ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

জাতীয়

জাতীয় বিভাগের সব খবর

কারাগারে আরাম আয়েশেই রয়েছেন রাজসাক্ষী চৌধুরী মামুন

কারাগারে আরাম আয়েশেই রয়েছেন রাজসাক্ষী চৌধুরী মামুন

কারাগারে বিশেষ নিরাপত্তায় রাখা হয়েছে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে একটি মামলায় রাজসাক্ষী হওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর বৃহস্পতিবার রাতেই তাকে নেওয়া হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের বিশেষ সেলে। সেখানে তিনি এখন বেশ আরাম আয়েশেই সময় কাটাচ্ছেন। তার খাবার দাবার ও অন্যান্য সুবিধাও বাড়ানো হয়েছে। বলা চলে- কারাগারে এখন তার নতুন জীবন শুরু হয়েছে। উল্লেখ্য, জুলাই বিপ্লব চলাকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলায় স্বেচ্ছায় রাজসাক্ষী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করায় বৃহস্পতিবার সেটা আদালত গ্রহণ করেন। আইনের পরিভাষায় যাকে বলা হয়- ‘অ্যাপ্রুভার’ বা রাজসাক্ষী। একটি মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তিনি নিজে আসামি হলেও এখন থেকে তিনি আর আসামি নন। রাজসাক্ষী হিসেবে বিশেষ সুযোগ সুবিধা পাবেন। কারা বিধি অনুযায়ী তাকে সেই সুিবধাই নিশ্চিত করা হচেছ বৃহস্পতিবার রাত থেকে।  জানতে চাইলে কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মোহাম্মদ মোতাহার হোসেন  দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, রাজসাক্ষী হবার পর কারাগারের বিধিমোতাবেক তিনি নিরাপত্তাসংক্রান্ত সুবিধা পাচ্ছেন। তাকে সেটাই নিশ্চিত করা হয়েছে। যেহেতু আদালতের নির্দেশ-সেভাবেই পালন করা হয়েছে।  বিশেষ নিরাপত্তা বলতে কি বোঝায় এমন প্রশ্ন করা হলে আইজি প্রিজন বলেন, উনাকে (চৌধুরী মামুন) রাত থেকেই আগের কারাকক্ষ থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে পৃথক কক্ষে, যেখানে তিনি একাকী থাকবেন। যেখানে তিনি নিরাপদবোধ করবেন, সেখানেই তাকে রাখা হবে। এটাই নিয়ম। কারাগারে তো আলাদা জায়গা আছে এ ধরনের প্রয়োজনে। তাকে বিশেষ সুযোগ সুবিধা বলতে জেলকোড অনুযায়ী যা যা পাবার তিনি সেটাই পাবেন। এর আগে বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে আব্দুল্লাহ আল-মামুন অপরাধের দায় স্বীকার করেন এবং রাজসাক্ষী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলে আদালত সেটা আমলে নেয়। মুহূর্তেই সে খবর ছড়িয়ে পড়ায় এখন তিনি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুুতে। দেশের প্রচলিত কারা আইনে রাজসাক্ষীদের প্রাপ্ত সুবিধাদি সম্পর্কে জনমনে কৌতূহল সৃষ্টি করে। এতে অনেক গণমাধ্যমকর্মী সন্ধ্যায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে  জড়ো হয়ে জানতে চায় সাবেক আইজিপির বর্তমান হাল হকিকত সম্পর্কে। কারাসূত্র জানায়, আদালত থেকে কড়া নিরাপত্তায় কারাগারের নেওয়ার সময়েই নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় পড়েন তিনি। সেটা অনুধাবন করতে পেরে কারা কর্তৃপক্ষও সতর্ককতামূূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এমনকি সন্ধ্যায় কারাগার কর্তৃপক্ষ থেকে গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে জানানো হয়- আদালত থেকে কোনো নির্দেশনা এখন পর্যন্ত তারা পায়নি। নির্দেশনা পেলে পরবর্তীতে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে কারা অধিদপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া ও উন্নয়ন) মো. জান্নাত-উল ফরহাদ গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, সবার অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, সাবেক আইজিপি আব্দুল্লাহ আল-মামুনের বিষয়ে আদালতের কোনো নির্দেশনা পাওয়া গেলে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারা কর্তৃপক্ষ রাত পর্যন্ত কোনো আদেশ পায়নি। বৃহস্পতিবার দুপুরে অভিযোগ গঠনের আদেশের সময় ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক প্যানেলে দায় স্বীকার করেন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। এসময় ট্রাইব্যুনাল তার রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ দেন। এরপর জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে তিনি তার লিখিত বক্তব্যে আদালতকে জানান, যারা এ অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত তাদের মুখোশ উন্মোচন করতে চান তিনি। এ সময় চৌধুরী মামুনের আইনজীবী জায়েদ বিন আমজাদ সাবেক পুলিশপ্রধানের পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার জন্য প্রার্থনা করেন। ট্রাইব্যুনাল এ বিষয়ে যথাযথ আদেশ দেবেন বলে জানান চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশাপাশি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন আসামি হিসেবে রয়েছেন। আসামিদের মধ্যে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান  ভারতে পলাতক। জানা গেছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে কেরানীগঞ্জ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়ার পর পাশের একটি বিশেষ কারাগারে একক সেলে রাখা হয়ে তাকে। এতদিন তিনি কারাগারে বন্দি সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও আওয়াামী লীগ নেতাদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করতে পারতেন। কিন্তু মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রাজসাক্ষী হওযার পর তাকে কারাগারের পৃথক সেলে রাখা হয়। নিরাপত্তাঝুঁকি বিবেচনায় এখন থেকে তিনি একক সেলেই থাকবেন। চৌধুরী মামুনকে আদালত থেকে কারাগারে নেওয়ার পর নিরাপত্তার কারণে বিশেষ কারাগারে আলাদা কক্ষে রাখা হয়। তার সঙ্গে চাইলেই অন্য কোনো বন্দি দেখা-সাক্ষাৎ করতে পারবেন না। তার নিরাপত্তার দিকেও সজাগ দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। তবে বৃহস্পতিবার রাত থেকেই তাকে ভালো মানের খাবার দেওয়া হচ্ছে। তিনি যা খেতে চাইছেন, তাই দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি তার ব্যবহৃত পোশাক ও অন্যান্য জিনিসপত্রও প্রদানেও বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে। আ্ইনের ভাষায়- কোনো অপরাধের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত বা সে সম্পর্কে গোপন তথ্যের অধিকারী কোনো ব্যক্তি ক্ষমা পাওয়ার শর্তে অপরাধের সমগ্র ঘটনা, মূল অপরাধী ও সহায়তাকারী হিসেবে জড়িত সকল অপরাধী সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ও সত্য ঘটনা প্রকাশ করে বিজ্ঞ আদালতে যে সাক্ষ্য প্রদান করে তাকে ‘অ্যাপ্রুভার’ বা রাজসাক্ষী বলা হয়ে থাকে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৩৭, ৩৩৮ ধারা এবং সাক্ষ্য আইনের ১৩৩ ধারায় এ সম্পর্কে বলা আছে। রাজসাক্ষী হবার সুবিধা হিসেবে আইনে বলা আছে- রাজসাক্ষী হওয়ায় সাবেক আইজিপি মামুনকে আদালত সাধারণত ক্ষমা করে দিতে পারে অথবা তার শাস্তির মেয়াদ কমানো হতে পারে। এ ছাড়া তাকে বিচার থেকে অব্যাহতি দেওয়া হতে পারে। এ ধরনের কারাবন্দি বা রাজসাক্ষীকে অনেক সময় নিরাপত্তা প্রদান করা হয়। কারণ তিনি অন্য আসামিদের দ্বারা হুমকির সম্মুখীন হতে পারেন। কিছু ক্ষেত্রে রাজসাক্ষীকে অন্যান্য কিছু আইনি সুবিধাও দেওয়া হতে পারে, যা বিচারক পরিস্থিতি বিবেচনা করে নির্ধারণ করেন। তবে রাজসাক্ষীর জবানবন্দি অবশ্যই সত্য হতে হবে এবং তা অন্যান্য সাক্ষ্য-প্রমাণের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে। যদি রাজসাক্ষী মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়, তবে তার এই সুবিধা বাতিল হয়ে যেতে পারে এবং তাকেও আসামির মতো বিচারের সম্মুখীন হতে হয়। ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গঠন করার পর এটাই প্রথম কোনো মামলায় রাজসাক্ষী হওয়ার নজির তৈরি হয়েছে। এর  আগে সে সময় গ্রেনেড হামলা মামলায় মুফতি হান্নানকে রাজসাক্ষী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অপর একটি মামলায় তার মৃত্যুদন্ড হওয়ায় আর রাজসাক্ষী করার উপায় ছিল না। তারপর চৌধুরী মামুনই প্রথম আইসিটির আসামি যাকে রাজসাক্ষী করা হয়েছে। এটাই এখন ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’তে পরিণত হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে এ নিয়ে ব্যাপক কৌতূহলী আলোচনা সমালোচনা চলছে।  

বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচ

বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচ

জুলাইয়ের দিনগুলো যত বাড়তে থাকে কোটাবিরোধী আন্দোলন ততই ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। দেশের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে কোটা প্রথা বাদ দিলেও দীর্ঘ ছয় বছর পর আবারও একটি কোটা আন্দোলন শুরু হয় ২০২৪ সালের জুলাই মাসে। এই আন্দোলনে দেশের লাখ লাখ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। কোটা বাতিলের দাবিতে জুলাইয়ের ১ তারিখ থেকে ১১ তারিখ পর্যন্ত অবরোধ, বিক্ষোভ, ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন, সকাল-সন্ধ্যা বাংলা ব্লকেডসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, সাত কলেজসহ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ ও ছাত্রলীগের যৌথ হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে বিকেলে শাহবাগ মোড়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলনকারীরা। এক দফা দাবিতে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। দাবিটি হলো- সরকারি চাকরির সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লেখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ন্যুনতম (সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ) পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাস করে কোটা পদ্ধতিকে সংস্কার করতে হবে। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের হামলার প্রতিবাদে ১২ জুলাই বিক্ষোভ মিছিল, অবস্থান কর্মসূচি ও মশাল মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। এদিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট), রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) ও রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলপথ অবরোধ করে রাখেন। আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, হাইকোর্টের আংশিক রায়ে একটি বিষয় পরিষ্কার হয়েছে। হাইকোর্টের আংশিক রায়ে বলা হয়েছে, সরকার চাইলে কোটার সংস্কার করতে পারে। এ বিষয়টিই আজ স্পষ্ট হয়েছে। যদি তাই হয়, তাহলে শেকৃবিতে কেন লাঠিচার্জ করা হলো? শাবিপ্রবিতে হামলা করা হয়েছে, চবিতে নারী শিক্ষার্থীদের ওপর নারী পুলিশ হামলা করেছে, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা হয়েছে, রাবিতে ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। মাভাবিপ্রবিসহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা করা হয়েছে। যারা হামলা করেছে তারা অতি উৎসাহী। সেই পুলিশদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।  ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা, ১০ শতাংশ নারী কোটা, অনগ্রসর জেলার বাসিন্দাদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ আসন সংরক্ষিত ছিল। ওই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে বড় বিক্ষোভ হয়। তখনও আন্দোলন দমাতে আন্দোলনকারীদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালায় শেখ হাসিনা সরকার, ছাত্রলীগ ও পুলিশ। এ সময় কোটা ব্যবস্থার সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ কোটা থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। পরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে দাবি মানতে বাধ্য হয় সরকার। ফলে ওই বছরের ৪ অক্টোবর কোটা পদ্ধতি বাতিল বিষয়ক পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এর মাধ্যমে ৪৬ বছর ধরে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে যে কোটা ব্যবস্থার বৈষম্য ছিল, তা বাতিল হয়ে যায়।  পরে ২০২১ সালে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উচ্চ আদালতে রিট করেন। সেই রিটের রায়ে ২০২৪ সালের ৫ জুন পরিপত্রের ওই অংশ অবৈধ ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকেই চাকরিপ্রত্যাশী সাধারণ শিক্ষার্থীরা ফুঁসে ওঠেন। কোটা বাতিলের দাবি জানিয়ে সঙ্গে আরও কয়েকটি দাবি যুক্ত করেন তারা। ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা পরিপত্র পুনর্বহালের পাশাপাশি মোট চার দফা দাবি জানান।  দাবিগুলো হল- পরবর্তী সময়ে সরকার কোটাব্যবস্থা নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নিতে চাইলে ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দেওয়া, সংবিধান অনুযায়ী অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা, চাকরির নিয়োগের পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করার সুযোগ বন্ধ করা ও কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোয় মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া এবং দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া।

