ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বব্যাপী প্রাকৃতিক দুর্যোগ

প্রকাশিত: ০৫:০৫, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭

বিশ্বব্যাপী প্রাকৃতিক দুর্যোগ

চলতি বছর বিশ্বের নানা প্রান্তে নানাবিধ প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা যাচ্ছে। মেক্সিকোয় ভূমিকম্পে প্রাণহানিসহ ধ্বংসস্তূপ এর সর্বশেষ উদাহরণ। ভূমিকম্পের পরপরই সেখানে জারি করা হয়েছে সুনামি সতর্কতা। অন্যদিকে বাহামা, কিউবা, বারমুডা, টার্কস এ্যান্ড কাইকোস দ্বীপপুঞ্জ, পুয়ের্তোরিকোয় তীব্র আঘাত হানার পর ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস আঘাত হেনেছে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা উপকূল বরাবর। সে দেশের ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টারের মতে ইরমা হলো সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়। এর ভয়াবহ তা-বে ইতোমধ্যে ১২ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যা আরও বাড়তে পারে। অন্তত পাঁচ লাখ মানুষকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে নিরাপদ স্থানে। দুই সপ্তাহ আগে যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূ-খন্ডে- আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় হার্ভির চেয়েও ভয়ঙ্কর ইরমা। অন্যদিকে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সুবিস্তৃত অঞ্চলজুড়ে দেখা দিয়েছে অস্বাভাবিক অতি বৃষ্টি, পাহাড়ী ঢল ও ভয়াবহ বন্যা। চীন থেকে শুরু করে ভারতের ব্যাপক অংশ, নেপাল ও বাংলাদেশ ছিল এই অতিবৃষ্টি এবং বন্যার প্রকোপস্থল। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, অসম, ত্রিপুরা এবং বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল ছিল ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলোর অন্যতম। ভারি বৃষ্টিপাতে মুম্বাই, চেন্নাইয়ের শহরগুলোও ডুবে গেছে। উল্লেখ্য, ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ও প্রাণহানিসহ বন্যাপরবর্তী পুনর্বাসন এখন পর্যন্ত সামাল দেয়া সম্ভব হয়নি। এসব অঞ্চলে খাদ্যপণ্যের দামও বেশ চড়া। এর পাশাপাশি আছে রোগ-শোক, দুর্ভোগ। গত কয়েক বছর ধরে বিশ্বব্যাপী আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে সতর্কবাণী উচ্চারণ করে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। এর অনেক কারণের মধ্যে অন্যতম অতিমাত্রায় কার্বন নিঃসরণের কারণে ভূ-মন্ডলের বায়ুস্তরে ওজন হোলের আয়তন বৃদ্ধি, উত্তর, মেরু, দক্ষিণ মেরুর ঘন ভারি তুষার স্তূপ গলে যাওয়া, সমুদ্রপৃষ্ঠের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি, সর্বোপরি মহাসাগরীয় স্রোত এল নিনো, লা নিনার প্রতিকূল প্রভাব। এর বাইরেও মনুষ্যসৃষ্ট নির্বিচারে প্রাকৃতিক বন ধ্বংস, বিভিন্ন নদ-নদীতে অপরিকল্পিতভাবে বাঁধ ও ব্যারাজ নির্মাণ, কয়লা ও জীবাষ্ম জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ এমনকি বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত যুদ্ধবিগ্রহ, বোমাবাজি ধ্বংসযজ্ঞ ইত্যাদি। উল্লেখ্য, এসব একদিনে বা কয়েক বছরে হয়নি। বরং সৃষ্টির পর থেকেই মানুষ নানাভাবে নানা উপায়ে ক্রমাগত ধ্বংস করে চলেছে প্রকৃতিকে। সেটা বর্তমানে এই পর্যায়ে গিয়েছে যে, প্রকৃতিও বিরূপ হয়ে ফুঁসে উঠেছে। দেখা দিয়েছে রুদ্ররূপে। আশার কথা এই যে, বিলম্বে হলেও বোধোদয় ঘটেছে মানুষের। অতঃপর ধরিত্রীকে রক্ষার অনিবার্য প্রয়োজনে সর্বস্তরে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে পর্যায়ক্রমে অনুষ্ঠিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক ও বহুজাতিক ধরিত্রী সম্মেলন। জাতিসংঘের উদ্যোগে ২০১৫ সালের ৩০ নবেম্বর অনুষ্ঠিত হয় বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন। এতে যোগ দেন ১৯৫টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানসহ উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল এবং জলবায়ু ও আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন পর্যায়ের আলাপ-আলোচনা,্ তর্ক-বিতর্ক ও দর কষাকষির পর শেষ পর্যন্ত একটি চুক্তিতে উপনীত হতে সক্ষম হয় বিশ্ব। চুক্তি অনুসারে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি দুই ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে রাখতে সম্মত হয়েছে দেশগুলো। কোপেনহেগেন কনসেনসাস সেন্টারের মতে, প্যারিস চুক্তিতে নানা ধরনের ঘাটতি রয়েছে। চুক্তির সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো জলবায়ু অর্থায়নের জন্য ১০ হাজার কোটি ডলারের যে তহবিলের কথা বলা হয়েছে তা খুবই কম। কেননা, এই শতাব্দীর মধ্যে বিশ্বের তাপমাত্রা দুই ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে রাখতে হলে প্রতিবছর রাষ্ট্রগুলোকে এক ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে হবে। এই বিপুল পরিমাণ অর্থের সংস্থান হবে কোথা থেকে? যুক্তরাষ্ট্র না থাকায় অর্থ সঙ্কট আরও বাড়বে। প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনের অগ্রগতি সন্তোষজনক এবং একটি সবুজ পৃথিবী গড়ে তোলার জন্য ইতিবাচক। সার্বিকভাবে চুক্তিটিতে জলবায়ু তহবিলে অর্থায়নের বিষয়টি অস্পষ্ট থাকলেও এবং কিছু বিষয় দুর্বলভাবে উপস্থাপিত হলেও বিশ্বব্যাপী ব্যাপক জনমত ও সচেতনতা সৃষ্টিতে এর ভূমিকা অনস্বীকার্য। তবে বিশ্বের ক্ষমতাধর ও প্রভাবশালী রাষ্ট্রপ্রধানদের বোধোদয়সহ দায়িত্বশীল ভূমিকা এক্ষেত্রে অবশ্যই প্রত্যাশিত।
×