ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৫ জুলাই ২০২৫, ১০ শ্রাবণ ১৪৩২

সিদ্ধিরগঞ্জে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগে ডিজিটাল ভূমি জরিপের দুই কর্মকর্তা ৫ ঘণ্টা অবরুদ্ধ

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ 

প্রকাশিত: ০০:২০, ২৪ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ০০:২১, ২৪ জুলাই ২০২৫

সিদ্ধিরগঞ্জে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগে ডিজিটাল ভূমি জরিপের দুই কর্মকর্তা ৫ ঘণ্টা অবরুদ্ধ

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ডিজিটাল ভূমি জরিপ কার্যক্রমকে ঘিরে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ অভিযোগে হীরাঝিল এলাকা থেকে ভূমি জরিপের সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার মো. মহসিন আলী সরদার ও সার্ভেয়ার নজরুল ইসলাম সরকার নামে দুই কর্মকর্তাকে স্থানীয় ছাত্র ও জনতা ৫ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে ছাত্র-জনতা তাদেরকে পুলিশের কাছে তুলে দেয়। বুধবার (২৩ জুলাই) দুপুরে হীরাঝিল এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটে।

জানা গেছে, প্রায় এক মাস যাবত সিদ্ধিরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ডিজিটাল ভূমি জরিপের কাজ শুরু করা হয়েছে। জরিপে জমি ও বাড়িঘর সঠিকভাবে রেকর্ড করে নিতে মালিকপক্ষ সার্ভেয়ারের দ্বারস্থ হন। তাদের দ্বারস্থ হওয়া সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ বাণিজ্য ও হয়রানি করে আসছিল অবরুদ্ধ কর্মকর্তাসহ তাদের বেশ কয়েকজন সহকর্মী। একপর্যায়ে তাদের এমন কৃতকর্মে অতিষ্ঠ হয়ে ফুঁসে উঠে স্থানীয় বাসিন্দারা।

আরও অভিযোগ রয়েছে, ডিজিটাল ভূমি জরিপের নামে নানা জটিলতা দেখিয়ে স্থানীয়দের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগকারীরা জানান, কোনো জমির কাগজপত্র ঠিক থাকলেও কর্মকর্তারা ‘সমস্যা’ দেখিয়ে টাকা দাবি করেন। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ জানাতে স্থানীয় একটি মসজিদ থেকে মাইকিং করে ভুক্তভোগীদের ডাকা হয়। এরপর অনেকেই ঘটনাস্থলে এসে তাদের অভিযোগ সাংবাদিকদের জানান।

শাহজালাল নামের এক ভুক্তভোগী বলেন, আমার সকল কাগজপত্র সঠিক থাকা সত্ত্বেও আমার কাছে ৮০ হাজার টাকা দাবি করেছিল। একপর্যায়ে তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে ৩০ হাজারে কাজ করিয়েছি। হীরাঝিল এলাকার বাসিন্দা অহিদুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, ভূমি জরিপ ক্যাম্পে গেলে জরিপের লোকজন আমার মূল দলিল না থাকায় জরিপ কাজ করা যাবে না বলে জানিয়ে দেন। পরে তারা ইঙ্গিত দেন টাকা দিলে কাজ হবে। বাধ্য হয়ে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা দিয়ে কাজ করাতে হয়।

আরেক ভুক্তভোগী মোখলেছুর রহমান জানান, জমির একটি অংশ নাকি অন্য কারও জমিতে পড়ে গেছে এই অভিযোগ তুলে তারা কাজ করতে হলে ১ লাখ টাকা লাগবে বলে জানিয়ে দেন। পরে ৩০ হাজার টাকা দিয়েই কাজটি করিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছি। আমেনা বেগম নামের আরেক ভুক্তভোগী এক নারী জানান, আমি কিডনি রোগী। আমার ছেলেকে আমি কাগজপত্র দিয়ে পাঠালে তাকে বলে আমাদের জায়গা নাকি কম আছে, এখন কাজ করতে হলে টাকা লাগবে। পরে ১০ হাজার টাকা দিয়ে করাতে হয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মেহরাব হোসেন প্রভাত জানান, বেশ কিছু দিন ধরে মানুষের মুখে মুখে আলোচিত হচ্ছিল এখানে ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ হয় না। ঠুনকো যুক্তি আর কাগজপত্রে মিথ্যা ত্রুটি দেখিয়ে জমির মালিকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে ক্ষোভ বাড়তে থাকে ভুক্তভোগীসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে। ভূমি জরিপের নামে মানুষের ভোগান্তির খবরে আজকে আমরা এসে হাতে-নাতে ধরেছি। যেখানেই অপরাধ আর দুর্নীতি হবে, সেখানেই ছাত্র-জনতা ছুটে যাবে।

এ বিষয়ে ডিজিটাল ভূমি জরিপের ঢাকা জোনের প্রধান মাহমুদ জামান জানান, আমি ঘটনাটি শুনেছি, ইতোমধ্যে আমাদের লোক পাঠানো হয়েছে। ছাত্ররা দুইজনকে থানায় নিয়ে গেছে। তাদেরকে আটক করা হয়নি। তবে এ বিষয়ে কোনো ভুক্তভোগী অভিযোগও করেননি। অভিযুক্তরা দোষী প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহীনুর আলম বলেন, ছাত্ররা দুইজনকে আটক করে আমাদের কাছে দিয়েছে। এ বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

আফরোজা

×