দল গোছাচ্ছে উজ্জীবিত বিএনপি

দল গোছাচ্ছে উজ্জীবিত বিএনপি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সারাদেশের সর্বস্তরে দল গোছাচ্ছে উজ্জীবিত বিএনপি। নির্বাচনের আগেই সব কমিটি পুনর্গঠনের কাজ শেষ করে ভোটের মাঠে শক্তি বৃদ্ধির কৌশল নিয়েছে দলটি। এ জন্য দলের সিনিয়র নেতারা তৎপর। অধিকাংশ সিনিয়র নেতাই দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকার কমিটি পুনর্গঠনের কাজ এগিয়ে নিতে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন।  সূত্র মতে, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে নির্বাচনের টার্গেট করে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে বিএনপি। এ জন্য এ বছর ডিসেম্বরের মধ্যেই সারাদেশের সকল পর্যায়ের দলীয় কমিটি পুনর্গঠনের কাজ শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।  উল্লেখ্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলন দীর্ঘদিন রাজনৈতিকভাবে বেকায়দায় থাকা বিএনপিকে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দিয়েছে। এ আন্দোলনের কারণে গতবছর আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ দলের সর্বস্তরের কারাবন্দি নেতাকর্মীরা মুক্তি পেয়েছেন। এছাড়া যারা দীর্ঘদিন আত্মগোপনে কিংবা বিদেশে ছিলেন, তারাও রাজনীতিতে ফিরে এসেছেন। এক পর্যায়ে তারা সবাই দলীয় রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন। সম্প্রতি রাজধানীতে বড় ধরনের সমাবেশ করে দলের রাজনৈতিক শক্তিও প্রদর্শন করেছে বিএনপি।  সূত্র জানায়, বিএনপির সামনে এখন প্রধান লক্ষ্য দল গুছিয়ে পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি জোরদার করা। এ জন্য যা যা করণীয় তাই এখন দলের নেতাকর্মীরা করছেন। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটির নেতাকর্মীদের মনোবল এখন চাঙ্গা। তাই দলের যে কোনো কর্মসূচিতে এখন তাদের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।  এদিকে সারাদেশে পুরোদমে দল গোছানোর কাজ এগিয়ে চলায় বিএনপির অধিকাংশ নেতাকর্মী চায় জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে  যেন দলের নতুন নির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়। তবে দলীয় হাইকমান্ড কি চান, তার ওপর নির্ভর করবে সংসদ নির্বাচনের আগে জাতীয় কাউন্সিল হবে কি হবে না, আর হলেও কখন হবে। দলের একটি অংশ চায় আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই যেন বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল হয়। কারণ, প্রায় সাড়ে ৯ বছর ধরে বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল হচ্ছে না।  বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুসারে ৩ বছর পর পর জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আরপিও (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ) অনুসারেও ৩ বছরের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর জাতীয় কাউন্সিল করার বিধান রয়েছে। কিন্তু প্রায় সাড়ে ৯ বছর আগে জাতীয় কাউন্সিল করা হলেও তারপর আর কাউন্সিল করা হয়নি। দল পুনর্গঠনের জন্য জাতীয় কাউন্সিল একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। বিভিন্ন কারণে জাতীয় কাউন্সিল করতে না পারায় এখনো মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়েই চলছে বিএনপি। তবে মাঝেমধ্যেই ৫৯২ সদস্যের আগের কমিটিতে শূন্য থাকা পদগুলোর বিপরীতে কিছু পদ পূরণ করা হয়। আরও কিছু পদ পূরণের জন্যও কিছু নেতার নাম সামনে এসেছে বলে জানা যায়।  বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ অনুষ্ঠিত সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিলের পর দলের যে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়, সে কমিটির দুই শতাধিক নেতা এক পর্যায়ে দলে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। যদিও আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের পর এখন তাদের মধ্যে কেউ কেউ আবার দলে সক্রিয় হয়েছেন। তবে দল পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে জাতীয় কাউন্সিল হলে নতুন নির্বাহী কমিটিতে আগের কমিটির শতাধিক নেতা বাদ পড়বেন। এ ছাড়া প্রায় ৫০টির মতো পদ এখনো শূন্য রয়েছে। তাই নতুন কমিটিতে দেড় শতাধিক পদে স্থান পাওয়ার সুযোগ পাবে অন্য নেতারা। তবে জাতীয় কাউন্সিল না হলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বর্তমান কমিটির বিভিন্ন শূন্য পদে আরও কিছু নেতাকে স্থান দেওয়া হতে পারে বলে সূত্র জানায়।  প্রসঙ্গত, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অসুস্থ থাকায় দলের সার্বিক কর্মকা- এখন নিয়ন্ত্রণ করছেন লন্ডন প্রবাসী ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি নিয়মিত দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করে এবং স্থায়ী কমিটির সদস্যদের পরামর্শ নিয়ে তারেক রহমান দলের জন্য বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এ ছাড়া দল গোছানোর অংশ হিসেবে তিনি এখন সারাদেশের সকল পর্যায়ের নেতার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন বলে জানা যায়।  আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দলের জন্য বৈরী পরিবেশ বিরাজ করায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগে জাতীয় কাউন্সিলের বিষয়ে তেমন আগ্রহী না হলেও দেশের বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তিনিও এখন কাউন্সিলের বিষয়ে আগ্রহী হবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। তাই কাউন্সিলের আগে সারাদেশে দলের সর্বস্তরের কমিটি পুনর্গঠন কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে দলের জাতীয় কাউন্সিল হবে ধরে নিয়ে বর্তমান কমিটিতে না থাকা বিএনপির পরবর্তী কমিটিতে স্থান পেতে আগ্রহী দুই শতাধিক নেতা দৌড়ঝাঁপ করছেন বলে জানা যায়।  তবে জাতীয় কাউন্সিল হোক আর না হোক ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সর্বস্তরে নেতাকর্মীদের চাঙা করতে সারাদেশের সকল ইউনিটে কমিটি পুনর্গঠনের কাজ চলছে বলে দলীয় নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন। প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো ইউনিট কমিটি পুনর্গঠন করা হচ্ছে। অধিকাংশ ইউনিট কমিটি প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমেই করা হচ্ছে।  এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান জনকণ্ঠকে জানান, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এখন আমাদের প্রধান কাজ দল গোছানো। সর্বস্তরে দল গুছিয়ে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি জোরদার করতে হবে। তাই সর্বস্তরে দল পুনর্গঠনের কাজ পুরোদমে চলছে। বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী জনকণ্ঠকে বলেন, দলের কমিটি পুনর্গঠনের কাজ এগিয়ে চলছে। যথাসময়েই সারাদেশের সকল পর্যায়ে দলের কমিটি পুনর্গঠনের কাজ শেষ হবে।   অভিজ্ঞ মহলের মতে, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ছেড়ে আসার পর থেকেই বিভিন্ন কারণে রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা ছিল বিএনপি। বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর ওয়ান-ইলেভেনের সরকারের বৈরী আচরণের কারণে নবম জাতীয়  সংসদ নির্বাচনে অংশ নিলেও কাক্সিক্ষত সফলতা অর্জন করতে পারেনি। যে কারণে এ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলেও জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের আসনে থাকতে হয় বিএনপিকে। ওয়ান-ইলেভেন সরকারের ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগ সরকারও বিএনপির ওপর বৈরী আচরণ শুরু করে। এ কারণে রাজপথে আন্দোলন করতে গিয়ে ভালোভাবে দল  গোছানোর কাজ করতে পারেনি বিএনপি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে আওয়ামী লীগ সরকারের আরও বেশি রোষানলে পড়ে বিএনপি।  আর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিলেও দিনের ভোট আগের দিন রাতে নিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উত্থাপন করে ভোটের দিন নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয় বিএনপি। এ নির্বাচনের পর বিএনপির ওপর তৎকালীন সরকারের মামলাসহ বিভিন্নভাবে হয়রানি বৃদ্ধি পেলেও সব উপেক্ষা করে বিএনপি আস্তে আস্তে আন্দোলন জোরদার করতে সক্ষম হয়। গতবছর জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে বিএনপিও রাজপথে অধিকতর সক্রিয় হয়। উত্তাল আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে প্রায় ১৯ বছর পর বিএনপির জন্য রাজনৈতিক পরিবেশ অনুকূল হয়। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে সর্বস্তরে দল গুছিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি জোরদার করছে বিএনপি। 

