ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রিজার্ভ থেকে ডিএসইর লভ্যাংশ দেয়ায় আর্থিক ভিত দুর্বল হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ২৮ মার্চ ২০১৮

রিজার্ভ থেকে ডিএসইর লভ্যাংশ দেয়ায় আর্থিক ভিত দুর্বল হচ্ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সক্ষমতা না থাকলেও আবারও শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। আর এ লভ্যাংশ দিতে রিজার্ভ তহবিল হাত দিতে হয়েছে প্রতিষ্ঠানটিকে। ডিমিউচুয়ালাইজেশনের মাধ্যমে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর হওয়া ডিএসই এবার নিয়ে টানা তিনবার শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিল। প্রতিষ্ঠানটিকে তিনবারই রিজার্ভ থেকে অর্থ নিতে হয়েছে। বছরের পর বছর এভাবে রিজার্ভ ভেঙ্গে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেয়ায় ডিএসই-এর আর্থিক অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ছে। ফুরিয়ে আসছে রিজার্ভ তহবিলের অর্থও। ইতোমধ্যে ডেভেলপমেন্ট ও বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন ফান্ডের মতো বিশেষায়িত তহবিলে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কমে গেছে এফডিআরে বিনিয়োগ। প্রপাটি, প্লান্ট এবং ইক্যুইপমেন্টের মতো সম্পদে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বছরের পর বছর রিজার্ভ থেকে অর্থ নিয়ে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেয়া উচিত নয়। এতে প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা কমে যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত নিয়ম হচ্ছে, মুনাফার সম্পূর্ণ অংশ শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ হিসেবে না দিয়ে কিছু অংশ রিজার্ভে রেখে দেয়া হয়। যাতে আপদকালীন সময়ে তা কাজে লাগানো যায়। তবে বছরের পর বছর রিজার্ভ থেকে অর্থ নিয়ে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেয়া উচিত না। এতে প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা কমে যায়। আর্থিক অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, এভাবে রিজার্ভ ভেঙ্গে লভ্যাংশ দেয়া কিছুতেই ঠিক হচ্ছে না। এতে ডিএসইর আর্থিক অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়বে। তাছাড়া ডিএসইর ৬০ শতাংশ শেয়ার এখনও ডিস্ট্রিবিউশন করা হয়নি, যা ব্লকড হিসেবে রয়েছে। ৪০ শতাংশ শেয়ার গ্রহকরাই সব সুবিধা নিয়ে যাচ্ছে। আমি মনে করি ব্লকড হিসেবে থাকা ৬০ শতাংশ শেয়ার যতক্ষণ পর্যন্ত কৌশলগত এবং প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে হস্তান্তর করা না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত কোন লভ্যাংশ দেয়া যাবে না। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) একটি নির্দেশনা জারি করা উচিত। তবে রিজার্ভ ভেঙ্গে লভ্যাংশ দেয়ার পরও ডিএসইর কোন ধরনের সমস্যা হবে না বলে মনে করছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কে এ এম মাজেদুর রহমান। তিনি বলেন, রিজার্ভ ভেঙ্গে লভ্যাংশ দেয়ার কারণে কোন সমস্যা হবে না। কারণ, ভবিষ্যতে ডিএসইর আয় বাড়বে। আর এফডিআর এবং প্রপাটি, প্লান্ট এবং ইক্যুইপমেন্ট কমে যাওয়া এটি তেমন কোন বিষয় না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ডিএসইর পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ১ হাজার ৮০৩ কোটি ৭৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। এ হিসাবে ১০ শতাংশ হারে লভ্যাংশ দিতে হলে প্রয়োজন হয় প্রায় ১৮০ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। তবে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ডিএসই মুনাফা করেছে ১২৩ কোটি ৯১ লাখ টাকা। অর্থাৎ শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দিতে প্রতিষ্ঠানটির আরও ৫৬ কোটি ৪৭ লাখ টাকা প্রয়োজন, যা রিজার্ভ তহবিল থেকে নেয়া হবে। আগের বছর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ডিএসই রিজার্ভ ভেঙ্গে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিয়েছে। ওই বছরে প্রতিষ্ঠানটি মুনাফা করে ১১৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা। অর্থাৎ শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দিতে রিজার্ভ থেকে নিতে হয় ৬০ কোটি ৫৬ লাখ টাকার মতো। তার আগের বছর ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ডিএসই মুনাফা করে ১৩৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।
×