ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

রাজধানীর মিরপুরে মূল সড়কগুলো যেন ময়লার ভাগাড়

রাজু আহমেদ, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, ঢাকা

প্রকাশিত: ১৯:২৪, ১২ জুলাই ২০২৫

রাজধানীর মিরপুরে মূল সড়কগুলো যেন ময়লার ভাগাড়

রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ততম এলাকা মিরপুরের একাধিক মূল সড়কজুড়ে সুদীর্ঘ ও উচু স্তুপ আকারে ময়লা-আবর্জনা জমে থাকায় পরিবেশ মারাত্মক ভাবে দূষিত হয়ে জনদূর্ভোগের মাত্রা চরমে পৌঁছেছে।

এতে করে একদিকে স্থানীয় বিশাল জনবহুল এলাকাজুড়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি, বিৎঘুটে দুর্গন্ধ ছড়ানোসহ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে মশা মাছির উপদ্রব। অপরদিকে, মূল সড়কগুলিতে জমে থাকা ময়লা আবর্জনার স্তূপ সৃষ্ট নেতিবাচক ক্ষতিকর পরিবেশ-পরিস্থিতিতে নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত হয়ে ত্যাক্ত বিরক্ত আশপাশের অঞ্চলে বসবাসরত লক্ষাধিক সাধারণ নাগরিকগণ।

১২ জুলাই (শনিবার) দিনব্যাপী সরেজমিনে ঘুরে ডিএনসিসির ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন মিরপুর মাজার শরীফের পেছনে দিয়াবাড়িস্থ বৃহত্তর মিরপুর কাঁচামালের আড়তের পার্শ্ববর্তী ব্যস্ততম মূল সড়কসহ চিড়িয়াখানা সড়কজুড়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। পাশের এসটিএসে ময়লা না ফেলে সড়কেই স্তপ করে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। দোয়ায় পথচারী ও যানবাহন চালকদের চলাচলে চরম বিঘ্ন সৃষ্টি করছে। এ যেন সড়ক নয়; বরং নগরবাসীর ময়লা-আবর্জনা ফেলতে নির্ধারিত কোনো ময়লার ভাগাড়!এ সময় মিরপুরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চিড়িয়াখানা সড়কের ঈদগাঁ মাঠের পাশের মূল সড়ক, বক্সনগর অর্থাৎ বিআইএসএফ এর গেট পেড়িয়েই মূল সড়কে বিপুল পরিমাণ ময়লা আবর্জনা ফেলে রাখার দৃশ্য চোখে পড়লো। সামান্য বৃষ্টিতেই বৃষ্টির পানির সাথে সাথে ময়লা-আবর্জনা গড়িয়ে সড়কজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাওয়ায় সড়কগুলিকে পিচ্ছিল করে মারাত্মকভাবে নেতিবাচক ক্ষতিকর পরিবেশের সৃষ্টি করেছে । পুরো সড়কে চরম বিদঘুটে দুর্গন্ধ ছড়ানোসহ আশপাশের পরিবেশকে মারাত্মকভাবে দূষিত করছে। 
অপরদিকে সড়ক পিচ্ছিল হয়ে যাওয়ায় সড়কগুলি দিয়ে চলাচলকারী শত শত যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী যানবাহনের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত বড় ধরনের সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে প্রাণহানির আশঙ্কাও করছেন এলাকাবাসী ।

অথচ বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা, জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের মত জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোসহ (বোটানিক্যাল গার্ডেন), বিসিআইসি স্কুল এন্ড কলেজ, কমার্স কলেজের মত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে এ অঞ্চলে। বিশেষ করে জাতীয় চিড়িয়াখানা, জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান ও কেন্দ্রীয় মুরগি খামার এই এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় দেশের দূরদূরান্ত থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থী বিনোদনের উদ্দেশ্যে এ অঞ্চলে ভ্রমণ করেন। ফলে এ ধরনের অসংগতিপূর্ণ দৃশ্য তাদের চোখে পড়ায় এবং জনদুর্ভোগ পোহানোর কারণে ঐতিহ্যবাহী এ অঞ্চলের অপরিসীম গুরুত্ব ও তাৎপর্য ভুলুন্ঠিত হচ্ছে। বিভিন্ন স্কুল-কলেজের অসংখ্য শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবগণ নিয়মিত এ পথে চলাফেরা করায় বিষয়টি মারাত্মক অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সৃষ্টি ও শিক্ষার্থীদের জন্য উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সম্প্রতি একটানা মিরপুরে দফায় দফায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করছে ডিএনসিসি। অথচ কোনো নিয়মনীতিরই তোয়াক্কা না করে এলাকার ব্যস্ততম মূল সড়কগুলো জুড়ে বিপুল পরিমান ময়লা আবর্জনা ফেলে পরিবেশকে মারাত্মকভাবে দূষিত করায় চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে নাগরিকসেবা। সৃষ্টি করেছে চরম জনদূর্ভোগের। এগুলো কারো নজরেই আসছেনা?
এ সময় দেখা যায়, বৃহত্তর মিরপুর পাইকারী কাঁচাবাজার আরতের পার্শ্ববর্তী সড়কে অর্থাৎ দিয়াবাড়ি ও কাচাবাজার আরতের মাঝামাঝি এলাকার মূল সড়কে বিপুল পরিমাণ ময়লা আবর্জনা জমিয়ে রাখা হয়েছে। অথচ মাত্র ৫০ গজ দূরেই ময়লা ফলেতে সিটি কর্পোরেশনের একটি বড়সড় এসটিএস রয়েছে।

