ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

মতলব উত্তরে তিন হাজার একর কৃষিজমি রক্ষায় এলাকাবাসীর প্রতিবাদ সভা

‘জীবন দেব, তবুও এক ইঞ্চি মাটিও ছাড়বো না’

সুমন আহমেদ, মতলব, চাঁদপুর

প্রকাশিত: ১৯:২৮, ১২ জুলাই ২০২৫

‘জীবন দেব, তবুও এক ইঞ্চি মাটিও ছাড়বো না’

ছবি: সংগৃহীত

চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুর ও এখলাছপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত সাতটি মৌজার প্রায় ৩ হাজার ৩৭ একর কৃষিজমিকে বেআইনিভাবে খাস খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত করে ‘অর্থনৈতিক অঞ্চল-১’ নামে দীর্ঘমেয়াদি লিজ প্রদানের সরকারি উদ্যোগের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

বাহেরচর, চরওয়েবস্টার, নাছিরাকান্দি, দিয়ারা বোরচর, নাপিতমারা, উত্তর বাহেরচর ও দক্ষিণ বোরচর—এই সাতটি মৌজার জমিতে স্থানীয় কৃষকেরা বহু বছর ধরে চাষাবাদ করে আসছেন। বছরে চারবার ফসল উৎপাদনের পাশাপাশি এসব জমিতে রয়েছে মসজিদ-মাদ্রাসা, বিদ্যালয়, বাজার, কবরস্থান এবং হাজার হাজার মানুষের বসতি। প্রায় ২০-২২ হাজার মানুষের জীবন-জীবিকা এই জমির ওপর নির্ভরশীল।

তবে অভিযোগ রয়েছে, এসব জমি নিয়ে উচ্চ আদালতের দেওয়া স্থিতাবস্থা (status quo) আদেশ বলবৎ থাকা সত্ত্বেও জেলা প্রশাসন তা উপেক্ষা করে জমিগুলো খাস খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত করে লিজ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

এই প্রেক্ষাপটে শনিবার (১২ জুলাই) সকাল ১০টায় মতলব উত্তরের বাহেরচর আশ্রয়ন প্রকল্প মাঠে এক প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন মোহনপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মো. সিরাজুল হক। বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সেলিমুস সালাম, আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শরীফ মাহমুদ ফেরদৌস শাহীন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, কৃষক প্রতিনিধি ও অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তি।

বক্তারা অভিযোগ করেন, ২০১৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার প্রত্যক্ষ মদদে ভূয়া জরিপ ও ৯৯৪ নম্বর একটি ত্রুটিপূর্ণ রেজিস্ট্রার্ড দলিলের মাধ্যমে জমিগুলো জোরপূর্বক খাস খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট সেলিমুস সালাম বলেন, "সরকার আদালতের আদেশ অমান্য করে সাধারণ কৃষকের জমি কেড়ে নিতে চায়। এটি শুধু জমি লুট নয়, এটি মানুষের জীবিকা, বসতি ও ইতিহাস ধ্বংসের ষড়যন্ত্র। আমরা রাজপথে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছি এবং প্রয়োজনে চূড়ান্ত আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।"

অ্যাডভোকেট ফেরদৌস শাহীন বলেন, "আদালতের স্থিতাবস্থা আদেশ লঙ্ঘন করে জমি লিজ দেওয়া সংবিধান ও বিচার বিভাগের সরাসরি অবমাননা। আমরা এর বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইনি ও রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ করবো।"

সভায় বক্তারা আরও বলেন, জমিগুলোতে স্থানীয়দের বসবাস, সন্তানদের শিক্ষা, কবরস্থানসহ জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ জড়িয়ে আছে। তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, প্রশাসন যদি একতরফাভাবে লিজ কার্যক্রম চালিয়ে যায়, তাহলে তা আদালত অবমাননার শামিল হবে এবং আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সভা শেষে উপস্থিত জনতা শপথ নেন—“জীবন দেব, তবুও এক ইঞ্চি জমিও ছাড়বো না।” বক্তারা ঘোষণা দেন, প্রয়োজনে ঢাকায় গিয়ে অবস্থান কর্মসূচি, অনশন ও গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

আসিফ

×