ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

একদিনের ব্যবধানে বেড়েছে ডলারের দাম

অর্থনৈতিকি রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:৪৩, ১৬ জুলাই ২০২৫

একদিনের ব্যবধানে বেড়েছে ডলারের দাম

বাজারে এক সময় ডলারের জন্য হাহাকার ছিল

বাজারে এক সময় ডলারের জন্য হাহাকার ছিল। বৈদেশিক লেনদেন সামলাতে গিয়ে ব্যাংকগুলো ছুটতো এক্সচেঞ্জ হাউসের পেছনে। এখন আর সেই পরিস্থিতি নেই।  ডলার সংকটের কঠিন সময় পার করে বাংলাদেশ এখন এক ধরনের মুদ্রা স্বস্তির মধ্যে প্রবেশ করেছে। যেখানে টাকার মান বাড়ছে, রিজার্ভ বাড়ছে, আর বৈদেশিক বাণিজ্যে শৃঙ্খলা ফিরছে। ব্যাংকগুলোর কাছে এখন পর্যাপ্ত ডলার রয়েছে। শুধু তাই নয়, মার্কিন ডলার এখন মার খাচ্ছে টাকার কাছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের অর্থনীতিতে ‘অবমূল্যায়নের যুগ’ থেকে ‘স্থিতিশীল বিনিময় হারে’ প্রবেশের সম্ভাবনাই এখন দৃশ্যমান। 
ঐতিহাসিক নিলামের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে বেশি দামে ডলার কিনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মার্কেট ফ্লোর কার্যত তুলে দেওয়ার পর সোমবার এক দিনেই মুদ্রাটির দাম ১.৮ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংক নিলামের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো ডলার কেনে। এদিন ১২১.৫০ টাকা দরে ১৭১ মিলিয়ন ডলার কেনা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই পদক্ষেপের পর বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সোমবার রেমিটেন্সের ডলার কেনার ক্ষেত্রে আগেরদিনের ১১৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২০.৮০ টাকা পর্যন্ত দাম দিয়েছে। 
ব্যাংকাররা বলছেন, গত সপ্তাহে ডলারের দাম প্রায় ৩ টাকা কমে যাওয়ার জেরে নিলামে বেশি দামে ডলার কেনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেশি রেট দিয়ে ডলার কিনে বাজারে দাম বাড়ানোর সিগন্যাল দেয়। সোমবার কোনো নিলাম অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে বাজারে রবিবারের নিলামের প্রভাব ছিল স্পষ্ট, কারণ ব্যাংকগুলো রেমিটেন্সের ডলার কেনার ক্ষেত্রে দর বাড়িয়ে দেয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মো. কবির আহমেদ বলেন, ‘আমরা বাজার থেকে কী পরিমাণ ডলার কিনব, তা এখনও নির্দিষ্ট করিনি।

আমরা প্রতিদিন হস্তক্ষেপ করব না বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী যখন প্রয়োজন মনে করা হবে, তখনই এভাবে অকশনের মাধ্যমে ডলার কিনব।’ একটি বেসরকারি ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন বেশি দামে ডলার কেনে, তখন ডলারের বাজার স্বাভাবিকভাবেই ওপরের দিকে ওঠে। তবে অনেকে ভেবেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেহেতু ১২১.৫ টাকা রেটে ডলার কিনেছে, সোমবার ডলারের বাজার ১২১ টাকার ওপরে থাকবে। কিন্তু চাহিদা কম থাকায় বাস্তবে এমনটা ঘটেনি।

আরেকটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ব্যাংকগুলো রেমিটেন্সের ডলার ছাড়াও রপ্তানি আয়ের ডলার কিনে থাকে। এক্ষেত্রে গত রবিবার ব্যাংকগুলো ডলার কেনার গড় দাম ছিল ১২০ টাকার মতো। ওইদিন ব্যাংকগুলো আমদানি বিল মেটানোর জন্য ডলার বিক্রি করেছে ১২১.৫ টাকা রেটে। তবে সোমবার এই গড় ক্রয়মূল্য কিছুটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২০.৫ টাকা থেকে ১২০.৮ টাকা। আর বিক্রয়মূল্য দাঁড়িয়েছে ১২২ টাকার কাছাকাছি, যা প্রায় ৫০-৮০ পয়সা বেশি।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিলামে কিছুটা বেশি রেটে ডলার কিনে বাজারে একটি ‘ইন্ডিকেটিভ রেট’ দিয়ে দিয়েছে। অর্থাৎ বাজারদর রিয়েল ইফেক্টিভ এক্সচেঞ্জ রেটের (আরইইআর) আশপাশে থাকার কথা। তার প্রভাবেই সোমবার ডলারের দাম কিছুটা বেড়েছে।  তবে ডলারের বাজার নিয়ে এখনই চূড়ান্ত কোনো মন্তব্য করা সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আরও কয়েকদিন বাজার পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

একটি এক্সচেঞ্জ হাউসের কান্ট্রি হেড বলেন, ব্যাংকগুলো এখনও সতর্ক হয়ে ডলার কেনাবেচা করছে। কিছু ব্যাংকের নিট ওপেন পজিশন (এনওপি) ‘লং অবস্থায়’ আছে। ওইসব ব্যাংক ডলার খুব বেশি কিনছে না। আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেশি দামে ডলার কেনার পর থেকে এনওপিতে ‘শর্ট অবস্থায়’ থাকা ব্যাংকগুলো কিছু ডলার কিনেছে। তবে সবমিলিয়ে চাহিদা এখনও কম।
আরেকটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলার চাহিদা না থাকায় ডলারের চাহিদাও বাড়ছে না। এছাড়া বর্তমানে বিনিয়োগও হচ্ছে না বললেই চলে। আর বিনিয়োগ না হলে মূলধনী যন্ত্রপাতি, কাঁচামালসহ অনেক আমদানি হয় না। এখন যা আমদানি হচ্ছে, তার একটা বড় অংশই নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য। ভোগ্যপণ্যের আমদানি সাধারণত একটা স্থিতিশীল অবস্থানে থাকে।

এছাড়া আগের যেসব ওভারডিউ আমদানি পেমেন্টও পরিশোধ করা হয়ে গেছে। ফলে খুব দ্রুত ডলারের চাহিদা বাড়ার কথা না।  ‘অন্যদিকে আমাদের রেমিটেন্স প্রবাহ অনেক ভালো। রপ্তানি আয়ও ভালো আসছে। সবমিলিয়ে ডলারের সরবরাহ অনেক ভালো। এসব কারণে ব্যাংকগুলোর হাতে এখন ডলারের প্রাপ্যতা বেশি রয়েছে।

×