যা ৬ লাখ ছাড়ালেও সুস্থতার দৃশ্য অনেকটাই স্বস্তিদায়ক। থমকে যাওয়া আর্থ-সামাজিক বলয় প্রাসঙ্গিক কার্যক্রমে ইতোমধ্যে সম্পৃক্ত হওয়ার চিত্রে দেশ এখন অনেকটাই শঙ্কামুক্ত। তবে জাতির মেরুদণ্ড শিক্ষা ব্যবস্থাপনার মাঝখানে যে পর্বত প্রমাণ প্রাচীর তৈরি হয়েছে তেমন অবরুদ্ধতার সঙ্কট এখন অবধি কাটানো সম্ভব হয়নি। সেই ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ হওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নতুন বছরেও কবে খুলবে তার কোন নিশানা পাওয়া কঠিন। ফলে বিপাকে পড়েছে অসংখ্য খুদে শিক্ষার্থী এবং উদীয়মান কিশোর-তরুণরা। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম থেকে ক্রমাগত দূরত্বে এই উঠতি বয়সের মূল্যবান সময় কিভাবে কাটছে তাও চিন্তার বিষয়। কারণ ইতোমধ্যে ভয়ঙ্কর কিশোর গ্যাংয়ের মারাত্মক কিছু তথ্য চিত্র সামাজিক যোগাযোগ আর গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিশিষ্টজনেরা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। আর দিশাহারা পিতামাতা ছাড়াও সচেতন অভিভাবকরাও চিন্তিত। নতুন সময়ে সন্তানদের বর্তমান এবং ভবিষ্যত কোন্ দুঃসহ যাত্রাপথে আবর্তিত হবে, সেটাও এক চরম অনিশ্চয়তা। কিশোর অপরাধের দুঃসহ চিত্র শুধু বাংলাদেশেই নয়, গোটা দুনিয়ায়। এই সময়ের প্রজন্ম হরেক রকম সমাজ আর বিধিবহির্ভূত কার্যকলাপে সম্পৃক্তই শুধু নয়, তার চেয়েও বেশি খুন, রাহাজানি এবং ধর্ষণের মতো জঘন্য অপকর্মেরও অংশীদার। স্কুল-কলেজ থেকে আপাতত বিচ্ছিন্ন এসব কিশোর তাদের জীবনের মূল্যবান পর্বকে অতিক্রম করছে এক চরম ক্রান্তিকালের মধ্য দিয়ে। করোনার দুঃসময়কে বাদ দিয়েও বলা যায় বয়সটা অত্যন্ত স্পর্শকাতর এবং দিগি¦দিক জ্ঞানশূন্য। স্নেহ মমতার নিরবচ্ছিন্ন ছায়ায় নিজেদের তৈরি করা এসব অল্প বয়সী ছেলেমেয়ে কোন অমৃতের খোঁজে বিপথে পাড়ি দেয় তাও খতিয়ে দেখার সময় এসেছে। বলা সঙ্গত কিশোর অপরাধ অজানা কিংবা নতুন কোন শব্দ নয়। যুগে যুগে কাল থেকে কালান্তরে বয়ঃসন্ধিক্ষণের এমন অনিশ্চিত পর্বটি বিভিন্ন মোহ আর আবেগ দ্বারা আচ্ছন্ন। ন্যায়-অন্যায় বোধের সীমানা অতিক্রম করে যে ভাবাচ্ছন্ন স্বাপ্নিক জগতের হাতছানি, সেখানে প্রয়োজন মায়া-মমতায় সিক্ত বিশুদ্ধ পারিবারিক আবহ। এক সময় সুগৃহিণী মায়েরাই দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের উপহার দিয়েছেন। স্বল্প শিক্ষিত মমতাময়ী মায়েরা কঠোর নজরদারিতে সন্তানের ভবিষ্যত তৈরিতে এক প্রকার পারদর্শীই ছিলেন বলা চলে। তথ্যপ্রযুক্তির অবারিত বিস্তারের কোন সুযোগ না পেয়েও শুধু লেখাপড়ায় মনোযোগী হওয়া ছাড়াও নিজের জীবনের লক্ষ্য নির্বাচনে আজকের অভিজ্ঞ অভিভাবকরা কখনও ভুল করেননি। তাদেরই কিছু সন্তানের এমনতর অধোগতি কেন, সে উত্তর হয়ত কারই জানা নেই। অতীতে কিশোর গ্যাং বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে তাদের কুকর্মগুলো চালালেও বর্তমানে এর ব্যাপক বিস্তারে এলাকাভিত্তিক গ্যাং সংঘবদ্ধ হওয়ার চিত্রও সবাইকে ভাবিয়ে তুলছে। মাদকাসক্তি ছাড়াও আরও কিছু সামাজিক অপরাধ তাদের বিভ্রান্ত এবং লক্ষ্যভ্রষ্ট করতে নিয়ামকের কাজ করছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং তথ্যপ্রযুক্তির সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অশ্লীল কিছু কুকর্মের ফল হিসেবে কিশোর অপরাধ বেপরোয়া এবং মারাত্মক হয়ে উঠেছে। এমন জঘন্য অপকৌশলকে থামাতে না পারলে অশনি সঙ্কেত পুরো জাতির জন্য। শিক্ষা কার্যক্রমকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে খুলে দেয়াও সময়ের অনিবার্য দাবি। প্রতিদিনের নিয়মে শৃঙ্খলার জীবনের ব্যত্যয় ঘটানো আরও দীর্ঘ করা উচিত হবে না। সঙ্গে সঙ্গে পিতামাতা এবং অভিভাবককে সচেতন দায়বদ্ধতায় সন্তানের উঠতি বয়সের স্পর্শকাতর সময়গুলো আমলে নিয়ে সতর্ক এবং সাবধান হওয়াও অত্যন্ত জরুরী।
×