
বর্তমান বিশৃঙ্খল ও বিষণ্ণ পৃথিবীতে দয়ার মনোভাব আগের চেয়ে অনেক বেশি জরুরি হয়ে উঠেছে। তবে "ভদ্র" হওয়া আর "দয়ালু" হওয়া এক জিনিস নয়। মনোবিজ্ঞান বলছে, সত্যিকারের দয়ালু ও কোমল হৃদয়ের মানুষদের কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য থাকে।
তারা আত্মসমবেদনায় অভ্যস্ত, অন্যদের সহজেই বিচার করেন না, জীবনযুদ্ধে পিছিয়ে পড়লেও ঘুরে দাঁড়াতে জানেন। তাঁরা উপস্থিতিমুখর, উদার, কৃতজ্ঞ, সৎ, খোলামেলা, শ্রদ্ধাশীল ও আশাবাদী। পাশাপাশি তাঁরা বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য, যা তাদেরকে অন্যদের কাছে আপন করে তোলে।
মনোবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এ ধরনের মানুষরা আবেগের প্রকাশে আন্তরিক, মনখোলা ও সহানুভূতিশীল হয়ে থাকেন। এই গুণগুলো তাঁদের জীবনকেই মানবিক ও অন্যদের জন্য সহজলভ্য করে তোলে। চলুন জেনে নিই এমন ১১টি বৈশিষ্ট্য, যা নির্দেশ করে কেউ সত্যিই হৃদয়বান ও দয়াশীল ব্যক্তি কিনা।
প্রথমত, তারা নিজেদের প্রতি দয়াশীল এবং নিজেকে খুব কমই নিন্দা করেন। নিজের ভুল বুঝে সহানুভূতিশীল হলে অন্যের প্রতি সমবেদনাও স্বাভাবিকভাবেই জন্মায়। অনেকে রূঢ় মাত্রায় নিজেকে দোষারোপ করেন—but self-compassion মানেই নিজেকে মানব হিসেবে গৃহীত করা, যা আত্মবিশ্বাস ও হতাশা-চিন্তার মধ্যকার দূরত্বে স্থিতি এনে দেয়।
দ্বিতীয়ত, এমন মানুষরা অভিযুখী প্রতিকূলতা থেকে তাড়াতাড়ি পুনরুজ্জীবিত হন। সংগ্রামের মধ্যেকার দুর্দশা তাঁদের কৃতজ্ঞ করে তোলে নিজেদের অবস্থার মতোই দুখী মানুষের পাশে দাঁড়াতে প্রস্তুত করেন।
তৃতীয় বৈশিষ্ট্য হলো চেতনায় থাকা ও ইতিবাচক উপস্থিতি। তারা মনোযোগ দিয়ে কথা শোনেন, মানুষের প্রয়োজনে কাছে যান। কারণ মোবাইল বা নিজস্ব ব্যস্ততার ফাঁকে কেউ সাহায্য চাইলেই বুঝে ফেলেন।
চতুর্থ গুণ হলো উদারতা। কিছু না থাকলেও নিজের সময় ও কাজ দিয়ে অন্যের কল্যাণে ব্যস্ত থাকেন। দয়া তাদের স্বস্তি দেয়। অন্যদের সেবা করে নিজেই ভালো বোধ পান।
পঞ্চম বৈশিষ্ট্য কৃতজ্ঞতা। নিজের ভাগ্য বুঝে তারা অন্যকে আনন্দে পরিপূর্ণতা দেয়ার প্রেরণা পান। ধনালোকের পিছনে দৌড় নািয়ে তারা জীবনের ছোটখাটো মুহূর্তেই সুখ খুঁজে নিতে জানেন।
ষষ্ঠ গুণ হলো সততা ও সংবেদনশীল সত্যিকথা বলা। সত্য তাদের বিশ্বাস গড়ে দেয়; সামান্য ছল করেও সম্পর্কের স্থায়ীত্ব নষ্ট হতে পারে, তাই তারা সততা আর করুণা মিশিয়ে কথা বলেন।
সপ্তম গুণ নিজের মত বুঝে অন্যের মিথ্যে ছদ্মবেশে বিশ্বাস না করা। তারা নিজেকে মিথ্যা আশায় আটকান না, বরং স্বাভাবিক হয়ে দুনিয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় করেন।
অষ্টম, অন্যের সময় ও পরিশ্রমের সম্মান জানানো সেই থেকে স্পষ্ট হয়, মানুষকে সম্মানের চোখে দেখতে তারা কতটা আন্তরিক।
নবম,নতুন ধারণার জন্য মন উপযুক্ত রাখা। প্রাথমিক নেতিবাচক সিদ্ধান্ত না নিয়ে, নতুন পথ-দৃষ্টিতে স্বাভাবিকভাবেই তারা গ্রহণযোগ্যতা বাড়ান।
দশম বৈশিষ্ট্য শিক্ষিত আশাবাদ। কঠিন পরিস্থিতিতেও তারা ইতিবাচকতা বজায় রাখতে জানেন, নিজেকেই অনুপ্রাণিত করেন, আশার আলো ছড়িয়ে দেন।
একাদশ গুণ হলো বিশ্বস্ততা ও দায়িত্বশীল প্রতিশ্রুতি। কথা রাখার মাধ্যমে মানুষে মানুষের মধ্যে বিশ্বাস প্রসারিত করেন।
যারা এই গুণগুলো ধারণ করেন, তাঁরা কেবল নিজেদের জীবন নয়, পারিপার্শ্বিকতাকেও দয়াময় করে তুলে। এই বৈশিষ্ট্যগুলো আত্মস্থ করলে আমরা সবাই হতে পারি আশার আলোকবর্তিকা, যারা শুধু নিজেকে নয়, প্রতিবেশীও অর্জনের পথে অনুপ্রাণিত করবে।
সূত্র:https://tinyurl.com/38u24upv
আফরোজা