ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তরুণ কথাশিল্পী শামস সাইদ

প্রকাশিত: ১২:৪৮, ২৮ জানুয়ারি ২০২০

তরুণ কথাশিল্পী শামস সাইদ

শৈশবে কখনোই ভাবেননি লেখক হবেন। তবে শৈশব তাকে লেখক হওয়ার জন্য তৈরি করেছে এটা নির্দ্বিধায় বলা যায়। লেখালেখি শুরু করেছিলেন উপন্যাস দিয়ে। শৈশব থেকেই গল্প খুঁজে বেড়াতেন। গল্প শুনতেন। সেসব বুকের ভেতরে বাসা বাঁধার পরই একদিন লিখতে শুরু করলেন সেই গল্প। কয়েকদিন পরে দেখলেন লিখে ফেললেন একটি আস্ত উপন্যাস। এতক্ষণ যার গল্প বলছি তিনি তরুণ কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম একজন কথাশিল্পী শামস সাইদ। মেধা ও অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে জীবন ঘঁষে আগুন জ্বেলে চলেছেন, বাংলা সাহিত্যে রাখতে চান প্রোজ্জ্বল স্বাক্ষর। তার লেখায় এ দেশের মানুষের জীবন ফুটে উঠেছে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে। তার লেখার ভেতরে আছে সমকালীন, রাজনীতি, সমাজ-সংস্কৃতি, ইতিহাস ও সমাজ সংলগ্ন মানুষের অধিকারের কথা। সবই ভিন্নতর বৈশিষ্ট্যে ফুটে উঠছে একেকটি গ্রন্থে। আসন্ন বইমেলায় প্রকাশিত হতে যাচ্ছে- শামস সাইদের উপন্যাস ‘তিন নারী’ ও ‘সেইসব সন্ধ্যা’। কিশোর উপন্যাস: শুভসংঘ, ফজল মাস্টারের স্কুল, দুষ্টু ছেলেদের কবলে ক্ষ্যাপা নিতাই ও বঙ্গবন্ধুর জীবন নিয়ে রচিত কিশোর উপন্যাসের দুই খণ্ড মুজিবের গল্প শোন ১ ও ২। ‘ধানম-ি ৩২ নম্বর ও ধানম-ি ৩২ নম্বর গণঅভ্যুত্থান পর্ব। এছাড়া প্রকাশিত হয়েছে শামস সাইদের উপন্যাস ক্রুশবিদ্ধ কলম ও দুঃখগুলো হাওয়ায় ভাসিয়ে দিও। কিশোর উপন্যাসÑঅরমার গল্প, কানাই দ্যা গ্রেট, পাঁচ পাগলের কা-, ফজল মাস্টারের স্কুল। কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ- রেজা স্যারের চার গোয়েন্দা ও রেজা স্যারের গোয়েন্দা স্কুল। জীবনীগ্রন্থ- বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনা, ছোটদের বঙ্গবন্ধুসহ বেশ কিছু গ্রন্থ রচণা করেছেন তিনি। শামস সাইদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ধানম-ি ৩২ নম্বর এর তৃতীয় খ- ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে উপন্যাস ‘আমি একাত্তর দেখিনি’ লিখছেন এখন। আরো বেশ কিছু কাজের পরিকল্পনা রয়েছে তার। তরুণ এই কথাসাহিত্যিক মনে করেন অভিজ্ঞতা লাভের জন্যই আমাদের পৃথিবীতে পাঠানোই হয়েছে। তাই তিনি কখনই কোন লেখায় নিজেকে লিখেন না এবং লিখতে চান না। তিনি মানুষকে লিখতে চান। মানুষের গল্প লিখতে চান। সাহিত্যে প্রেম নিয়ে শামস সাইদ মনে করেন- প্রেম ও নারী সাহিত্যের বড় কোন অনুষঙ্গ নয়; জীবনের