এলাকাবাসীর আরো অভিযোগ, গোটা মিরপুর,গাবতলীসহ রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা থেকে মাজার রোড হয়ে মিরপুর বেড়ীবাঁধের সড়ক ব্যবহার করে আশুলিয়া, উত্তরা, গাজীপুরে যাতায়াত এই সড়ক। মিরপুর থকে গাবতলির পর্বত হয়ে আমিনবাজার, সাভারসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে যাতায়াতে প্রতিদিন সহস্রাধিক ছোটো-বড় যানবাহন চলাচল করে এই রাস্তায়। তাছাড়া প্রতিদিন রাতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কাঁচামালের আড়তে কাঁচামাল নিয়ে আসে বিপুল সংখ্যক ট্রাক। মিরপুর ও সাভারের দীপ খ্যাত কাউন্দিয়া ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ রাজধানীর সাথে যোগাযোগ রক্ষায় মূল সড়ক হিসেবে ব্যবহার করেন এই রাস্তাটি। প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা পায়ে হেটে রাস্তাটি ব্যবহার করেন বিপুল সংখ্যক গার্মেন্টসকর্মী ও পথচারীরাও। 

স্থানীয় বাসিন্দারা আরো জানান, প্রতিদিন কাঁচামালের আড়তগুলো থেকে বিপুল পরিমান ময়লা আবর্জনা এখানে ফেলা হয়। চরম বিদঘুটে দুর্গন্ধের কারনে এখান দিয়ে নাক আটকে ধরে চলাফেরা করতে হয়। সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের নিয়মিত এই ময়লা পরিস্কার করার কথা থাকলেও অজ্ঞাত কারনে এই ময়লা পরিস্কারে তারা কোনো ভূমিকাই রাখছেনা।  ফলে এখানে ময়লা আবর্জনা রাস্তার অর্ধেকজুড়ে বড়সড় ময়লার স্তূপে পরিনত হওয়ায় প্রতিদিনই ছোট-বড় সড়ক দূর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন কেউ না কেউ। দিনের আলোতে যেমন তেমন, বিশেষ করে রাতে দূরপাল্লার পরিবহনগুলো চলাচলের ক্ষেত্রে প্রতিনিয়তই দূর্ঘটনার কবলে পড়ছে। অথচ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো মাথা ব্যথাই দেখা যাচ্ছে না বিষয়টি নিয়ে। এঅবস্থায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি খুবই জরুরী হয়ে উঠেছে।

এবিষয়ে বৃহত্তর মিরপুর কাঁচাবাজার আড়ৎ মালিক সমিতির একাধিক নেতৃবৃন্দ বলেন, এটা বৃহৎ কাঁচাবাজার। এখানে ময়লা ফেলবেই ব্যবসায়ীরা। কিন্ত সামান্য ১০০ গজ অদূরে এসটিএস থাকলে সেখানে কেন না ফেলে মূল সড়কে ময়লা ফেলা হয়, এমন প্রশ্নে কোনো সদুত্তর দিতে অপারগতা স্বীকার করেন তারা।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএনসিসির অঞ্চল -২ এর এক কর্মকর্তা মিরপুর কাঁচাবাজার আড়ৎ মালিক সমিতির নেতাদেরকে  দোষারোপ করে বলেন, স্থানীয় মিরপুর পাইকারী কাঁচাবাজার আড়ৎ মালিক সমিতির সংশ্লিষ্টরা এবিষয়ে কোনো দায়ভার নিতে না চাইলেই সব ফুড়িয়ে যাবেনা। এদায়ভার অবশ্যই তাদেরকেই নিতে হবে। প্রয়োজনে তিনি সিটি কর্পোরেশনের সহযোগিতা অবশ্যই নিতে পারেন। তবে বিষয়টি তদারকিতে দায়ভার পুরোপুরি এড়িয়ে যেতে পারেন না।

রাজু

×