ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নেকড়ে ও মন্ত্রী

প্রকাশিত: ১২:৩৭, ৩০ আগস্ট ২০১৯

নেকড়ে ও মন্ত্রী

সার-সংক্ষেপ জীবিকার খোঁজে এশিয়া থেকে সুইডেনে যাওয়া এক হতভাগ্য অভিবাসীর গল্প বলে নাটকটি। অভিবাসন সংক্রান্ত নানা যন্ত্রণা সইতে না পেরে ধীরে ধীরে মানুষ থেকে সে নেকড়েতে পরিণত হয়ে যায়। এ অবস্থার ফলে সুইডেনের প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় বেশ বেকায়দায় পড়ে যায়। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আসে তার সঙ্গে দেখা করতে। নেকড়েতে রূপান্তরিত হয়ে যাওয়া মানুষটি এখন আর কাউকেই পরোয়া করে না। ফলে মন্ত্রীর সঙ্গে কথোপকথনে ফুটে ওঠে তার যন্ত্রণা আর মানুষের প্রতি অপরিসীম ঘৃণার চিত্র। এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে চলে যায় প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী। নাটকটিতে অভিবাসন সমস্যা নিয়ে সুইডেনের পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন বিধিমালার চিত্রও ফুটে ওঠে। টোবিয়াস বিলস্ট্রোম ঃ হ্যালো, মিস্টার! আমার নাম টোবিয়াস বিলস্ট্রোম। আমি সুইডেনের প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী। কেমন আছেন আপনি? সব ভাল? জনাব নেকড়ে ঃ হ্যাঁ, ভাল। কিন্তু আপনি হঠাৎ কী মনে করে? আমার মতো একটা সামান্য নেকড়ের কাছে আপনার মতো মহান মানুষের আগমন! নেকড়ে হবার আগে মানে যে সময়টা মানুষ ছিলাম, তখন আপনাকে দেখার খুব ইচ্ছে ছিল। (দীর্ঘশ্বাস) যাকগে, মন্ত্রী মহোদয়কে স্বাগতম! টোবিয়াস বিলস্ট্রোম ঃ নেকড়ের চেহারায় রূপান্তরিত হলেও আপনার আবেগ-অনুভূতি, বোধবুদ্ধি, কণ্ঠের দৃঢ়তা সবকিছু মানুষের মতোই আছে দেখছি। জনাব নেকড়ে ঃ মাফ করবেন। কথাটা মানুষের বেলায়ও খাটে। টোবিয়াস বিলস্ট্রোম ঃ কিভাবে? জনাব নেকড়ে ঃ বাহ্যিকভাবে আলাদা হলেও আদতে মানুষের বোধবুদ্ধি, অনুভূতি কিংবা গলার আওয়াজ সবই নেকড়ের মতো। টোবিয়াস বিলস্ট্রোম ঃ তাই নাকি? জনাব নেকড়ে ঃ জানেন তো, বন্ধু হিসেবে কুকুরই সবচেয়ে বেশি বিশ্বস্ত। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস ট্রুম্যান একবার বলেছিলেন, ‘যদি ওয়াশিংটনে কোন বন্ধু পেতে চান তাহলে একটি কুকুর কিনে নিন।’ কথাটাকে খানিকটা ঘুরিয়ে এখন আমি বলি, ‘যদি সুইডিশ প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চান তাহলে আপনাকে নেকড়ে হতে হবে।’ টোবিয়াস বিলস্ট্রোম ঃ নেকড়ে হিসেবে আপনার ভালই অহঙ্কার আছে দেখছি। জনাব নেকড়ে ঃ অহঙ্কারের যথেষ্ট কারণও আছে। টোবিয়াস বিলস্ট্রোম ঃ যেমন? জনাব নেকড়ে ঃ যেমন ধরুন, মানুষের কাছ থেকে সবসময় জীবনের হুমকি থাকা সত্ত্বেও জীবনের অনেক দুঃখ-কষ্ট থেকেই আমরা মুক্ত। আমাদের আলাদা করে ‘ধর্ম’ বলে কিছু হয় না। ফলে পৈতা-ধুতি কিংবা হিজাব-চিরুনির মতো আলাদা আলাদা পোশাকও আমাদের নেই। ধর্মান্ধতা নেই। ফলে ধর্মান্ধদের নিয়েও কোন ভয় নেই। টোবিয়াস বিলস্ট্রোম ঃ এটা অবশ্য ভাল বলেছেন। জনাব নেকড়ে ঃ আমাদের নিজেদের মধ্যে কোন ঝামেলাই নেই, অথচ মানবসমাজ থেকে অনবরত নানা রকম ঝামেলা পোহাতে হয়। আমরা কখনই আমাদের কোন নেকড়েকে সমাজচ্যুত করি না। কেবল মানব প্রজাতিটিকেই যত ভয়। কী নির্মম! কি অমানবিক ব্যবহারটাই না ওরা করে আমাদের সঙ্গে। টোবিয়াস বিলস্ট্রোম ঃ হুম! (সম্মতিসূচক ঘাড় নাড়ে) নেকড়ে সাহেব, আপনার এই মানুষ থেকে নেকড়ে হবার ব্যাপারটা আমাকে একটু খুলে বলবেন? পার্লামেন্টে একটা বিবৃতি দিতে হবে। যদিও আপনার সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্যই আমার কাছে আছে, তবুও মনে হলো আপনার সঙ্গে সরাসরি কথা বলাটা জরুরী। জনাব নেকড়ে ঃ মন্ত্রী সাহেব, ঠাট্টা করার একটা সীমা থাকা দরকার। এক সময় আমি মানুষ ছিলাম। আপনার দেশে আমি মানুষ হিসেবেই এসেছিলাম। আশ্রয় প্রার্থনা করেছিলাম। কিন্তু আমার আবেদন সে সময় প্রত্যাখ্যান করা হয়। আমি কাগজপত্রহীন উদ্বাস্তুতে পরিণত হই। শুরু হয় এক গোপন জীবন। সে জীবন শিয়াল-কুকুরের জীবনের চেয়েও খারাপ। টোবিয়াস বিলস্ট্রোম ঃ কিছুক্ষণ আগে কিন্তু শিয়াল-কুকুরের গুণগান করছিলেন! জনাব নেকড়ে ঃ মানে, বন্দী থাকা শিয়াল-কুকুর আরকি! খাবার জায়গা নেই, শোবার জায়গা নেই, থাকার জায়গা নেই, কাজ করার জায়গা নেই। উহ্! কী জঘন্য! আর এখন আপনার মতো মন্ত্রী এসেছেন আমার সঙ্গে দেখা করতে! টোবিয়াস বিলস্ট্রোম ঃ সেটা নিশ্চয়ই কোন অপরাধ নয়? জনাব নেকড়ে ঃ দিনের পর দিন আমি না খেয়ে থেকেছি। মাসের পর মাস, বছরের পর বছর না ঘুমিয়ে কাটিয়েছি। এর নাম মানবাধিকার? কোথায় মানবাধিকার? আপনারা আসলে মুখোশধারী, ভ-। টোবিয়াস বিলস্ট্রোম ঃ আপনি রেগে যাচ্ছেন। জনাব নেকড়ে ঃ ভাবা যায়, আপনার মতো ক্ষমতাধর মন্ত্রী, ক্ষমতাধর মানুষ আজ আমার সামনে এসেছেন! যান, পারলে কাগজপত্রহীন ঐসব হাজার হাজার উদ্ধাস্তুর সঙ্গে দেখা করুন যারা এখন নেকড়েতে পরিণত হয়নি, যারা এখনও মানুষ আছে। পারলে ওদের রক্ষা করুন। টোবিয়াস বিলস্ট্রোম ঃ নেকড়ে সাহেব, স্পষ্ট বুঝতে পারছি আপনি আমার