ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘গোল্ডেন জেনারেশন’ বেলজিয়াম এখন ‘টু ওল্ড জেনারেশন’!

রুমেল খান

প্রকাশিত: ২৩:৩৩, ৩০ নভেম্বর ২০২২

‘গোল্ডেন জেনারেশন’ বেলজিয়াম এখন ‘টু ওল্ড জেনারেশন’!

কাতার বিশ্বকাপে নামের সুবিচার করে খেলতে পারছেন না বেলজিয়ামের ফুটবলাররা

সুখ্যাতি এমন একটা বিষয়, যেটা একদিনে অর্জন করা যায় না। তিলে তিলে এটা গড়ে ওঠে। কিন্তু সেই খ্যাতিতে যখন মরিচা ধরে, ম্লান হয়ে যায়; তখন খুব দ্রুতই সেই খ্যাতির ইমারত ধসে পড়ে। বিশ্বজগতের এটাই চিরন্তন নিয়ম। কাতারে চলমান ফিফা বিশ্বকাপেও এমনটা দেখা গেছে। যার কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে বেলজিয়াম জাতীয় ফুটবল দল।

যারা অনেক বছর ধরেই যে ‘গোল্ডেন জেনারেশন’ হিসেবে সুখ্যাতি কুড়িয়েছিল, সবার প্রশংসা পেয়েছিল, এখন সেই খেতাব পাল্টে গেছে। তাদের এখন ডাকা হচ্ছে ‘টু ওল্ড জেনারেশন’ হিসেবে!
বেলজিয়ান দলে মিডফিল্ডার কেভিন ডি ব্রুইনে নিজেই তার দলকে এমন খেতাব দিয়েছেন! ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘গার্ডিয়ান’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আর কোনো সুযোগ নেই, আমরা বুড়োদের প্রজন্ম। আমি মনে করি আমাদের বিশ্বকাপ জেতার সুবর্ণ সুযোগ ছিল ২০১৮ আসরে। তখন আমরা সত্যিই দুর্দান্ত দল ছিলাম। কিন্তু পরের চার বছরে দলের শক্তিমত্তা হ্রাস পেয়েছে। অনেক ভালো খেলোয়াড়কে হারিয়েছি। যদিও অনেক সম্ভাবনাময় তরুণ দলে এসেছে, কিন্তু এটা যথেষ্ট নয়।’
এবারের বিশ্বকাপে ২ নম্বর ফিফা র‌্যাঙ্কিংধারী এবং ‘দ্য রেড ডেভিলস্’ খ্যাত বেলজিয়ামের নি¤œমুখী ও অতি সাধারণ মানের ফুটবল খেলে যাচ্ছে। দুই ম্যাচ খেলে ১টিতে জিতেছে, ১টিতে হেরেছে। ৩ পয়েন্ট নিয়ে এফ-গ্রুপে পয়েন্ট টেবিলে চার দলের মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে আছে। সন্দেহ নেই, তাদের অবস্থা বড়ই নাজুক। এখন নিজেদের শেষ ম্যাচে তারা যদি ক্রোয়েশিয়ার কাছে হেরে যায় তাহলে ১৯৯৮ সালের পর আবারও বিদায় নেবে গ্রুপ পর্ব থেকেই।

আবার যদি ড্র করে, তাহলেও অন্য ম্যাচের (কানাডা-মরক্কো) ফলের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে। বেলজিয়ামের এখন যে অবস্থা, তাতে তারা শক্তিশালী ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে জিতবে, এমন আশা করছেন না ফুটবলবোদ্ধারা। ফলে অনেক চাপে আছে তারা।
নিজেদের প্রথম ম্যাচে রবার্তো মার্তিনেজের শিষ্যরা দুর্বল কানাডাকে (র‌্যাঙ্কিং ৪১) হারাতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খায়। অতিকষ্টে ও অনেক ঘাম ঝরিয়ে ম্যাচটা জেতে ১-০ গোলে। আর পরের ম্যাচে তো দারুণ লজ্জাজনক পারফর্মেন্স করে তারা। ২২ র‌্যাঙ্কিংধারী আফ্রিকার দেশ মরক্কোর কাছে ০-২ গোলে হেরেই বসে! এই হার যেমন বেলজিয়ামের ফুটবলের সবচেয়ে লজ্জাজনক হার, তেমনি মরক্কোর ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল জয়। এ অঘটনময় হারের ধাক্কা সামলাতে পারেননি বেলজিয়ান ফুটবল অনুরাগীরা। নিজেদের দেশে ব্রাসেলসে রীতিমতো দাঙ্গা-হাঙ্গামা করে এক অরাজকতা পরিস্থিতির সৃষ্টি করেন তারা।

অথচ এই বেলজিয়াম দীর্ঘদিন ধরে ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বরে অধিষ্ঠিত ছিল। পরে ব্রাজিলের কাছে শীর্ষস্থানটা খোয়ায় তারা। অবশ্য সোনালি প্রজন্মের বেলজিয়াম যে বৃদ্ধ প্রজন্মের বেলজিয়ামে পরিণত হচ্ছে, সেটা তারার আগেই আভাস দিয়েছিল এ বছরই বিশ্বকাপ শুরুর আগে। ব্রুইনের কথায় যুক্তি আছে। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানেই তা পরিষ্কার।

  ২৬ মার্চ এক প্রীতি ম্যাচে তারা ২-২ গোলে ড্র করে আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে। ৩ জুন উয়েফা নেশন্স লিগের গ্রুপ ম্যাচে ৪-১ গোলে বিধ্বস্ত হয় হল্যান্ডের কাছে। আরেক গ্রুপ ম্যাচে ১-১ গোলে আটকে যায় ওয়েলসের বিরুদ্ধে। আবারও ফিরতি ম্যাচে হল্যান্ডের কাছে হারে ১-০ গোলে। ১৮ নভেম্বর প্রীতি ম্যাচে ২-১ গোলে হারে মিসরের কাছে।
যে দলটি বিশ্বকাপের মূলপর্বে ১৪ বার খেলেছে, একবার চতুর্থ (১৯৮৬) এবং একবার তৃতীয় (২০১৮) হয়েছে; যারা ইউরো কাপে ৬ বার অংশ নিয়ে একবার রানার্সআপ (১৯৮০) হয়েছে; যারা একবার অলিম্পিব ফুটবলে স্বর্ণপদক (১৯২০) জিতেছে... যে দলে আছে কোর্তোয়া, ব্রুইনা, হ্যাজার্ড, লুকাকু, ব্যাটসশুয়াইয়ের মতো তারকা ফুটবলার, সেই দলটির কেন এই বেহাল দশা? তারা কি পারবে ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে পরের রাউন্ডে যেতে?

সম্পর্কিত বিষয়:

×