
বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে বয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী জেলখানার খাল এখন দখলদারদের কবলে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে। সরকারি বাকেরগঞ্জ কলেজের পিছন থেকে সদর রোড হয়ে শ্রীমন্ত নদী পর্যন্ত এক কিলোমিটার খালের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে বাড়িঘর, মার্কেট দোকানপাট সহ পাকা স্থাপনা। একযুগেরও বেশি সময় ধরে প্রশাসনের নাকের ডগায় এমন ঘটনা ঘটলেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এতে খালের স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে গেছে, যার ফলে হাজার হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে চরম বিপদে পড়েছেন। খাল দখলের কারণে পানি প্রবাহিত না হতে পারায় তা জমে পচা দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে, যা পরিবেশকে মারাত্মকভাবে দূষিত করছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলা শহরের তুলাতলা নদী ও শ্রীমন্ত নদীর সংযোগ জেলা পরিষদের রেকর্ডীয় জেলাখানার খালটি পৌর এলাকার ২ ও ৩নং ওয়ার্ডের সদর রোডের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ছিল। এক সময় খালের দু’পাড়ের অসংখ্য পরিবারের সদস্যরা গোসল ও রান্নাসহ অন্যান্য কাজে খালের পানি ব্যবহার করতেন। ব্যবসায়ীরা এই খাল দিয়ে নৌকায় বিভিন্নস্থানে মালামাল পরিবহন করতো। ২০১৪ সালে জেলা পরিষদের সরকারি জেলখানার খাল দখল করে ৬৯ লাখ টাকা ব্যয়ে পৌরসভার ড্রেন নির্মাণ করেন তৎকালীন পৌরসভার মেয়র লোকমান হোসেন ডাকুয়া। এরপর থেকেই খালটির সদর রোডের অংশ দখল করে খালের দুইপাশে গড়ে তুলেছেন অবৈধ স্থাপনা, মার্কেটসহ দোকানপাট। বর্তমানে স্থানীয় প্রভাবশালীরা মাটি ও আবর্জনা ফেলে খাল ভরাট করে নিচ্ছেন দিনের পর দিন। ফলে খালের স্বাভাবিক পানি প্রবাহ অনেক আগেই বন্ধ হয়ে পড়েছে, সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা ও পরিবেশ দূষণ।
এছাড়াও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরকারি জেলখানার খালের উপর পৌরসভার তত্ত্বাবধানে একটি মসজিদ গড়ে উঠলে সেই মসজিদের নাম ব্যবহার করে মেয়র লোকমান হোসেন গড়ে তুলেছেন শপিংমল মার্কেট। যেসব মার্কেটও শপিংমলে স্টল বরাদ্দ নামে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। ২০২২ সালে ওই মসজিদের উত্তর পাশে পৌর কর্তৃপক্ষ দ্বিতীয় তলা একটি মার্কেট নির্মাণ করেন। ওই মার্কেট নির্মাণের পরে খালের পানি প্রবাহ একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। পাশাপাশি স্থানীয় দখলদাররা খাল দখলের প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
অথচ একসময় এই খাল ছিল পৌর এলাকার অন্যতম পানি নিষ্কাশনের মাধ্যম। বর্ষাকালে খালের পানি গিয়ে পড়তো নদীতে, যা বন্যা প্রতিরোধে সহায়ক ছিল। কিন্তু এখন খালের অস্তিত্বই হুমকির মুখে। প্রভাবশালীরা খালের জায়গা দখল করে ঘরবাড়ি ও দোকানপাট নির্মাণ করছেন, যে কারণে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানি জমে কয়েক হাজার পরিবার চরম দুর্ভোগে পড়েছে। পাশাপাশি বাড়ি ঘরের ময়লা আবর্জনা খালের মধ্যে ফেলে ময়লা আবর্জনায় খাল ভরাট করে রাখা হয়েছে। যে কারণে এই এলাকায় রোগ জীবাণু ছড়াচ্ছে। কিন্তু প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
স্থানীয় বাসিন্দা, শেখ মাহমুদুর রহমান রিমন জনকণ্ঠকে জানান, আওয়ামী লীগের আমল থেকে খালটি দখল শুরু হয়। এখন নতুনভাবে খালটি দখল করে ব্যক্তিগত সড়ক নির্মাণ করে নিয়েছে হাবিব হাওলাদার নামের এক ব্যক্তি। দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রশাসন যদি খাল থেকে দখলদার উচ্ছেদ না করে এলাকাবাসীর বৃহত্তম আন্দোলনে নামবে।
এ অবস্থায় এলাকাবাসী দ্রুত খালটি পূর্ণাঙ্গভাবে খনন করে দখলদারদের উচ্ছেদসহ খালের পূর্বের রূপ ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন। একইসঙ্গে খাল রক্ষায় প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে পৌর প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমানা আফরোজ জনকণ্ঠকে জানান, খালটি আমি পরিদর্শন করেছি। স্থানীয় কিছু দখলদার খালটি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করেছে। এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এসিল্যান্ডকে বলা হয়েছে দ্রুত সময়ের মধ্যে খালের রেকর্ডি সম্পত্তি চিহ্নিত করার জন্য। খুব শীঘ্রই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।
রাজু