চুক্তি ছাড়াই পরিচালিত হচ্ছে ইসির ভোটার  নিবন্ধন ব্যবস্থা

চুক্তি ছাড়াই পরিচালিত হচ্ছে ইসির ভোটার  নিবন্ধন ব্যবস্থা

বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে বাংলাদেশ ভোটার রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম (বিভিআরএস) পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু এই সিস্টেম পরিচালনায় নিজস্ব দক্ষ জনবল না থাকায় তৃতীয় পক্ষ হিসেবে প্রযুক্তি সহযোগী প্রতিষ্ঠান আইবিসিএস-প্রাইম্যাক্স সফটওয়্যার (বাংলাদেশ) লিমিটেডের মাধ্যমে সিস্টেমটি পরিচালনা করছে ইসি। তবে কোম্পানিটির সঙ্গে বৈধ কোন চুক্তি ছাড়াই বর্তমানে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এক্ষেত্রে নতুন ভোটার নিবন্ধন, তথ্য সংশোধন এবং বায়োমেট্রিক আপডেটের মতো ইসি’র দৈনন্দিন গুরুত্বপূর্ণ সেবা কার্যক্রমে বিলম্ব হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে প্রকল্প সূত্র বলছে, সিস্টেম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান চুক্তির শর্ত না মানায় একটি স্থবিরতা তৈরি হলেও সার্বিকভাবে সুরক্ষিত আছে ভোটার নিবন্ধন ব্যবস্থা। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা যায়, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) আওতাধীন আইডেনটিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং একসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ-২) প্রকল্পের অধীনে বিভিআরএস নামক এপ্লিকেশনটি পরিচালিত হয়। এক্ষেত্রে ইসি’র কারিগরি সহায়তায় রয়েছে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইবিসিএস-প্রাইম্যাক্স লিমিটেড। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে ইসি’র করা চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে জুন ২০২৪। এখনো পর্যন্ত নতুন করে নবায়ন চুক্তি বা  অন্য কোনো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর বা বিকল্প কোনো ভেন্ডর নিয়োগ হয়নি। এতে প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। চুক্তি নবায়ন না হওয়ায় নির্বাচন কমিশনের দৈনন্দিন কাজকর্মে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। নতুন ভোটার নিবন্ধন, তথ্য সংশোধন এবং বায়োমেট্রিক আপডেটের মতো গুরুত্বপূর্ণ সেবা কার্যক্রম বিঘিœত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এর পাশাপাশি, জাতীয় পরিচয় যাচাই এবং নাগরিক শনাক্তকরণ সেবা- যা ১৮০টিরও বেশি সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত হচ্ছে- তাতেও ব্যাঘাত ঘটতে পারে। এর ফলে সাধারণ নাগরিকদের ওপর সরাসরি ও পরোক্ষভাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ভবিষ্যতের জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকা প্রস্তুতের কাজেও বিলম্বের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে সার্ভার, স্টোরেজ, নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণে জটিলতা বাড়ছে, যা কোনো কোনো ক্ষেত্রে সিস্টেম বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে। ইসি সূত্রে জানা গেছে, চুক্তির মেয়াদ শেষ হলেও কমিশনের অনুরোধে আইবিসিএস-প্রাইম্যাক্স এখনো কারিগরি সহায়তা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং প্রযুক্তিগত সেবা অব্যাহত রেখেছে। অপরদিকে কোম্পানির একজন কর্মকর্তা বলেন, আমরা ইসির অনুরোধে এখনো সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি, যদিও আমাদের আনুষ্ঠানিক চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে। চুক্তি নবায়নের বিলম্বের ফলে প্রশাসনিক, আর্থিক ও প্রযুক্তিগত দিক থেকে নানা শঙ্কা তৈরি হয়েছে। কোম্পানির দাবি, তারা সব চুক্তিভিত্তিক কাজ শেষ করেছে, তবে প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি এখনো হয়নি- মূলত দীর্ঘায়িত হ্যান্ডওভার ও নলেজ ট্রান্সফার প্রক্রিয়ার কারণে, যা চুক্তির আওতাভুক্ত ছিল না। আইবিসিএস-প্রাইম্যাক্স’র একজন কর্মকতা বলেন, বর্তমান হস্তান্তর পদ্ধতি বাস্তবসম্মত নয়। বুয়েটের পরামর্শে পরিচালিত প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ ও জটিল হয়ে উঠেছে এবং মূল কাজের পরিধির সঙ্গেও এটি সঙ্গতিপূর্ণ নয়। অংশীজনরা জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশনের মধ্যে জটিল সিস্টেম পরিচালনার মতো পূর্ণাঙ্গ কারিগরি দক্ষতা এখনো গড়ে ওঠেনি। কমিশনের কিছু অভিজ্ঞ কর্মকর্তা থাকলেও, পূর্ণাঙ্গভাবে বিভিআরএস পরিচালনার জন্য যে স্তরের দক্ষতা প্রয়োজন, তা এখনো সীমিত। ২০০৭ সালে চালু হওয়া বিভিআরএস দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যভা-ার। এটি ব্যাংকিং, পেনশন, সিম নিবন্ধন, নির্বাচনসহ ১৮০টিরও বেশি সেবামূলক কার্যক্রমে ভূমিকা রাখে। সঠিক ভোটার তালিকা প্রস্তুতের মাধ্যমে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে এই সিস্টেমের গুরুত্ব অপরিসীম। ২০১৯ সালে প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রে জয়লাভ করে আইবিসিএস-প্রাইম্যাক্স বিভিআরএস পরিচালনার দায়িত্ব পায়। তারা ব্যয়বহুল ওরাকল-ভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম বাদ দিয়ে উন্মুক্ত সফটওয়্যারভিত্তিক একটি সাশ্রয়ী ও কার্যকর সিস্টেমে রূপান্তর করে, যার ফলে সরকার প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ লাইসেন্স ব্যয় সাশ্রয় করতে পেরেছে। ইসি ইতোমধ্যে চুক্তির তিন-চতুর্থাংশ অর্থ পরিশোধ করেছে। বাকি এক-চতুর্থাংশ অর্থ- যার পরিমাণ প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা- এখনো বকেয়া রয়েছে। চুক্তি নবায়ন প্রসঙ্গে আইবিসিএস-প্রাইম্যাক্স কোম্পানির পরিচালক কাজী আশিকুর রহমান বলেন, ভবিষ্যতে পরিষেবার কোনো ব্যাঘাত এড়াতে আমরা বারবার কর্তৃপক্ষকে প্রকল্পটি দ্রুততম সময়ের মধ্যে অধিগ্রহণের জন্য অনুরোধ জানিয়ে আসছি। আমাদের প্রত্যাশা নির্বাচন কমিশন জাতির সর্বোত্তম স্বার্থে সেই অনুযায়ী কাজ করবে। এ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনের আইডিইএ-২ প্রকল্পের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ গোলাম আজিজুর রহমান সিদ্দিকী দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, ন্যাশনাল আইডি উইংয়ের অধীনে নির্বাচন কমিশন প্রকল্পের জন্য আইবিসিএস-প্রাইম্যাক্স সফটওয়্যার লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি শেষ হয়নি, বরং এটি ২০২৬ সালের ৩০শে জুন পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। তবে, টাইগার আইটির সঙ্গে চুক্তি গত ৩০ জুন ২০২৪ তারিখে শেষ হয়ে গেছে। টাইগার আইটির সঙ্গে সম্পন্ন চুক্তির অনেক ডেলিভারি (যেমন: প্রশিক্ষণ,  সক্ষমতা তৈরি, ভিআরএস ইন্টিগ্রেশন, ইত্যাদি) পূরণ করতে না পারায় চুক্তিটি এখনো ক্লোজ করা হয়নি এবং তাদের সঙ্গে চুক্তি সমাপ্তির  বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে যা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত টাইগার আইটির সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করা যাবে না। তিনি বলেন, ইসির নিজস্ব জনবলের এখনো কোডিং এবং বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ভাষায় সিস্টেম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা তৈরি হয়নি। নিজেদের সক্ষমতা তৈরি না করে কিংবা অন্য কোনো উপায় বের না করে সম্পূর্ণ দায়িত্ব বুঝে নিলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের সমস্যা বা ভাবমূর্তির সংকট দেখা দিতে পারে। তবে চুক্তিতে ইসির নিজস্ব জনবলকে দক্ষ করে তোলার বিষয়টি উল্লেখ আছে। সিস্টেমের ঝুঁকির বিষয়ে তিনি আশ্বস্ত করেন যে, বর্তমানে সিস্টেমে কোনো সমস্যা বা দুর্বলতা নেই এবং কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল। সিস্টেমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং ভবিষ্যতে কোনো দুর্ঘটনা এড়াতে তারা সার্বক্ষণিক খেয়াল রাখছেন।