ওপর বেশ বিরক্ত। কিন্তু বিশ্বাস করুন, আমার নিজেরও এসব নিয়ে যথেষ্ট কষ্ট আছে। আমাকে পার্লামেন্টের আইন অনুযায়ী চলতে হয়। এর বাইরে আমার কিইবা করার আছে, বলুন? জনাব নেকড়ে ঃ আছে, মন্ত্রী সাহেব, অবশ্যই আছে। আপনি যা খুশি তাই করতে পারেন। টিভি লাইসেন্সের ফি কিন্তু আপনি দেননি। আপনার বিরুদ্ধে একবার ফৌজদারি মামলাও হয়েছিল। আপনি তাতে ন্যূনতম অস্বস্তিতে পড়েননি। মন্ত্রিসভা থেকে আপনার দু’জন সহকর্মী পদত্যাগ করেছেন, আপনি করেননি। মুখোশ পরে ভালই চালিয়ে যেতে পারেন। টোবিয়াস বিলস্ট্রোম ঃ আপনি সততার বিষয়ে কথা বলছেন। একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক বিষয়। জনাব নেকড়ে ঃ বাহ! দারুণ তো! ভুলেই যাচ্ছেন আপনি একটা নেকড়ের সঙ্গে, সুইডেনের এক বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীর সঙ্গে কথা বলছেন। অথচ সেখানেও প্রাসঙ্গিকতা যাচাই করছেন! কী অদ্ভুত! শুনে মনে হচ্ছে যেন আপনার মন্ত্রণালয়ের কোন সহকর্মীর সঙ্গে কথা বলছেন! টোবিয়াস বিলস্ট্রোম ঃ আপনি কিন্তু বারবার সীমা অতিক্রম করে যাচ্ছেন। জনাব নেকড়ে ঃ বারবর নয়, মন্ত্রী সাহেব, একবারই সীমানা অতিক্রম করেছিলাম- যখন এখানে এসে আশ্রয় প্রার্থনা করেছিলাম। টোবিয়াস বিলস্ট্রোম ঃ দয়া করে কথার মারপ্যাঁচ দেবেন না। জনাব নেকড়ে ঃ আচ্ছা, আপনি সীমানা অতিক্রম করা বলতে ঠিক কী বোঝাচ্ছেন, বলুন তো? আমার সম্পর্কে জানতে চাইছেন, এই তো? বেশ, কিন্তু তার আগে আমি আপনার সম্পর্কে কি জানি সেটা আপনাকে শুনতে হবে। টোবিয়াস বিলস্ট্রোম ঃ মানে? আপনি আমার সম্পর্কে কী জানেন? জনাব নেকড়ে ঃ খুব বেশি কিছু না। টোবিয়াস বিলস্ট্রোম ঃ তাহলে? জনাব নেকড়ে ঃ আচ্ছা, আপনি কি আমাকে মানুষ আর নেকড়ের মূল পার্থক্যটা বলতে পারেন? টোবিয়াস বিলস্ট্রোম ঃ মূল পার্থক্য? আপনিই বলুন। জনাব নেকড়ে ঃ মানুষ সমকামী, নেকড়েরা নয়। টোবিয়াস বিলস্ট্রোম ঃ হা হা হা! ব্যাস, এইটুকু? জনাব নেকড়ে ঃ নেকড়েরা ভেড়ার পালের জন্য কখন বা খানিকটা বিপজ্জনক। কিন্তু মানুষের জন্য কখনই নয়। নেকড়েদের মানুষের মতো আলাদা করে নেকড়েভূমি বলে কিছু নেই। টোবিয়াস বিলস্ট্রোম ঃ আচ্ছা! আর কিছু? জনাব নেকড়ে ঃ নেকড়েদের কোন সংবিধান নেই, আপনাদের আছে। নেকড়েরা মানব সমাজের কোন ক্ষতি করে না কিন্তু আপনারা গোটা নেকড়ে সমাজের জন্য ক্ষতিকর। আমাদের জীবনকে নরকে পরিণত করে, এমনকি আমাদের শিকার করে, হত্যা করে আপনারা আবার মুখে স্বাধীনতার বুলি আওড়ান। টোবিয়াস বিলস্ট্রোম ঃ তাতে সমস্যাটা