ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শরণার্থী ও আশ্রয়দাতা দেশ

প্রকাশিত: ০৫:১০, ২২ জুন ২০১৮

শরণার্থী ও আশ্রয়দাতা দেশ

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার বার্ষিক প্রতিবেদনে সাম্প্রতিক বিশ্বে শরণার্থী সমস্যার যে চিত্র উঠে এসেছে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। প্রতি বছরই শরণার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। ২০ জুন আন্তর্জাতিক শরণার্থী দিবস সামনে রেখে প্রতিবছর ইউএনএইচসিআরের গ্লোবাল ট্রেন্ডস প্রতিবেদনটি বিশ্বজুড়ে প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশে ২০১৭ সালের আগস্টের পর থেকে রোহিঙ্গাদের যে ঢল নেমেছিল, তা গত এক দশকের সবচেয়ে বড় শরণার্থীর ঢল হিসেবে অভিহিত করেছে জাতিসংঘ। রুয়ান্ডার গণহত্যার পর গত ১০ বছরে আতঙ্কিত লোকজনের পূর্বপুরুষের ভিটেমাটি ছেড়ে চলে যাওয়ার এত বড় ঢল বিশ্ব দেখেনি। সর্বশেষ ধাপে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে এসেছে। গত বছরের ২৫ আগস্টসহ ১৯৭৮ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত চার দফায় রোহিঙ্গারা বড় পরিসরে বাংলাদেশে এসেছে। এই মুহূর্তে বাংলাদেশে, সুনির্দিষ্টভাবে বললে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় অবস্থান করছে প্রায় ১১ লাখ ১৮ হাজার রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রতিদিন জন্ম নিচ্ছে ৬০ শিশু- এমন সংবাদ আগেই দিয়েছে ইউনিসেফ। এর আগে বিবিসি একটি প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছিল চলতি বছর বাংলাদেশে ৪৮ হাজার রোহিঙ্গা শিশু জন্ম নেবে। রোহিঙ্গা ইস্যু এবং তাদের বাংলাদেশে শরণ নেয়ার পর সামগ্রিক পরিস্থিতি সম্পর্কে বাইরের পৃথিবী সম্পূর্ণ অবগত। দু’একটি দেশ ছাড়া সকলেই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে সেখানে বসবাসের সকল সুবিধা ও অধিকার প্রদানের জন্য মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে বলেছে। জাতিসংঘ কফি আনান কমিশনের মাধ্যমে সরেজমিনে পরিদর্শনের পর রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য বেশ কয়েকটি বাস্তব ও ন্যায়সঙ্গত প্রস্তাব রেখেছে। বাস্তবতা হচ্ছে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তার জন্য চলতি বছর অন্তত ৯৫ কোটি ১০ লাখ ডলার প্রয়োজন জানিয়ে গত মার্চে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছিল জাতিসংঘ। কিন্তু এর মধ্যে ২০ শতাংশও এ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। গত বছরের আগস্টের আগেই বাংলাদেশে বিরাজমান রোহিঙ্গা পরিস্থিতি ছিল উদ্বেগজনক। বলাবাহুল্য, গত একবছরে পরিস্থিতি অনেক বেশি নাজুক হয়েছে। কক্সবাজারের বাসিন্দারা অনেক দিন ধরেই অভিযোগ করে আসছিলেন যে, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কারণে তাদের জীবন রীতিমতো অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। অভিযোগ আছে, মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান, চুরি, ডাকাতিসহ এমন কোন অপরাধ নেই যার সঙ্গে তারা জড়িত নয়। স্থানীয় অপরাধীরাও তাদের সঙ্গে জোট বেঁধে রীতিমতো অপরাধের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে। বাংলাদেশ এমনিতেই ঘনবসতির দেশ। মিয়ানমারের বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু হিসেবে আশ্রয় নেয়ায় তা জাতীয় অর্থনীতিসহ নানা ক্ষেত্রে চাপ সৃষ্টি করছে। দুই বছর আগে আমরা আশঙ্কা প্রকাশ করে সম্পাদকীয়তে লিখেছিলাম যে, মিয়ানমারের সাম্প্রদায়িক ও জাতিগত হাঙ্গামা এবং সেখানকার সরকারের রাষ্ট্রনীতির কারণে যদি বাংলাদেশকে ভিন্ন রাষ্ট্রের মানুষকে শুধু ধর্মীয় ঐক্যের কারণে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য আশ্রয় দিতে হয়, তাহলে তা হবে সমস্যাসঙ্কুল, বিপজ্জনকও বলা যায়। দুর্ভাগ্যজনক হলো আজ সেটাই বাস্তবতা। শরণার্থী সমস্যার নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পড়ছে আশ্রয়দাতা দেশগুলোর ওপরেই। মানবতার পতাকা উর্ধে তুলে ধরতে গিয়ে স্বজাতিকে বিপন্ন করার বিষয়টি আন্তর্জাতিকভাবে অনুধাবন এবং তার আশু সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।
×