মোদির জন্য আম  পাঠিয়েছেন  ড. ইউনূস

মোদির জন্য আম  পাঠিয়েছেন  ড. ইউনূস

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষ থেকে বিখ্যাত হাঁড়িভাঙা আম প্রতিবেশী দেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে উপহার হিসেবে পাঠানো হচ্ছে। দিল্লিতে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাসের একটি সূত্র জনকণ্ঠের কাছে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। আমের চালান এরইমধ্যে সীমান্ত পেড়িয়ে দিল্লিতে পৌঁছে গেছে, খুব শীঘ্রই সেটি প্রধানমন্ত্রী মোদির বাসভবন সাত নম্বর লোককল্যাণ মার্গে পাঠানো হবে বলেও জানা গেছে। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে সম্প্রতি শীতলতার আভাস দেখা গেলেও দুই দেশের সরকার-প্রধানের মধ্যে যে কূটনৈতিক সৌজন্য ঠিকই বজায় আছে, এই প্রীতি উপহার তারই প্রমাণ। কয়েকদিন আগেই মোদির নিজের রাজ্য গুজরাটে একটি সেতু ভেঙে পড়ে বহু মানুষ হতাহত হলে প্রধান উপদেষ্টা নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখে শোক জ্ঞাপন করেছিলেন ড. ইউনূস। এর আগে গত মাসে কোরবানির ঈদের সময় প্রধানমন্ত্রী মোদিও ড. ইউনূসকে চিঠি পাঠিয়ে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।  প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর সশরীরে  প্রধানমন্ত্রী  মোদির সঙ্গে  বৈঠক হয়। যা হয়েছিল বিমসটেক সম্মেলনের এক সাইড লাইনে। প্রায় ১ ঘণ্টা অপেক্ষা করে মোদি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন। প্রসঙ্গত, আমের মৌসুমে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশের আম উপহার পাঠানোর এই রেওয়াজ শুরু করেছিলেন পালিয়ে যাওয়া তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হাসিনার পতনের পর ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তী সরকারও সেই কূটনৈতিক পরম্পরা বজায় রেখেছে। শেখ হাসিনা অবশ্য শুধু দিল্লি তো ই নয়, ভারতে বাংলাদেশের দুই প্রতিবেশী রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীদের আম পাঠাতেন। ড. ইউনূসের আমলে এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বৃহস্পতিবার ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য সরকার ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য উপহার হিসেবে ৩০০ কেজি রংপুরের বিখ্যাত হাঁড়িভাঙা আম পাঠিয়েছেন বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।  জানা গেছে, প্রতিবছর ত্রিপুরার রাজ্য সরকার ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য উপহার সামগ্রী পাঠায় বাংলাদেশ সরকার। অন্যদিকে বাংলাদেশ সরকারের জন্যও উপহার হিসেবে আসে ত্রিপুরার বিখ্যাত এবং রসালো কুইন জাতের আনারস।

ফেনীতে নতুন  নতুন এলাকা প্লাবিত

ফেনীতে নতুন  নতুন এলাকা প্লাবিত

ফেনীতে বন্যার পানি একদিকে যেমন নামছে অন্যদিকে তেমনি বাড়ছে। জেলার মুহুরী, সিলোনিয়া ও কহুয়া নদীর ২১টি ভাঙা স্থান দিয়ে পানি প্রবেশ অব্যাহত থাকায় প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। ফুলগাজীতে মাছ ধরতে গিয়ে একজন মারা গেছেন। এদিকে, চারদিন ভারি বৃষ্টির পর নোয়াখালীতে দেখা মিলেছে রোদের। বৃষ্টির বিরতিতে স্বস্তি ফিরলেও জলাবদ্ধতা ও বন্যা পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি। জেলা সদর, সুবর্ণচর, কোম্পানীগঞ্জ, কবিরহাটসহ বিভিন্ন উপজেলার অনেক গ্রাম এখনো পানির নিচে। এ ছাড়া, খাগড়াছড়িতে বৃষ্টি কমে আসায় মাইনী নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে মেরুংবাজার, সোবহানপুর, চিটাগাংপাড়া, কবাখালীসহ বিভিন্ন নিম্নঞ্চল থেকে ধীরে ধীরে পানি নামছে। খবর নিজস্ব সংবাদদাতা ও পার্বত্যাঞ্চল প্রতিনিধির। ফেনীতে বন্যার পানি একদিকে নামছে অন্যদিকে বাড়ছে। জেলার মুহুরী, সিলোনিয়া ও কহুয়া নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও ২১টি ভাঙা স্থানে পানি প্রবেশ অব্যাহত থাকায় প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। ফেনী সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে প্লাবিত হতে শুরু করে। মোটবী ইউনিয়নের ইজ্জতপুর উচ্চবিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রে ওই রাতে ১৬টি পরিবারের ৫০জন আশ্রয় নিয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। প্লাবিত হয়েছে তিন উপজেলার ১১৪টি গ্রাম।  