কোথায়? জনাব নেকড়ে ঃ একটা নেকড়ে শিকার করা আপনাদের জন্য স্বাধীনতা, আমাদের জন্য মৃত্যু। আমাদের কষ্টকে আরও কষ্টকর করাতেই আপনাদের আনন্দ। টোবিয়াস বিলস্ট্রোম ঃ রাজনীতিবিদদের মতো কথা বলছেন। জনাব নেকড়ে ঃ রাজনীতিও মানুষই করে মন্ত্রী সাহেব, নেকড়েরা করে না। টোবিয়াস বিলস্ট্রোম ঃ আমিও তো এতদিন তাই জানতাম। জনাব নেকড়ে ঃ একটা ‘বর্ণবাদী গোষ্ঠী’ আর অবর্ণবাদী গোষ্ঠীর মধ্যে একটা ‘বর্ণবাদী দল’, এ দু’য়ের মধ্যে পার্থক্য কী বলতে পারেন? টোবিয়াস বিলস্ট্রোম ঃ বলুন, শুনি। জনাব নেকড়ে ঃ বর্ণবাদী গোষ্ঠী তার কথায় এবং কাজে স্বচ্ছ, কিন্তু আপনারা অর্থাৎ যারা গায়ে অবর্ণবাদিতার সিল লাগিয়ে গোপনে ঠিকই বর্ণবাদিতা সমর্থন করেন তাদের মধ্যে সামান্যতম স্বচ্ছতাও নেই। আপনারা যা বলেন তা করেন না, আর যা করবেন তা ঘুণাক্ষরেও বলেন না। ৯১ বছরের বৃদ্ধ গানা শিয়োজাকাকে দেশান্তরিত করার কোন অর্থ হয়? টোবিয়াস বিলস্ট্রোম ঃ দেখুন, সংসদে যে আইন তৈরি করা হয় আমাদের সেটাই অনুসরণ করতে হয়। কাকে দেশান্তরিত করা হবে আর কাকে হবে না সে ব্যাপারে আমাদের নিজেদের আইন তৈরি করে নেয়ার কোন সুযোগ নেই। জনাব নেকড়ে ঃ (নিচু স্বরে) কলের পুতুল চালু হলো! টোবিয়াস বিলস্ট্রোম ঃ আগে একটা বিশেষ আইন ছিল যেখানে বলা ছিল, যেসব বৃদ্ধ ব্যক্তির নিজের দেশে কোন আত্মীয়স্বজন নেই তারা সুইডেনে তাদের আপনজনদের সঙ্গে থাকার জন্য সরকারের কাছে আবাসিকতার আবেদন করতে পারবেন। ১৯৯৭ সালে ঐ আইনও পরিবর্তিত হয়। এছাড়া চিকিৎসা সংক্রান্ত কিছু বিষয়ও আছে। এমনকি সেগুলোও গানার জন্য প্রযোজ্য ছিল না। জনাব নেকড়ে ঃ আপনি আসলে ঘুরেফিরে একই কথা বলছেন। ‘আমরা আইন-কানুন মেনে চলি’ আর ‘আমাদের জন্য নির্ধারিত নিয়ম’ এই কথাগুলোই আপনি বারবার বলে চলেছেন। আপনার অফিসের লোকজনও এরকম গৎবাঁধা কতগুলো কথা বলেÑ ‘আমাদের কিছু করার নেই.........’, ‘আমাদের মেনে চলতে হয়.......’, ‘আমরা আপনাদের অবস্থাটা বুঝি......’ ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু ওরা যখন বলে, ‘আমরা আদেশ মেনে চলছি............’ কিংবা ‘সুইডিশ হওয়ায় আমি লজ্জিত’ তখন তার কী অর্থ দাঁড়ায়, বলুন তো? এসবের কোন ব্যাখ্যা আছে আপনার কাছে? যাকগে, নেকড়ে হবার একটা সুবিধাও কিন্তু আছে....... শিকার হবার কিংবা প্রাণ হারাবার ভয় থাকলেও মাইগ্রেশন-ইন্টারভিউয়ের মুখোমুখি হবার ভয় থাকে না। টোবিয়াস বিলস্ট্রোম ঃ আমি শুধু জানতে চেয়েছিলাম আপনার রূপান্তর কিভাবে ঘটলো। আর আপনি বিশেষজ্ঞ মতামত দিতে শুরু করলেন! জনাব নেকড়ে ঃ মন্ত্রী সাহেব, আমার কথা আপনাকে শুনতেই হবে। টোবিয়াস বিলস্ট্রোম ঃ আমি কিন্তু শুনতেই এসেছি। আপনিই বরং নানা অপ্রাসঙ্গিক কথা টেনে সময় নষ্ট করছেন। জনাব নেকড়ে ঃ আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। আমাদের অস্তিত্বের সঙ্কট চলছে। এভাবে চলতে থাকলে একসময় কাগজপত্রহীন হাজার হাজার উদ্বাস্তু আমার মতো ধীরে ধীরে নেকড়েতে রূপান্তরিত হবে। একে হয়তো তখন ‘নেকড়েভূমি’ বলে ডাকা হবে। হয়তো সরকার তখন আপনার দফতরের নাম বদলে ‘নেকড়ে মন্ত্রণালয়’ বানিয়ে দেবে। আপনি হবেন নেকড়েমন্ত্রী টোবিয়াস বিলস্ট্রোম। জানেন? বোঝেন এসব কথা? টোবিয়াস বিলস্ট্রোম ঃ উফ! যথেষ্ট হয়েছে। আপনার বকবকানি শুনতে শুনতে আমি ক্লান্ত, বিরক্ত। জনাব নেকড়ে ঃ আমি কোন সাংবাদিক নই, কোন গোঁড়া মতবাদীও নই। আল-কায়েদার জঙ্গী নই, ওসামা বিন লাদেন নই, এমনকি নরওয়ের এ্যান্ডার্স ব্রোভিকও নই, আমার একমাত্র পরিচয়Ñ আমি এক নেকড়ে, যে কিনা এশিয়া থেকে এখানে মানুষ হিসেবে এসেছিল। তাই বলে আমাকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমি হিংস্র নই, কাউকে কামড়াই না। আমি নিতান্তই এক শান্তিপ্রিয় নেকড়ে। টোবিয়াস বিলস্ট্রোম ঃ দেখুন, মায়ানমার কর্তৃপক্ষ আপনাকে ফেরত চাইছে। মন্ত্রী হিসেবে এ নিয়ে আমি বেশ বিব্রতকর অবস্থায় আছি। এরকম নেকড়ে অবস্থায় তো আর আপনাকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো যায় না। আবার এ দেশে যে রাখতে চাইব সেখানেও হাজার জটিলতা। আসলে কি জানেন, বর্তমান অবস্থায় আপনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য কোন প্রচলিত আইন নেই। এখন আসলে আপনি নিজে কি চাইছেন সেটাই সবচাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। জনাব নেকড়ে ঃ তাই নাকি? সামান্য একটা নেকড়ের চাওয়ার এত গুরুত্ব! তবে শুনুন, আমি শুধু নেকড়ে হিসেবে আমার জীবনের নিরাপত্তা চাই, ব্যাস। আর কিচ্ছু না। যখন মানুষ ছিলাম তখন মানুষের মতো একটা সাধারণ জীবন চেয়েছিলাম, পাইনি। এখন নেকড়ে হিসেবে একটা সাধারণ জীবনের নিশ্চয়তা চাই। সকল নেকড়ের নিরাপত্তা চাই। আমি নেকড়েদের মাঝেই থাকতে চাই। টোবিয়াস বিলস্ট্রোম ঃ ঠিক এই মুহূর্তে আমি এককভাবে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। পার্লামেন্টে এ বিষয়ে আলোচনা হবে। তারপরই জানা যাবে আমি আসলে ঠিক কি করতে পারি আর কি পারি না। জনাব নেকড়ে ঃ আমি জানি আপনি কি পারেন, কি পারেন না। আমি শুধু