
ভ্যানগাড়িতে বাঁশের তৈরি খাঁচা ঝুলিয়ে গ্রামে গ্রামে ফেরি করে বিক্রি করেন মহরম আলী (৬০) নামে এক যুবক। এই বাঁশের তৈরি পণ্য বিক্রি করেই অভাবের সংসার চলে মহরম আলীর। জীবিকার প্রয়োজনে তিনি এ পেশায় প্রায় ৪০বছর ধরে কয়েছেন। কুমিল্লা জেলা বরুড়া উপজেলার বিভিন্ন বাজার এবং গ্রামে ফেরি করে বাঁশের তৈরি হাঁস-মুরগির খাঁচা বিক্রি করে আসছেন তিনি।
প্রতিদিন ১ হাজার থেকে ১৫শ টাকার বাঁশের পণ্য বিক্রি হয় তার। খরচ বাদে প্রতিদিন লাভ হয় ৩শ থেকে ৪শ টাকা। যা দিয়ে চলে এই অভাবের সংসার।
মহরম আলীর বাড়ি কুমিল্লা জেলা বরুড়া উপজেলার ভাউকসার ইউনিয়নের মুগগাঁও গ্রামে। স্ত্রী সহ দুই ছেলে ও তিন মেয়ে নিয়ে ৭ জনের সংসার তার। এই ব্যবসা করেই কোনমতে ছেলেমেয়ে বড় করে দিয়েছেন বিয়ে। ছেলেরা এখন রাজমিস্ত্রীর কাছে যুক্ত আছে। ছেলেরা বিবাহ করে করেছেন আলাদা সংসার। মেয়েরা আছেন সুখে-শান্তিতে শশুড়বাড়িতে। উপজেলার ভাউকসার বাজারে বাঁশের পণ্য বিক্রি করার সময় এইসব বিষয়ে কথা বলা হয় তার সঙ্গে।
তিনি জানান, দীর্ঘ দিনের এই পেশা ধরে রাখতে প্রচুর পরিশ্রম করতে হয় এখনো। সপ্তাহে ২/৩ দিন বরুড়ার দক্ষিন অঞ্চল পাঁচপুকুরিয়া থেকে বাঁশের খাঁচা ক্রয় করে নিয়ে আসতে হয়। তারপর বিক্রি করি বাজার গুলাতে। এখন আর আগের মত শরীরে শক্তি পাইনা। আগে বরুড়ার অনেক বাজারে গিয়ে বিক্রি করতাম। একবাড়িয়া, পয়েলগাছা, আড্ডা, মুদাফরগঞ্জ বাজারে যখন আগে এগুলা নিয়ে যাইতাম, নিমিষেই সব বিক্রি হয়ে যেত। এখন এলাকার আশেপাশের বাজার গুলাতে বসে বসে বিক্রি করি। সপ্তাহে দুইদিন ভাউকসার বাজারে বসি এই পন্য গুলা নিয়ে।। কখনো কখনো এলাকায় ঘুরে বিক্রি করি। আগে বাঁশের পন্য অনেক ধরনের আনলেও এখন শুধুমাত্র বাঁশের খাঁচা বিক্রি করি।
প্রতিবারে ৪০ টা করে খাঁচা ক্রয় করে নিয়ে আসি। এগুলা বিক্রি শেষ হলে আবার আনি। প্রতিটা ১০০ টাকা করে ক্রয় করে, বিক্রি করা হয় ১৫০/১৬০ টাকা করে। প্রতিদিন এক থেকে দেড় হাজার টাকার মত বিক্রি করতে পারি। কয়েক বছর আগেও যেখানে প্রতিদিন ৩ হাজার এর উপর বিক্রি করতে পারতাম। কিন্তু এখন প্লাস্টিক পন্যের কারনে আমাদের এই ব্যবসায় কিছুটা ধস পড়ে গেছে।
তিনি আরো জানান, এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে বাঁশ এর খাঁচা কিনে বিক্রি করি। সেই লাভের টাকায় ঋণ শোধ করা, সংসার চালানো সব। তবে এনজিওর ঋণের সুদ বেশি। যদি স্বল্প সুদে সরকারিভাবে ঋণ পাওয়া যেত তাহলে আমার জন্য খুব উপকার হতো।
রাজু