ফুলগাজী ও পরশুরামের বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হলেও অবনতি হয়েছে ফেনী সদর ও ছাগলনাইয়া উপজেলার। এখনো পানিবন্দি শতাধিক গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ। বন্যাদুর্গত এলাকায় কাজ করছে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এদিকে, ফুলগাজীতে বন্যার পানিতে মাছ ধরতে গিয়ে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। নিহত ব্যক্তি উপজেলার দৌলতপুর বন্দুয়ার বাসিন্দা।  ফুলগাজী ও পরশুরামের পানি নামতে থাকায় আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরছে মানুষ। তবে, নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে ফেনী সদর ও ছাগলনাইয়া উপজেলা বিভিন্ন ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম। এতে করে পানিতে তলিয়ে আছে মানুষের ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র ফসলি জমি। ভেসে গেছে শত শত পুকুরের মাছ।  স্থানীদের অভিযোগ, গত বছরের বন্যার ক্ষত কাটিয়ে না উঠতেই আবার বন্যার কবলে পড়ে এবার নিঃস্ব হয়েছি। এদিকে, বন্যায় বাড়ির ছাদে আশ্রয় নিলেও পোকামাকড় আর সাপের উপদ্রবে আতঙ্কে দিন পার করছেন বানভাসিরা। সামরিক বেসামরিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। বানবাসী মানুষ ত্রাণ সহায়তা চায় না। তারা চায় টেকসই বাঁধ নির্মাণ। তারা টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে স্থায়ী সমাধান চায়।  জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, ফেনীর বন্যা কবলিত পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া (আংশিক), ফেনী সদর (আংশিক) ও দাগনভূঞা (আংশিক) উপজেলার ১১৪টি গ্রামের জনগণের দুর্ভোগ কমাতে সকল অংশীজনের সহযোগিতায় কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। ৮২টি আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় ৯ হাজার ২০০ মানুষ অবস্থান করছেন। পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় দুর্যোগে সবচেয়ে নাজুক গর্ভবতী নারী ও অসুস্থ ১৮ জনকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবকদের সহযোগিতায় উদ্ধার করা হয়েছে। অপরদিকে বন্যাদুর্গত এলাকায় আটকেপড়া মানুষদের উদ্ধার তৎপরতা ও রান্না করা খাবার এবং তাদের ত্রাণ সহায়তায় সম্মিলিত কাজ করে সেনা, বিজিবি ও পুলিশ সদস্যরা। টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ২১টি স্থান ভেঙে ১১৪ গ্রাম প্লাবিত হয়। নোয়াখালী ॥ টানা চার দিনের ভারি বৃষ্টিপাত শেষে নোয়াখালীতে দেখা মিলেছে রোদের। শুক্রবার সকাল থেকেই আকাশ পরিষ্কার হয়ে আসে। রোদের ঝলকানিতে খানিকটা স্বস্তি ফিরেছে সাধারণ মানুষের মনে। এদিকে, বৃষ্টির বিরতিতে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেও জলাবদ্ধতা ও বন্যা পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি। ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ও বাজার-হাটে থৈ থৈ পানি। দুর্ভোগে রয়েছেন পানিবন্দি  লাখো মানুষ। জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, নোয়াখালীর পৌরসভাগুলোতে জলাবদ্ধতা দীর্ঘদিনের সমস্যা। যা অপরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণ, খাল ও ড্রেনগুলো দখলের কারণে সৃষ্টি হয়েছে। এসব ড্রেন ও খালগুলো পুনরুদ্ধারে পৌরসভাকে বারবার নির্দেশনা দিয়েছি। পানি উন্নয়ন বোর্ড ১৯টি খাল চিহ্নিত করেছে যা পুনরুদ্ধারে ব্যবস্থা নেবে এবং বিএডিসির প্রকল্পের আওতায় ১৭১ কিলোমিটার খাল খননের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। আশা করা যাচ্ছে কাজগুলো বাস্তবায়ন হলে দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতার সমস্যা নিরসন হবে। আকাশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি কেটে যাবে বলে আশা করছি। খাগড়াছড়ি ॥ টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার মেরুং ইউনিয়নে। টানা পাঁচদিন পর শুক্রবার সকাল থেকে সূর্যের মুখ দেখা যাওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে দুর্গত মানুষের মধ্যে। বৃষ্টি কমে আসায় নিম্নঞ্চলের বিভিন্ন গ্রাম থেকে ধীরে ধীরে পানি নামছে। যদিও কিছু স্থানে এখনো জলাবদ্ধতা রয়েছে, তবে স্থানীয়রা ঘরবাড়ি মেরামত ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করেছেন। বন্যার কারণে দীঘিনালা-লংগদু সড়কে তিনদিন যান চলাচল ব্যাহত হলেও পানি কমায় এখন সব ধরনের যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে। ফলে, লংগদুর সঙ্গে খাগড়াছড়ি ও দেশের অন্যান্য এলাকার সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রেখেছে। আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা পরিবারগুলোকে শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুজন চন্দ্র রায়।

