ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জনগণের পুলিশ

প্রকাশিত: ০৯:১২, ৮ জানুয়ারি ২০২০

জনগণের পুলিশ

‘মুজিববর্ষের অঙ্গীকার, পুলিশ হবে জনতার’- সময়োপযোী এই প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে গত রবিবার শুরু হয়েছে পুলিশ সপ্তাহ-২০২০। শুরু হয়েছে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সসহ দেশের সর্বত্র। চলবে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত। দ্বিমতের কোন অবকাশ নেই যে, বর্তমান সরকারের নানা উদ্যোগ ও আন্তরিক প্রচেষ্টায় সাধারণ মানুষের মধ্যে পুলিশের গ্রহণযোগ্যতা এবং ভাবমূর্তি অনেক বেড়েছে। সেই সুদূর ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ আমল অথবা পাকিস্তানের সামরিক জান্তা শাসকের পরিপুষ্ট পুলিশ বাহিনীর মতো বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী আগ্রাসী ও নির্যাতনকারী নয়। কিছু ক্ষেত্রে যে ব্যতিক্রম নেই তা জোর দিয়ে বলা যাবে না। অনেক ক্ষেত্রে অনেক স্থানে কিছু থানা পুলিশের ক্ষেত্রে সময় সময় মানুষকে বিশেষ করে নারী-শিশুকে হয়রানি ও হেনস্তার অভিযোগ ওঠে। তবে সেসব গণমাধ্যমের গোচরীভূত হলে এবং উর্ধতন মহলে অভিযোগ জানালে এখন তার প্রতিকার মেলে। যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থার খবরও আছে। তবে মোটের ওপর বিপুল সংখ্যক জনগণের জানমাল ও জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বর্তমানে পুলিশের ইতিবাচক ভূমিকাই বেশি দৃশ্যমান। এই প্রেক্ষাপটে পুলিশ বাহিনীকে আরও জনবান্ধব, আরও আধুনিক ও গতিশীল হয়ে ওঠার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। রাষ্ট্রপতিও বলেছেন, পুলিশ যেহেতু জনগণের সেহেতু পুলিশকে কাজ করে যেতে হবে জনগণের জন্যই। বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশ শতভাগ না হলেও বহুলাংশেই ডিজিটাল ও আধুনিক হয়ে উঠেছে। দেশের থানাগুলোকে সংযুক্ত করা হয়েছে সর্বাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ও ডেটাবেজের আওতায়। অপরাধ তদন্ত, ময়নাতদন্ত, অপরাধী শনাক্তকরণেও ব্যবহার হচ্ছে ডিএনও বিশ্লেষণসহ আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি। ফলে স্বল্পসময়েই অপরাধীরা ধরাও পড়ছে। তবে জনবল সঙ্কটসহ যানবাহন ও আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের ঘাটতিও রয়েছে। রয়েছে কিছু দাবি-দাওয়া ও প্রণোদনা। সরকারপ্রধান এসব পর্যায়ক্রমে মেটানোর প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। প্রথানমন্ত্রী পুলিশকে একটি পৃথক মেডিক্যাল কোর গঠনেরও পরামর্শ দিয়েছেন। সারা বিশ্বে লন্ডন পুলিশকে ধরা হয় আদর্শস্থানীয় দুষ্টের দমক ও শিষ্টের পালক হিসেবে। বাংলাদেশ পুলিশকেও হয়ে উঠতে হবে অনুরূপ। দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালনের জন্যই পুলিশ বাহিনী। সেই প্রেক্ষাপটে দেশের পুলিশ বাহিনীকে সর্বদাই আইনের রক্ষকের ভূমিকায় জনবান্ধব হিসেবে অবতীর্ণ হতে হবে। জনসাধারণের সমস্যাকে দেখতে হবে আন্তরিক ও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে। পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় পুলিশকে মানুষের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার ও আইনের শাসনকে গুরুত্ব দিতে হবে সর্বাধিক। উল্লেখ্য, জনবান্ধব পুলিশের বিষয়টি আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত। সময় ও যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই বাহিনীর আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ, মাদক নির্মূল ও প্রতিরোধে পুলিশ বাহিনীর সাফল্যও উল্লেখ করার মতো। প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, জঙ্গী দমনে বাংলাদেশ পুলিশ বিশ্বে এখন রোল মডেল। অধুনা এর সঙ্গে নিরাপদ সড়ক ও খাদ্যের জন্য আন্দোলনও যুক্ত হয়েছে। ইদানীং রাজধানী ও অন্যত্র খুন-ধর্ষণ-সড়ক দুর্ঘটনা অনেক বেড়েছে এও সত্য। এসব ক্ষেত্রে পুলিশ বাহিনীকে আরও তৎপর ও নজরদারি বাড়াতে হবে। সারাদেশে নারী ও শিশু নির্যাতন বেড়েছে বহুলাংশে। পুলিশের এক্ষেত্রে সবিশেষ করণীয় রয়েছে। বিগত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুলিশ বাহিনী প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছে। দেশ ও জাতির যে কোন সমস্যা-সঙ্কট উত্তরণে তাদের এই গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা অব্যাহত থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশ সপ্তাহ পালন উপলক্ষে পুলিশের প্রতি এটাই জনপ্রত্যাশা।
×