ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বেহাল কারিগরি শিক্ষা

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ৩ আগস্ট ২০১৭

বেহাল কারিগরি শিক্ষা

দেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার অবস্থা বেহাল। সরকারী-বেসরকারী মিলিয়ে সারাদেশে মোট কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা সাত হাজারের ওপর। পরিতাপের বিষয় হলো, অধিকাংশেরই প্রায় চাল-চুলো নেই, নামেই কারিগরি শিক্ষা! বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কথা বাদ দিলেও অধিকাংশ সরকারী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে প্রয়োজনীয় শিক্ষক পর্যন্ত নেই। ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ১৩ বছর আগে ঢাকঢোল পিটিয়ে এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বা পরিবেশ প্রকৌশল বিভাগ খোলা হলেও আজ পর্যন্ত কোন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়নি। ফলে মেধাবী শিক্ষার্থীরা অনেক আশা নিয়ে ভর্তি হলেও কোনরকমে চালানো হচ্ছে জোড়াতালি দিয়ে। একই অবস্থা অন্যান্য পলিটেকনিকেও। প্রায় সর্বত্রই ভয়াবহ শিক্ষক সঙ্কট, শিক্ষক ছাড়া ডবল শিফট চালু, অনিয়মিত বেতন, নিয়মিত ক্লাস না হওয়া, শিক্ষক ছাড়াই বিভাগ খুলে শিক্ষার্থী ভর্তি উচ্চশিক্ষার সুযোগ বন্ধসহ বহুমুখী সমস্যা সঙ্কটে জর্জরিত কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা কার্যক্রম। প্রতিবছর বিপুল শিক্ষার্থী এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হলেও অনেকেই উচ্চশিক্ষার জন্য কাক্সিক্ষত বিশ্ববিদ্যালয়সহ বুয়েট, মেডিক্যালে ভর্তির সুযোগ পায় না। অথচ পলিটেকনিক ডিপ্লোমা শিক্ষার মান উন্নত ও মানসম্মত হলে শিক্ষার্থীরা এখানে স্বচ্ছন্দে ভর্তি হতে পারে। জাতীয় দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্রে ২০২১ সালের মধ্যে মাধ্যমিক পরিসরে মোট শিক্ষার্থীর ২০ ভাগ কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। অথচ বর্তমানে মোট শিক্ষার্থীর মাত্র ১৪ ভাগ পড়াশোনা করছে কারিগরি শিক্ষায়। এ থেকেই বোঝা যায় যে, খাতটি সরকার তথা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ব্যাপক বৈষম্য ও অবহেলার শিকার। উন্নত বাংলাদেশ তৈরিতে চাই দক্ষ মানবসম্পদ। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, বর্তমানে দেশে দক্ষ মানব সম্পদের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। গত কয়েক বছরে শিক্ষার হার জ্যামিতিক গতিতে বাড়লেও সেই অনুপাতে দক্ষ ও যোগ্য মানবসম্পদ তৈরি হয়নি। ১৬ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত একটি দেশে যেই পরিমাণ প্রকৌশলী, ডাক্তার, নার্স, প্রযুক্তিবিদ, আইটি বিশেষজ্ঞ এমনকি বিজ্ঞানী ও অধ্যাপক প্রয়োজন সেই পরিমাণে বিশেষজ্ঞ, নিদেনপক্ষে দক্ষ মানবসম্পদ নেই। অথবা গড়ে উঠেনি আজ পর্যন্ত। বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায় যে, কোনরকমে একটি স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রী নিয়ে বেরিয়ে কেরানির চাকরি খুঁজতে। গত কয়েক বছরে প্রায় এক কোটি বাংলাদেশী সারা বিশ্বে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়েছেন চাকরিবাকরি অথবা শ্রম বিক্রির উদ্দেশ্যে। তাদের মধ্যেও যে দক্ষ মানব সম্পদ আছে এমন কথা বলা যাবে না কিছুতেই, বরং অধিকাংশই অদক্ষ বড়জোর আধাদক্ষ শ্রমিক। অনেকে এমনকি ‘অড জবে’ জড়িত। বিদেশে চাকরি জীবন শেষ হলে দেশে ফিরেও তারা তেমন কিছু করতে পারেন না। বিদেশের শ্রমবাজারও বর্তমানে যেমন সংকুচিত হয়ে আসছে তেমনি কমছে প্রবাসী আয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি) ও কলম্বো প্ল্যান স্টাফ কলেজ (সিপিএসসি) ম্যানিলার যৌথ উদ্যোগে ১৬টি দেশের প্রতিনিধি নিয়ে জুলাই মাসের শেষার্ধে ঢাকায় একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে টেকসই উন্নয়নে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ওপর সবিশেষ জোর ও গুরুত্বারোপ করা হয়। এর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হলো ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে উদীয়মান উন্নত দেশে পরিণত করা। সে জন্য জরুরী ও অত্যাবশ্যক দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি। উল্লেখ্য, বর্তমান সরকারও দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজিয়ে দক্ষ ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন মানবসম্পদ তৈরির জন্য দেশব্যাপী ডিপ্লোমা শিক্ষা তথা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট তৈরিসহ একাধিক কারিগরি বোর্ড স্থাপনে সবিশেষ আগ্রহী। বৈশ্বিক শ্রমবাজার সংকুচিত হওয়ার পাশাপাশি প্রবাসী আয় কমে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে দেশেই দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির বিষয়টি আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। তবে এর জন্য অত্যাবশ্যক কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ওপর সবিশেষ গুরুত্বারোপ করা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এদিকে জরুরী দৃষ্টি তথা বাজেট বরাদ্দ দেয়া বাঞ্ছনীয়।
×