একটা বড় অনুষঙ্গ। প্রেম ও নারী পৃথিবীর কিছু না। স্বর্গ থেকেই প্রেম ও নারী এসেছে পৃথিবীতে। প্রেম ও নারী ছাড়া পৃথিবী অর্থপূর্ণ নয়। পৃথিবীর ফুল নারী। প্রেম হচ্ছে সেই ফুলের ঘ্রাণ। যা মানুষকে মোহগ্রস্ত করে। যে সাহিত্যে প্রেম নাই, নারী নাই; সে সাহিত্য অতটা আকর্ষণ করে না। পাঠককে আটকেও রাখতে পারবে না। তবে এই অনুষঙ্গকে পুঞ্জি করেই সাহিত্য রচনা করা আবার সঠিক মনে করেন না এই তরুণ লেখক। লেখক যখন তার মনের কথা লিখতে পারেন না তখন লেখক স্বাধীনতা হারান। যখন একজন লেখক লিখতে বসেন, তখন তিনি শুধুই লেখক। তিনি পিতা নন। স্বামী নন। সমাজের নন। রাষ্ট্রের নন। ধর্মের নন। এসব ভাবতে গেলে তিনি বাধাগ্রস্ত হবেন। তবে লেখককে অন্য সবার থেকে বেশি সচেতন হতে হয়। আলাদা হতে হয়। লেখক যদি একটা লেখার শুরুতে মনে করেন এই লেখাটা আমার সন্তান পড়বে। সমাজ পড়বে। কি করে এসব লিখব। তখনই লেখক স্বাধীনতা হারালেন বলে মনে করেন এই তরুণ কথাসাহিত্যিক। তিনি জীবন দর্শনকে সমৃদ্ধ করতে উল্টো স্রোতে চলেন। কারণ যে মাঝি জোয়ারের সময় জোয়ার ধরে নৌকা আর ভাটির সময় ভাটিতে সে মাঝি কখনই জীবনকে খুঁজে পায় না; যখন উল্টো স্রোতে ধরে তখনই সে বুঝতে পারে জীবন কী? বই পড়ে কখনই জীবনকে উপলব্ধি করা যায় না। জীবনকে উপলব্ধি করতে হলে জীবনেকে পোড়াতে হয় জীবনের ভেতর বলে মনে করেন সাইদ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর বুলেটবিক্ষত বাসগৃহ বাংলাদেশের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্মারকচিহ্ন। ৬৭৭ নম্বর বাড়িটি নিয়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কবিতা রচিত হলেও এই প্রথম এই তরুণ কথাসাহিত্যিক ‘ধানম-ি ৩২ নম্বর’ শিরোনামে একটি মহাকাব্যিক ব্যাপ্তির উপন্যাস লিখে চলেছেন। যার ১৩০০ পৃষ্ঠায় দুই খ- প্রকাশিত হয়েছে। আরও চার খ- প্রকাশিত হবে। লেখক তুলে ধরেছেন যে, বত্রিশ নম্বরই স্বাধীনতার পবিত্র সনদ আর অঙ্গীকারনামা। কেবল বাড়িটি নয় মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক সাফল্য আর ব্যক্তিগত হৃদয়ের মাহাত্ম্য নিয়ে নিটোল আবেগ আর যুক্তিনির্ভরতার মিশেলে তরতাজা আখ্যান সৃষ্টি করেছেন শামস সাইদ। ‘ধানম-ি ৩২ নম্বর’ উপন্যাসে বাঙালীর গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক অধিকারের কথা বলেছেন। অধিকার সচেতন মানুষের ঘুম ভাঙানি গান শুনিয়েছেন। তরুণ এই কথাসাহিত্যিকের কলম থেকে বেরিয়ে আসবে বাংলা সাহিত্যির অমর কিছু গ্রন্থ। যা হাজার বছর পরেও আমাদের সাহিত্যে উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো অমর হয়ে থাকবে সেই প্রত্যাশা আমাদের।
×