ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগের চেয়ারম্যান হতে রাজি ম্যারাডোনা

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ১৭ জানুয়ারি ২০১৫

ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগের চেয়ারম্যান হতে রাজি ম্যারাডোনা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশে একটি ফ্রাঞ্চাইজি ফুটবল লীগ আয়োজনের জন্য ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে (বাফুফে) আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিয়েছিল কলকাতাভিত্তিক ভারতের ক্রীড়া বিপণন প্রতিষ্ঠান ভারতীয় ইভেন্ট ম্যানেজম্যান্ট কোম্পানি সেলিব্রেটি ম্যানেজমেন্ট। পরে তারা টুর্নামেন্টের নাম প্রস্তাব করে। প্রস্তাবনা অনুযায়ী টুর্নামেন্টের নাম হবে ‘বাংলাদেশ সুপার সকার।’ শুক্রবার সেলেব্রেটি ম্যানেজমেন্ট গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক ভাস্বর গোস্বামী শুক্রবার জানান টুর্নামেন্টের চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য ইতোমধ্যেই তারা আর্জেন্টাইন ফুটবল কিংবদন্তি ডিয়েগো ম্যারাডোনাকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেয়ার পর গত ১৩ জানুয়ারি এই প্রস্তাবে রাজিও হয়েছেন সর্বকালের সেরা দুই ফুটবলারের একজন ম্যারাডোনা। সুতরাং টুর্নামেন্টটি আয়োজিত হলেই বাংলাদেশে আসবেন ১৯৮৬ বিশ্বকাপে নিজ দেশকে শিরোপা জেতানো ম্যারাডোনা। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সম্মতি পেলে এ বছরের শেষদিকে টুর্নামেন্টটি আয়োজন করতে চায় সেলিব্রেটি ম্যানেজমেন্ট গ্রুপ। টুর্নামেন্টে খেলবে আট দল। প্রতিটি দলের একটি করে বিশ্বখ্যাত পার্টনার ক্লাব থাকবে। এর মধ্যে চারটি ইউরোপিয়ান এবং বাকি চারটি থাকবে লাতিন আমেরিকান ক্লাব। সাত বিদেশী রেজিস্ট্রেশন পারবে প্রতিটি ক্লাবে। তবে ম্যাচে খেলতে পারবে সর্বোচ্চ ৫ জন। টুর্নামেন্টের ৭৫ ভাগ মালিকানা থাকবে দেশী ফ্রাঞ্চাইজিদের এবং ২৫ শতাংশ মালিক বিদেশী ক্লাবের। সেলিব্রেটি ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিই ২০১১ সালে বাংলাদেশে আর্জেন্টিনা এবং নাইজিরিয়ার ফিফা ফ্রেন্ডলি ম্যাচটি আয়োজন করেছিল। বাফুফে সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিনের সঙ্গে শুক্রবার আলোচনা হয় ভাস্বরের। আলোচনার ফলাফল কী? ভাস্বর বলেন, ‘বাফুফে সভাপতির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে, সময়টা কি হওয়া উচিত। ডিয়েগোকে কবে নিয়ে আসা যায় এসব বিষয় নিয়ে। এই টুর্নামেন্টের জন্য অবকাঠামোগত সহায়তা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বাফুফে সভাপতি। টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে হলে ১২ সপ্তাহের একটি সিডিউল বাফুফেকে বের করে দিতে হবে। মূলত এসব বিষয় নিয়েই আলোচনা হয়েছে।’ ভাস্বর আরও জানান, প্রথম আমরা শুরু করতে চাইছি ম্যারাডোনাকে দিয়েই। তিনি নিজে আসবেন। এসে এখানে অফিসিয়ালি টুর্নামেন্টটি শুরু করবেন। তারপর থেকেই সবকিছু শুরু হবে। ফ্রাঞ্চাইজি নির্বাচন, স্পন্সরশিপ, টেলিভিশন নির্বাচনÑ এসব।’ ভাস্বর মনে করছেন এই টুর্নামেন্টটি আয়োজিত হলে এটি হবে একটি রোমাঞ্চকর লীগ, ‘বিশ্বের প্রায় ৭০টি দেশের ফুটবলপ্রেমী বাংলাদেশের এই লীগ দেখবেন। কারণ পৃথিবীর ৬০-৭০টি দেশের ফুটবলাররা এখানে খেলবেন। ফলে সেসব দেশের টিভি চ্যানেলগুলোতে খেলাগুলো বিক্রি হবে। আমাদের প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আমি বলতে পারি এই লীগ আয়োজিত হলে পেশাদারিত্বের দিক থেকে এটি হবে একটি রোমাঞ্চকর লীগ।’ ম্যারাডোনা বাংলাদেশে আসছেন এই তথ্যটি কতটুকু সত্য? ‘এটি এক শ’ ভাগ নিশ্চিত। ম্যারাডোনা আমাদের অফারটি শুনে আনন্দের সঙ্গে রাজি হয়েছেন। অর্থনৈতিক বিষয়াদি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। লীগের পুরো ডিজাইন নিয়ে এ মাসের শেষদিকে তার সঙ্গে আলোচনা করব। ম্যারাডোনা এতটাই আগ্রহী যে তার প্রস্তাব ছিল প্রথম উদ্বোধনী প্রেস কনফারেন্সটা লন্ডনে হোক। কিন্তু আজ বাফুফে সভাপতির সঙ্গে আলোচনা শেষে আমাদের প্রস্তাবটা থাকবে প্রথমে বাংলাদেশে হোক তারপর লন্ডনে হোক।’ জানা গেছে, ম্যারাডোনা এখন অবকাশ যাপন করছেন কিউবায়। তাঁর ম্যানেজারের মাধ্যমে আলোচনা হয়েছে ভাস্বরের। ব্রাজিলের বিখ্যাত ফ্ল্যামেঙ্গো ক্লাব এই আসরের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে সম্মতি দিয়েছে। তারা হবে এই আসরের পার্টনার ক্লাব। জিকোর নামের সঙ্গে ক্লাবটি পুরোপুরি জড়িত। তবে তারা এই লীগে খেলবে না। বিদেশী খেলোয়াড় এবং বিদেশী কোচ সরবরাহ করবে। এমনটাই জানান ভাস্বর। ২০১০ সালের আর্জেন্টিনার তৎকালীন অধিনায়ক জুয়ান পাবলো সোরিন এই লীগের মেন্টর হতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বাফুফে তিন কোটি টাকা পাবে এই টুর্নামেন্ট আয়োজন করলে। বাফুফে সভাপতির মূল কথা হলো সব ঠিক আছে। কিন্তু আমাদের যে ফ্রাঞ্চাইজি আছে তাদের টাকাটা উঠবে কী করে? বাফুফের সভাপতির এই উদ্বেগের জায়গাটাকে কিভাবে সমাধান করবেন? ভাস্বরের উত্তর, ‘আমি ওনাকে আশ^স্ত করেছি। পৃথিবীর যে কোন ফ্রাঞ্চাইজি লীগ হচ্ছে একটি ব্যবসায়িক বিনিয়োগের স্থান। একটা ফ্রাঞ্চাইজি সেখানে টাকা খরচ করে না, বিনিয়োগ করে এবং তার থেকে টাকা ফেরত পায়। আমাদের ফ্রাঞ্চাইজি মডেল এমনভাবে তৈরি করা হচ্ছে যাতে প্রথম বছর থেকে সব ফ্রাঞ্চাইজিরা এখান থেকে লাভবান হতে পারে।’ বাংলাদেশে ১৬ কোটি লোকের বাস। যা গোটা ইউরোপের অধিবাসীদের চেয়েও অনেক বেশি। এখানকার মানুষরা অসম্ভব ফুটবল পাগল। ফুটবলের মার্কেট আছে। ব্যবসা করলে লাভ আসবেইÑ মনে করেন ভাস্বর। আর এ কারণেই এই লীগ বাংলাদেশে আয়োজনে আগ্রহী সেলেব্রেটি ম্যানেজমেন্ট গ্রুপ। ‘বাফুফে সভাপতি সালাউদ্দিন আশ্বাস দিয়েছেন এই আসর আয়োজনে আমাদের যত রকম সরকারী সহযোগিতা লাগবে, তা ম্যানেজ করে দেবেন। এই আসর হলে সর্বোপরি বাংলাদেশ ফুটবলের জন্যই মঙ্গলজনক।’ ভাস্বরের আশাবাদ।
×