ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা

প্রকাশিত: ০৯:০৬, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯

প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা

শেষ পর্যন্ত বড় কোন চমক তথা পরিবর্তন ছাড়াই সমাপ্ত হয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২১তম ত্রিবার্ষিক জাতীয় সম্মেলন। দু’দিনব্যাপী অধিবেশনে টানা নবমবারের মতো সভাপতি পদে শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক পদে দ্বিতীয়বারের মতো ওবায়দুল কাদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন সর্বসম্মতিক্রমে। সম্মেলনে সারাদেশ থেকে সাড়ে সাত হাজার কাউন্সিলর এবং ১৫ হাজার ডেলিগেটসহ ৫০ হাজার নেতাকর্মী ও আমন্ত্রিত অতিথির বাইরেও যোগ দেন হাজার হাজার উৎসুক জনতা ও সাধারণ মানুষ। এতে দলটির ভেতরে একেবারে তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায়ে যোগ্য ও দক্ষ নেতা-কর্মী সৃষ্টির অবারিত সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। উল্লেখ্য, দেশে বিরোধী দল হিসেবে চিহ্নিত বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও অন্যান্য দলে এরকম চর্চা নেই বললেই চলে। আওয়ামী লীগ দেশের সর্ববৃহৎ প্রাচীন দল, যার সূত্রপাত হয়েছে উপমহাদেশের প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা ভাসানী সর্বোপরি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে দক্ষ, সুযোগ্য ও গতিশীল নেতৃত্বের মাধ্যমে। দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান আন্দোলনের সঙ্গে প্রথম দিকে বঙ্গবন্ধু সম্পৃক্ত থাকলেও দেশভাগের পর অচিরেই তিনি বুঝতে পারেন যে, এই পাকিস্তান বাঙালী জাতি ও বাংলাদেশের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণ করতে পারবে না। অতঃপর তিনি আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে ধর্মীয় পরিচয়ের বাতাবরণ ব্যতিরেকে গঠন করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। তার চিরকালের লালিত স্বপ্নের বাস্তবায়নে দলটিকে বিশুদ্ধ অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বাঙালী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে গড়ে তোলেন। বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন ও সংগ্রাম এতে যোগ করে বাড়তি মাত্রা। বাংলাদেশ ও বাঙালী জাতির এই আত্মমর্যাদা, স্বাধিকার ও স্বকীয়তা অর্জনের আন্দোলন-সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানী স্বৈরশাসক ও সেনাশাসকদের কম অত্যাচার-নির্যাতন-জেলজুলুম সহ্য করতে হয়নি। ইতিহাসের নিরিখে বলতেই হয় যে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর এই সুমহান আত্মত্যাগ এবং বজ্রকণ্ঠে অমিয় অমোঘ আহ্বানের মধ্য দিয়েই অনিবার্য হয়ে ওঠে বাংলাদেশের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা প্রাপ্তি। এ প্রসঙ্গে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধুর অনলবর্ষী ৭ মার্চের ভাষণ অবশ্যই স্মর্তব্য, যা ইতোমধ্যে ঠাঁই করে নিয়েছে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায়। বঙ্গবন্ধুর আজীবন লালিত স্বপ্ন ছিল সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা। দেশের সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্ট ঘোচানো, সর্বোপরি ক্ষুধা ও দারিদ্র্য থেকে মুক্তি। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে, জাতির পিতা তার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে যেতে পারেননি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যার মধ্য দিয়ে আপাত পরিসমাপ্তি ঘটে বাংলাদেশ ও বাঙালী জাতির স্বপ্নের বাস্তবায়ন। দেশে জেঁকে বসে জিয়া-এরশাদ-খালেদার অপশাসন তথা দুঃশাসন। বঙ্গবন্ধুর মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের পর তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব সাহসী, বলিষ্ঠ ও দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে পারেনি, যা বর্তমান সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের এক অনুষ্ঠানে আক্ষেপ করে উল্লেখ করেছেন। সামরিক স্বৈরশাসন ও অপশাসনে দলের অনেক ক্ষতি হয়েছে, ততোধিক ক্ষতি হয়েছে বাংলাদেশ ও বাঙালী জাতির। বাহাত্তরের গণতান্ত্রিক সংবিধান স্থগিত হয়েছে এবং দেশ পরিচালিত হয়েছে পাকিস্তানী ভাবধারায়। সম্ভাব্য সেই পশ্চাদগামিতা ও অনুন্নয়ন থেকে দেশকে উদ্ধার করে পুনরুজ্জীবিত করা মোটেও সহজসাধ্য ছিল না। সেই অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা। সুযোগ্য ও দক্ষ নেতৃত্বের সমূহ সঙ্কটে আওয়ামী লীগ যখন দিশাহারা ও দিকভ্রান্ত, তখন দেশ ও জনগণের আকাক্সক্ষা ও চাহিদা পূরণে বিদেশে ছিন্নমূলের মতো অভিবাসী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসেন। অত্যন্ত দক্ষ ও যোগ্য কা-ারী হিসেবে শক্ত হাতে হাল ধরেন নৌকার, যা ছিল আওয়ামী লীগের তথা আবহমান গ্রাম বাংলার প্রতীক। একথা দিবালোকের মতো স্পষ্ট যে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই বর্তমানে বাংলাদেশ ও বাঙালী জাতি বিশ্ব দরবারে মথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ব মানবতার জননী শেখ হাসিনা আজ বিশ্বেনেতা, আর বঙ্গবন্ধু বিশ্ববন্ধু। ইতিহাসে এই উদাহরণ বিরল বললেও কম বলা হয়। আর তাই নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, বর্তমান এবং আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে শেখ হাসিনার আদৌ কোন বিকল্প নেই। জাতীয় কাউন্সিলে বক্তব্য রাখতে গিয়ে শেখ হাসিনা দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেছেন, আওয়ামী লীগে থাকতে হলে ভোগের রাজনীতি নয়, ত্যাগের রাজনীতি করতে হবে। আর তা কেবল গরিব-দুঃখী জনগণের সুখ-দুঃখে পাশে থেকে তাদের কল্যাণের নিমিত্ত। দলের ভেতরে ও বাইরে কঠোর হস্তে শুদ্ধি অভিযানের মধ্য দিয়ে তিনি তা শুরু করেছেন এবং অবশ্যই সফল হবেন বলে দেশবাসী বিশ্বাস করে। আওয়ামী লীগের নতুন কমিটির ওপরই বর্তেছে আগামী বছর বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের। আমরা আন্তরিকভাবে আশা করব যে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরেই বাংলাদেশে ঘটবে নতুন সূর্যোদয়, নতুন প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি।
×