বোয়িং কিনে শুল্ক কমাতে চায় ঢাকা

বোয়িং কিনে শুল্ক কমাতে চায় ঢাকা

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতি বছর বাংলাদেশে যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানি করে, আমদানি করে তার চার গুণ। বিশাল এই বাণিজ্য ঘাটতিই ট্রাম্প প্রশাসনের উদ্বেগের কারণ। যে কোনো মূল্যে এ ব্যবধান কমাতে চায় দেশটি। বাংলাদেশি পণ্যে ৩৫ শতাংশ বাড়তি শুল্ক আরোপের রহস্য এখানেই। প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে কারখানা স্থাপনের। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার ব্যাখ্যা দিয়ে দেশটিকে পোশাক সংশ্লিষ্ট কারখানা স্থাপনে অপারগতা প্রকাশ করার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র থেকে বোয়িং বিমান ক্রয়ের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। আনতে চায় তুলা এবং জ্বালানি তেলসহ আরও অনেক কিছু। সবকিছুর বিনিময়ে আরোপিত শুল্কহার যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। তিনদিনব্যাপি চলমান আলোচনা বাংলাদেশ সময় শনিবার প্রথম প্রহরে শেষ হওয়ার কথা। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি দপ্তর (ইউএসটিআর)-এর প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় পণ্য বাণিজ্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে আনুমানিক ১০.৬ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে রপ্তানি করেছে ২.২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ১.৫ শতাংশ  কম, অর্থাৎ আগের বছরের চেয়ে প্রায় ৩৪ মিলিয়ন ডলার হ্রাস পেয়েছে। বিপরীতে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করেছে ৮.৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য, যা আগের  বছরের তুলনায় ১.১ শতাংশ বা প্রায় ৮৯.৩ মিলিয়ন ডলার বেড়েছে। তিনদিনব্যাপি শুল্ক সমঝোতা আলোচনার প্রতিটি পর্যায়ে এ চিত্রই তুলে ধরছে মার্কিন প্রতিনিধিদল। বাংলাদেশ গুরুত্ব দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি সহজীকরণের ওপর।  এদিকে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আলোচনার দ্বিতীয় দিন শেষ হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বাণিজ্যের গতি-প্রকৃতি কেমন হবে, সে সব বিষয় উপস্থাপন ও যুক্তি-তর্ক হয়েছে। বেশ কিছু বিষয়ে দুই দেশ মোটামুটিভাবে একমত হয়েছে। কিছু বিষয় অমীমাংসিত রয়ে গেছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দ্বিতীয় দিনের আলোচনার একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিক ছিল বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিনের ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ অ্যাম্বাসেডর জেমিসন গ্রিয়ারের সঙ্গে একান্ত বৈঠক। ট্রাম্প প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ এই কর্মকর্তার সঙ্গে শেখ বশির উদ্দিন শুল্ক ইস্যুর পাশাপাশি পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে আন্তরিক পরিবেশে আলোচনা করেন।  বৈঠকে বাণিজ্য উপদেষ্টা বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা এবং রপ্তানি পরিস্থিতি তুলে ধরেন। তিনি জানান, বাংলাদেশ শুধু যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি নয়, আমদানির পরিমাণও বাড়ানোর পথে এগোচ্ছে। শুল্ক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ন্যায্য প্রত্যাশার বিষয়টি জোর দিয়ে উপস্থাপন করেন তিনি। এ ছাড়া, প্রতিযোগিতার পরিবেশ বজায় রাখার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি। জেমিসন গ্রিয়ার বাংলাদেশের অবস্থান মনোযোগ সহকারে শোনেন এবং সহযোগিতার আশ্বাস দেন। আলোচনায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন। ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান। সরাসরি উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান ও অতিরিক্ত সচিব ড. নাজনীন কাওসার চৌধুরী। ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন সরকারের বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা। এদিকে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের সঙ্গে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা সাক্ষাৎ করেন। তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান আলোচনা সম্পর্কে খোঁজ নেন। প্রায় সব চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্টরা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। তারা যুক্তরাষ্ট্রের ট্যারিফ নেগোসিয়েশনের বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। উপদেষ্টা তাদেরকে বলেন, তিনদিনব্যাপী এ আলোচনার দ্বিতীয় দিনে উভয় পক্ষই বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলোতে পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদারে প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। আলোচনা চলছে এবং এখন পর্যন্ত ফলাফল ভালো। ব্যবসায়ীদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।  বিজিএমইএ সভাপতি গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা চাই বাংলাদেশের ওপর শুল্কভার যেন ভারত, পাকিস্তান বা ভিয়েতনামের চেয়ে বেশি না হয়। বরং সমান বা কম হলে ভালো। তিনি বলেন, যেসব ইস্যুতে আমাদের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, সেসব বিষয়ে সিদ্ধান্তের আগে সরকার যেন আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে এই অনুরোধ জানিয়েছি। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক নিয়ে আলোচনার বিষয়ে আমাদের পুরোপুরি অন্ধকারে রাখা হয়েছে। ট্যারিফ আলোচনায় অগ্রগতি সম্পর্কে উপদেষ্টার কাছে আমরা জানতে চেয়েছি। তিনি আশার কথা জানিয়ে বলেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের ওপর আরোপিত ট্যারিফ কমে যাবে। 

সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে দুর্ভিক্ষের আলামত দেখা  যাচ্ছে ॥ রিজভী

সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে দুর্ভিক্ষের আলামত দেখা যাচ্ছে ॥ রিজভী

দেশের অর্থনীতিতে করুণ অবস্থা চলছে বলে মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে দেশে দুর্ভিক্ষের আলামত দেখা যাচ্ছে।  শুক্রবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জিয়া পরিষদের আয়োজনে সংগঠনের সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. আব্দুল কুদ্দুসের রোগ মুক্তি কামনা এবং দুস্থদের মাঝে জায়নামাজ বিতরণকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।  রিজভী বলেন, আজকে অসংখ্য গার্মেন্টস কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, মানুষ কর্মহীন হচ্ছে। মানুষ যদি খাবার কিনতে না পারে তাহলে কিন্তু দুর্ভিক্ষের আলামত তৈরি হবে। এই আলামত তৈরি হলে কেউই কিন্তু রেহাই পাবে না। তখন হাততালি দিবে পতিত ফ্যাসিস্টরা। রুহুল কবির রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের যে দোসরা ব্যাংকের হাজার কোটি টাকা মেরে বিদেশে পাচার করেছে, তাদের সঙ্গে নাম মাত্র কিছু প্রতিষ্ঠান একই কাজ করেছে। সরকার ইচ্ছা করলে প্রশাসক নিয়োগ করে সেই প্রতিষ্ঠানগুলো চালাতে পারে। গার্মেন্টস কারখানাগুলো যাতে বন্ধ না হয় সরকার এটাকে নানাভাবে টেকওভার করতে পারে। তিনি বলেন, কোনো প্রতিষ্ঠান বা কারখানায় স্বৈরাচারের দোসররা থেকে থাকলে তাদের বিচার করতে হবে। দেশের অর্থনীতির কঠিন ও করুণ অবস্থা। এটা শুধু মুখের কথা নয়। সামনে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে দেশে দুর্ভিক্ষ হয় কি না এইটা এখন মানুষের মনে মনে। তাই আর্থিক শৃঙ্খলা ফেরাতে হবে। কর্মসংস্থান বৃদ্ধি না করলে জনগণ কিন্তু কাউকে ছেড়ে দেবে না। রিজভী বলেন, বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে বৃহত্তর আদর্শের জন্য লড়াই করছে। আমরা মানবিক সাম্য ও ন্যায়বিচারের জন্য লড়ছি। আমরা আইনের শাসনের জন্য লড়াই করছি। এ জন্য দরকার চিরায়ত গণতন্ত্র, প্রকৃত গণতন্ত্র, খাঁটি গণতন্ত্র। এটা বৃহত্তর আদর্শের লড়াই, যেখানে জনগণের মালিকানা জনগণ ফিরে পাবে। সেই মালিকানা আটকে রাখা তো বড় ধরনের ফ্যাসিবাদকে প্রশ্রয় দেওয়া। রুহুল কবির রিজভী বলেন, জনগণের সরকার ক্ষমতায় থাকলে প্রতিটি পদে পদে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। সেই জবাবদিহিতা এখন নেই। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেও আমরা মনে করি জনসমর্থিত, কারণ শুধু আওয়ামী লীগ আর তাদের কয়েকটি দোসর দল ছাড়া সবাই এই সরকারকে সমর্থন করেছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাহেবকে আমরা সবাই সমর্থন করে যাচ্ছি। কিন্তু এটাও তো ঠিক দুর্ভিক্ষের আলামত যদি আমরা দেখতে পাই, শুনতে পাই তাহলে তো জনগণ আমাদেরও ছেড়ে দেবে না। তিনি বলেন, জুলাই সনদ বা জুলাই ঘোষণাপত্রকে মূলনীতিতে অন্তর্ভুক্তির কথা বলা বিভ্রান্তিমূলক। জুলাই সনদের অনেক বিষয় বিএনপি গ্রহণ করেছে। কিন্তু এটি মূলনীতির মধ্যে নিতে হবে কেন? যুগে যুগে দেশে আরও সংস্কার হবে। সংস্কার কোনো থাই পর্বতমালার মতো স্থির বিষয় নয়, এটি একটি গতিশীল ব্যাপার। বিএনপির পক্ষ থেকে তো সংস্কারবিরোধী কোনো কথা বলা হয়নি, সংস্কারের পক্ষেই বলা হয়েছে। বিএনপি চায় জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হোক। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আব্দুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, জিয়া পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি ডা. শফিকুল ইসলাম, মহাসচিব ড. এমতাজ হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব আব্দল্লাহহিল মাছুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল ইসলাম প্রমুখ।