এই বন্দীত্ব থেকে মুক্তি চাই। টোবিয়াস বিলস্ট্রোম ঃ দুঃখিত, এই মুহূর্তে সেটা কোনভাবেই সম্ভব নয়। জনাব নেকড়ে ঃ আমি জানি, আপনি আমাকে দিয়ে পর্যটক আকর্ষণ করার পরিকল্পনা করছেন। ওটাই আপনার আসল উদ্দেশ্য। কিন্তু শুনে রাখুন, আপনার যদি সত্যিই ওরকম কোন পরিকল্পনা থাকে তাহলে আমিও সাবধান করে দিচ্ছি, আমি কিন্তু অনশন শুরু করে দেব। টোবিয়াস বিলস্ট্রোম ঃ আপনার আর কিছু বলার আছে? জনাব নেকড়ে ঃ হ্যাঁ, একটা ইচ্ছে আছে। টোবিয়াস বিলস্ট্রোম ঃ বলুন। জনাব নেকড়ে ঃ যতদিন এই বন্দীশালায় আছি ততদিন একটা টিয়া পাখি পুষতে চাই। পাখিটা যখনই কোন মানুষকে দেখবে তখনই চিৎকার করে বলবে, ‘তুই হিটলার’। টোবিয়াস বিলস্ট্রোম ঃ অতি উচ্চমানের রসিকতা! জনাব নেকড়ে ঃ রসিকতা নয় মন্ত্রী সাহেব। আমি সত্যি সত্যি বলছি। টোবিয়াস বিলস্ট্রোম ঃ আমরা আপনার আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। পুরো ব্যাপারটা বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন আছে। তবে আশা করছি খুব শীঘ্রই তারা আপনার সঙ্গে দেখা করতে আসবে। জনাব নেকড়ে ঃ থামুন। আপনার বস্তাপচা কথাবার্তা যথেষ্ট শুনেছি, আর শুনতে চাই না। আসলে মানুষমাত্রই ভ-। আপনারা এমনকি একটা নেকড়ের সঙ্গেও তামাশা জুড়ে দিয়েছেন। টোবিয়াস বিলস্ট্রোম ঃ বুঝতে পারছি আপনার খুব কষ্ট হচ্ছে। তাই বলে এটাও ভুলে যাবেন না আপনি কার সঙ্গে কথা বলছেন! জনাব নেকড়ে ঃ যখন মানুষ ছিলাম তখন আমার পরিবার, আমার স্ত্রী-কন্যা, ভাই-বোন, আত্মীয়স্বজনদের দেখতে চেয়েছিলাম। তখন হলো না। ওরা আসতে চেয়েছিল, আপনারা দিলেন না। ওদের সবাই এখন বেঁচেও নেই। এখন আর লাভ কী? টোবিয়াস বিলস্ট্রোম ঃ দেখুন, যা হবার হয়েছে। আপনি চাইলে এখন আপনার জীবিত আত্মীয়দের দেখা পেতে পারেন। জনাব নেকড়ে ঃ নেকড়ের আবার চাওয়া! আপনারা যা চান তাই হয়। আপনারা চাইলে রোগীকে হাসপাতালছাড়া করতে পারেন, স্কুলের বাচ্চাকে স্কুলছাড়া করতে পারেন। এসব করার সময় আপনারা ন্যূনতম খারাপ বোধ করেন নাÑ নিজেদের জীবনের সবকিছু স্বাভাবিকভাবে চললেই হলো। আপনারা পার্টিতে যান, নাচ-গান করেন, প্রেমপিরিতি করেন। সবকিছু, সবকিছুই আপনাদের কাছে স্বাভাবিক। আমাদের জীবনগুলো আপনাদের জুয়াখেলার ছোট্ট একটা অংশমাত্র, মিস্টার টোবিয়াস, ভবিষ্যতের মহামান্য নেকড়ে-মন্ত্রী। টোবিয়াস বিলস্ট্রোম ঃ নাহ্, আপনার সঙ্গে কথা বলে কোন লাভ নেই। আমি চলে যাচ্ছি। ভাল থাকবেন নেকড়ে সাহেব। বিদায়। জনাব নেকড়ে ঃ বিদায়, ভবিষ্যত নেকড়ে-মন্ত্রী।
×