ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ছায়ার সঙ্গে যুদ্ধ

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ৮ এপ্রিল ২০১৭

ছায়ার সঙ্গে যুদ্ধ

দেশ বিক্রির গল্পটা আবার ঝুলি থেকে বের করে আনা হয়েছে। অনেকদিন ঝুলিতে তা ঘুমিয়ে ছিল। এখন নতুন করে চাগাড় দিয়ে উঠেছেন গল্পকথক। ম্যাডামের ঝুলিতে এমনতর কত শত গল্প যে রয়েছে। সুযোগ পেলেই তিনি তা প্রকাশ্যে এনে বাজারজাত করেন। ম্যাডামের গল্পের তোড়ে ঠাকুরমার ঝুলি কোথায় যে হারিয়ে গেল এই প্রজন্ম তার হদিস পায় না। ঝুলি থেকে বের হতো রাক্ষস-খোক্ষস, সুয়োরানী-দুয়োরানী, এমনকি নরপিশাচরাও। আর একালের দাদিমাও জুজুর ভয় দেখান, দৈত্য-দানোর হুঙ্কারের ধ্বনির প্রতিধ্বনি তোলেন। আর তার ঝুলিতে কত কিসিমের গান যে জড়াজড়ি করে আছে, জানেন শুধু তিনি তা নিজেই। যখন শান্তি চুক্তি হয় পার্বত্যাঞ্চলে তখন তিনি গল্প ফাঁদলেন, চট্টগ্রাম, ফেনী ভারতের অংশ হয়ে গেছে। মানুষ তো স্তম্ভিত, হতবাক, বিস্মিত। দীর্ঘদিনের সশস্ত্র সংগ্রাম, প্রাণহানি, সম্পদ নাশের বিপরীতে এই শান্তি চুক্তি বিশ্ববাসীর কাছে প্রশংসিত হলেও তার ঝুলি থেকে বের করে আনা গল্প দেশ বিক্রির চুক্তিতে পর্যবসিত হলো। তিনিই যখন আবার ক্ষমতায় আসীন হলেন তখন আর চুক্তি বাতিল করেন না। এমনকি ভারতের প্রতি নমনীয় ও আনুগত্য বজায় রাখার জন্য সে দেশ সফরকালে গঙ্গার পানি বণ্টন নিয়ে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। দেশে ফিরে এসে বলেন, গঙ্গার পানি নিয়ে কথা বলতে ভুলেই গেছি। ভুলে যাওয়ারই কথা। কারণ ভারত অখুশি হতে পারে এমন কাজ তো তিনি করতে পারেন না। ছিটমহল সমস্যা নিয়ে একটি কথাও বলেননি। বেগম জিয়া তো ভারতবিরোধিতার জজবা তুলে জনগণকে বিভ্রান্ত করার কাজটি সুচারুরূপে করতে পেরেছিলেন গত বিশ শতকের শেষ দশকে। কিন্তু ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর সীমান্ত সমস্যা, সমুদ্র সমস্যাসহ ভারতের সঙ্গে অমীমাংসিত কোন বিষয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেননি। কিন্তু ভারতের মোসাহেবী করতে তার সরকার সেবাদানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল। পাকিস্তানের আইএসআই-এর পরামর্শে সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ঘাঁটি স্থাপনে সার্বিক সহায়তা ও পৃষ্ঠপোষকতা করা হয়। এমনকি অবৈধ অস্ত্র সরবরাহেও সহযোগিতা করা হয়। চট্টগ্রামে আটক দশ ট্রাক অস্ত্র কিংবা পুরুলিয়ায় বিমান থেকে ফেলা অস্ত্রশস্ত্রÑ সবই ম্যাডামের ঝুলি থেকে বেরিয়ে আসা সত্য ঘটনা। এই গল্প তিনি লুকিয়ে রাখেন। দুর্নীতির মাতা হিসেবে খ্যাতিপ্রাপ্তির পর পুত্রকেও দুর্নীতির পুত্রে পরিণত করতে বেগ পেতে হয়নি। কিন্তু ভারতবিরোধিতার এ কথা অর্জন করে তিনি পাকিস্তানী ও স্বাধীনতাবিরোধীদের প্রিয়পাত্রে পরিণত হতে পেরেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লী সফর দেশের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবেÑ এটা বাংলাদেশবাসীর প্রত্যাশা। এর আগে দেশের স্বার্থে গঙ্গার পানি চুক্তি, ছিটমহল বিনিময় চুক্তি, স্থলসীমান্ত চুক্তি, সমুদ্র সীমানা অর্জন, জঙ্গী দমনে সহযোগিতার হাত বাড়ানোর কাজটি শেখ হাসিনাই করেছেন। এমনকি বাংলাদেশকে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ঘাঁটিমুক্ত করেছেন। দু’দেশের .সম্পর্ককে গভীর উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। কিন্তু বিএনপি-জামায়াতীরা বিরোধিতায় মেতেছেন। শেখ হাসিনার সফর অমীমাংসিত বিষয়গুলোর মীমাংসার পথকে প্রসারিত করবে। কিন্তু বিএনপি নেত্রী আবার দেশ বেচার কল্পকাহিনী ছড়িয়ে চুক্তির আগেই সব প্রকাশ করার কথা বলে এক ধরনের বালখিল্যতা দেখিয়েছেন। এখনও চুক্তিই হলো না অথচ তা প্রকাশ করতে হবে। আগে তো চুক্তি হোক, তারপর তা সংসদে পেশ করা যায়। ভারতের সঙ্গে সামরিক সহায়তা বিদ্যমান থাকলেও বর্তমানে তা একটি কাঠামোতে নিয়ে আসার জন্য চুক্তি দরকার। বিএনপি নেত্রী ছায়ার সঙ্গে যুদ্ধ করছেন। ভাবছেন তিনি, ‘সেই সত্য যা রচিবে তুমি।’ তার রচিত ঝুলির গল্পগুলো এখন আর ধারে-ভারে কাটে না। তাই সব আন্দোলনই বৃথা।
×