ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাস সার্ভিস ও ভিসা জটিলতা

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ২৩ মে ২০১৫

বাস সার্ভিস ও ভিসা জটিলতা

অবশেষে বহু প্রতীক্ষিত কলকাতা-আগরতলা সরাসরি বাস সার্ভিস চালু হচ্ছে। এদিকে গতকাল ঢাকা-শিলং-গুয়াহাটি রুটে পরীক্ষামূলক বাসসেবা চালু করা হয়। পরীক্ষা সফল হলে জুন মাসে এই রুটে বাস চলাচল পুরোদমে চলবে। আরও চারটি রুটে বাস চালু নিয়ে আলোচনা চলছে। এর ফলে দুই দেশ ও জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বাড়বে, ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারিত হবে, পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটবে। কিন্তু ভিসা নিয়ে জটিলতার নিরসন না হলে এই সংযোগ সুফল বয়ে আনবে না। এখন ভারতীয় ভিসা পাওয়া যেন আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়া। অনলাইনে ভারতীয় হাইকমিশনের ভিসাপ্রাপ্তি চালুর পরও সমস্যা কমেনি, বরং বেড়েছে। দু’দেশের মধ্যে ১৯৯৯ সালে পাঁচটি রুটে সরাসরি বাস চালুর সিদ্ধান্তের পর ঢাকা-কলকাতা সরাসরি বাসসেবা চালু হয়, যা শেখ হাসিনা ও অটলবিহারী বাজপেয়ী উদ্বোধন করেছিলেন। এটা চালু হওয়ার ফলে শুধু এক দীর্ঘ প্রতীক্ষারই অবসান ঘটেনি, দুই প্রতিবেশীর সম্পর্কোন্নয়নের ক্ষেত্রেও এক নবতর অধ্যায় সূচিত হয়। এই রুটে বর্তমানে যাতায়াতকারী শতকরা ৯০ জনই বাংলাদেশী। তারা সাধারণত চিকিৎসা, আত্মীয়-স্বজনের সাক্ষাত লাভ, ব্যবসায়িক কাজ ও পর্যটনের জন্য যাতায়াত করে থাকেন। ভারত থেকেও স্বজনরা আসেন সাক্ষাতে ও ভ্রমণে বা চাকরির সূত্রে। ২০০১ সালে লতিফুর রহমানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারকালে সেবাটি বন্ধ হয়ে যায় নবায়ন না করায়। ২০০২ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকার হাওয়া ভবনের আশীর্বাদপুষ্ট একটি কোম্পানিকে এই রুটে যান চালানোর জন্য কার্যাদেশ দিলেও বিষয়টি আদালতে গড়ায়। জামায়াত এই রুট চালুর বিরোধিতা তখনও করে আসছিল। ২০০৩ সালে বেগম জিয়ার মন্ত্রিসভায় জামায়াতসহ বিএনপির কয়েকজন মন্ত্রী প্রবল বিরোধিতা করায় এই বাস সেবাটি বন্ধ হয়ে যায়। পরে ভারতের চাপে ২০০৩ সালের শেষ দিকে আবার চালু হয়। ১৯৭১ সালে আগরতলা থেকে কলকাতা বা কলকাতা থেকে আগরতলা যাতায়াতে বাঙালী শরণার্থীরা টের পেয়েছেন, কী দুর্গম পথ রেলে পাড়ি দিতে হয়Ñ গন্তব্যে পৌঁছতে তিন দিন লেগে যেত। ৪৪ বছর পর সেই পাহাড়ী দুর্গম পথ ছেড়ে সরাসরি উভয় স্থান থেকে যাতায়াতে সময় নেবে ১৪-১৫ ঘণ্টা। এতে বেঁচে যাবে শ্রমঘণ্টা, হ্রাস পাবে আর্থিক ব্যয়। কমে যাবে যাতায়াত পথ। দু’দেশের মানুষের অনেক দিনের আকাক্সক্ষার পূর্ণতা প্রাপ্তি হবে। এজন্য দু’দেশের সরকার প্রধান অভিনন্দন ও ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। তবে সতর্কতার বিষয় যে, উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রায় সব রাজ্যেই ছিল বিচ্ছিন্নতাবাদীদের তৎপরতা, যা পুরোপুরি স্তিমিত হয়ে যায়নি। নতুন করে আল কায়েদাসহ নানা জঙ্গীগোষ্ঠী সেখানে ঘাঁটি গেড়েছে বলে প্রচার রয়েছে। তাই দু’দেশের মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতা ও বোঝাপড়া যত বাড়বে, জঙ্গী ও অপশক্তি তৎপরতা তত কমবে। বাড়বে পারস্পরিক আস্থা ও সম্প্রীতি। তবে বাস চালুর আগেই ভারত ভিসা জটিলতার দ্রুত সহজ সমাধান করে দু’দেশের মৈত্রী বন্ধনকে আরও গভীর করার ব্রত নেবেÑ সেটাই কাম্য।
×