ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

তুরস্কের প্রধানমন্ত্রীর সফর

প্রকাশিত: ০৪:২২, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৭

তুরস্কের প্রধানমন্ত্রীর সফর

তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিমের তিনদিনের সরকারী সফর বাংলাদেশের জন্য সুফল বয়ে আনবে। তাই এই সফরকে যথেষ্ট ফলপ্রসূ হিসেবে দেখা যায়। কেবল সাম্প্রতিক রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানের পথরেখা নির্মাণের সদিচ্ছার কারণেই নয়, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও দু’দেশের সম্পর্ককে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে এই সফর ভূমিকা রাখবে। রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের তীব্র নিন্দা জানিয়ে একাধিকবার বিবৃতি দিয়েছেন তুর্কী প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোগান। তিনি একে গণহত্যা বলেও উল্লেখ করেন। তুরস্কের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর এমন একটি পরিস্থিতিতে সম্পন্ন হয়েছে যখন রোহিঙ্গা ও জেরুজালেম এই দুই জ্বলন্ত ইস্যুতে দুই দেশের অবস্থান অভিন্ন। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর শর্তাবলী চ্যালেঞ্জ করা, ওআইসিকে শক্তিশালী মঞ্চ হিসেবে গড়ে তোলা, ধর্মীয় উগ্রতাকে নাকচ করে রাষ্ট্র ও সমাজজীবনে প্রতিষ্ঠা করার মতো বহু গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক বিষয় দুই দেশকে পরস্পরের প্রতি আস্থাশীল করে তুলেছে। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিনালি ইলদিরিম। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে স্ব-স্ব দেশের প্রতিনিধিরা দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হন। এতে দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে দুটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। চলতি মাসে তুরস্কের ইস্তানবুলে অষ্টম বসফরাস সামিট থেকে ফিরে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রীর মন্তব্যটি স্মরণযোগ্য। তিনি বলেছিলেন, তুরস্কের সঙ্গে বর্তমানে বাংলাদেশের সম্পর্ক শ্রেষ্ঠতম পর্যায়ে রয়েছে। বাংলাদেশে অবস্থিত সব রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসন, রাখাইনে নিরাপদ পরিবেশ এবং কোফি আনানের নেতৃত্বে গঠিত রাখাইন পরামর্শ কমিশনের পূর্ণ বাস্তবায়ন দেখতে চায় বাংলাদেশ। এই তিনটি বিষয়ে তুরস্কের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। নিকট অতীতের দিকে ফিরে তাকালে অবশ্য আমরা দেখতে পাই বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকেই অজ্ঞাত কারণে তুরস্ক প্রতিবাদ করে আসছে। তারা এমনকি এই বিচার বন্ধ করতেও বলেছিল। এছাড়া যুদ্ধাপরাধী ও জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির দ- কার্যকরের পর তুরস্ক তার রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠায় ঢাকা থেকে। পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে বাংলাদেশও আঙ্কারা থেকে রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠিয়েছিল। ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তখন বলেছিল, এতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে কোন প্রভাব পড়বে না। বাস্তবে অবশ্য এর সমর্থন মেলেনি। তুরস্ক সেদেশে নিজামীসহ কয়েকজন যুদ্ধাপরাধীর নামে সড়ক করার ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। তারা এমনকি যুদ্ধাপরাধী ইস্যুতে প্রতিক্রিয়া না দেখানোয় ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমালোচনাও করেছে। তুরস্কের এসব ভূমিকা বাংলাদেশের জন্য নেতিবাচক হলেও রোহিঙ্গা সঙ্কটের পর সেটি দৃশ্যত বদলে গেছে। তুরস্কের ফার্স্ট লেডি সঙ্কটের শুরুর দিকেই বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। এরপর এলেন সেদেশের প্রধানমন্ত্রী। এ থেকে বোঝা যায় দেশটি আমাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষা করে চলার দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কের বিস্তৃতি ঘটানোরও পরিকল্পনা রয়েছে তুরস্কের। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিই হচ্ছে কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়, সকল দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা। আশা করা যায় তুরস্কের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের পর সেদেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে নতুন ইতিবাচক মাত্রা আসবে।
×