নান্দনিক এমন ভঙ্গিমায় আর দেখা যাবে না উরুগুয়েন ফরোয়ার্ড লুইস সুয়ারেজকে
একেই বলে স্বপ্নের মতোই বিদায়। টানা চারটি শিরোপা জিতে ক্যারিয়ারের সমাপ্তি টানলেন অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া। সর্বশেষ গত জুলাইয়ে কোপা আমেরিকার শিরোপা জয়ের পরই অবসরে চলে যান আর্জেন্টাইন ফুটবলের এই জীবন্ত কিংবদন্তি। মায়ামির হার্ডরক স্টেডিয়ামে অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো কলম্বিয়ার বিপক্ষে সেই ফাইনালে লাউতারো মার্টিনেজের লক্ষ্যভেদে ১-০ গোলে জিতেছিল আলবিসেলেস্তেরা।
শুরুর একাদশে থাকা ডি মারিয়া তার ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচে মাঠে ছিলেন ১১৭ মিনিট পর্যন্ত। দলের জয় প্রায় নিশ্চিত হওয়ার পরই তাকে বদলি করেন আর্জেন্টাইন কোচ লিওনেল স্কালোনি। আর সেই মুহূর্তে ডি মারিয়াকে দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানান স্টেডিয়ামে উপস্থিত দর্শকরা। আর তাতেই তার ১৬ বছরের বর্ণাঢ্য আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি টানেন ৩৬ বছর বয়সি এই উইঙ্গার।
কোপা আমেরিকা জয়ের পর দেড় মাসেরও বেশি সময় কোনো ম্যাচ ছিল না আর্জেন্টিনার। অবশেষে গত বৃহস্পতিবার আবারও মাঠে নামে আলবিসেলেস্তেরা। বুয়েন্স এইরেসে এদিন চিলিকে স্বাগত জানায় আর্জেন্টিনা। এই ম্যাচের আগেই ডি মারিয়াকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায়ী সংবর্ধনা জানায় আর্জেন্টাইনরা। বিশেষ এই ম্যাচটিতে ৩-০ গোলের জয়টিও আলভারেজ-মার্টিনেজরা উৎস্বর্গ করেন ডি মারিয়াকে।
এদিন সপরিবারেই স্টেডিয়ামে হাজির হয়েছিলেন আর্জেন্টাইন উইঙ্গার। যেন অন্যরকম আবেগ ছুঁয়ে যায় তাকে। পরিবার, দর্শক কে কাঁদেননি ডি মারিয়ার বিদায়ী অনুষ্ঠানে! আর্জেন্টিনা দলের হয়ে মাঠে তার স্মরণীয় সব মুহূর্ত দেখানো হয় স্টেডিয়ামের জায়ান্ট স্ক্রিনে। ব্যাকগ্রাউন্ডে পাঠ করা হয় ডি মারিয়াকে লেখা তার মেয়ে মিয়ার চিঠি। খেলা শেষ হওয়ার পর আর্জেন্টিনার ফুটবলাররা তাকে নিয়ে মেতে ওঠেন। দীর্ঘ দিন ধরে আর্জেন্টিনার জাতীয় দলের অন্যতম ভরসাকে শূন্যে ছুড়ে উদযাপনে মেতে ওঠেন মার্টিনেজ-ওটামেন্ডিরা। সতীর্থদের উচ্ছ্বাসে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন ডি মারিয়াও।
বিদায়ী অনুষ্ঠানে অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া তার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, ‘আমার ভেতরে অনেক ধরনের অনুভূতি হচ্ছে। এখন আসলে কথা বলা কঠিন। আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের যারা আমার সঙ্গে কাজ করেছে, তাদের সবাইকে ধন্যবাদ। তাদের সঙ্গে ১৬ বছর কাটিয়েছি। আমি কঠিন জীবন পার করেছি এবং শেষে তাদের সঙ্গে আনন্দ নিয়ে শেষ করেছি। এখন আমি শুধু আরেকজন সমর্থক মাত্র। এখন এখানে আসব আমার পরিবার নিয়ে খেলা দেখতে।
কোপা আমেরিকা এবং বিশ্বকাপে আসব এবং তাদের সমর্থন করব।’ জাতীয় দলের জার্সিতে দীর্ঘ সময় কাঁধে কাঁধ রেখে লড়াই করেছেন অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া আর লিওনেল মেসি। ২০০৮ সাল থেকে একসঙ্গে পথচলা এই দুই বন্ধুর। এরপর দীর্ঘ ১৬ বছরের সহযোদ্ধা ডি মারিয়ার সঙ্গে একবার বিশ্বজয় ও দুইবার লাতিন আমেরিকা জয় করেন মেসি। ইনজুরিতে থাকার কারণে এলএম টেন এখন দলের বাইরে।
তাই সুদূর যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা থেকে ভিডিওতে বন্ধুকে বার্তা দেন মেসি। প্রিয় বন্ধুর বিদায়বেলায় এলএম টেন বলেন, ‘আমি দুঃখিত যে, তোমার বিশেষ রাতে এখানে থাকতে পারিনি। তুমি জানো যে, আমি ভালো হওয়ার চেষ্টা করছি, যাতে আসতে পারি। ভিডিও বার্তা দিলেও আমি সেখানে থাকতে চেয়েছিলাম। আমরা তোমাকে ভালোবাসি। আমরা তোমাকে মিস করব। খুব শিগগিরই দেখা হবে ফিদেও, আমরা তোমাকে অনেক মিস করব।’
২০০৮ সালে আর্জেন্টিনার হয়ে অভিষেকের পর দীর্ঘ দেড় দশকেরও বেশি সময় আকাশি-সাদা জার্সি গায়ে চড়িয়েছেন ডি মারিয়া। আর্জেন্টিনার হয়ে ১৪৫ ম্যাচে প্রতিনিধিত্ব করেছেন ডি মারিয়া। এই সময়ে ৩১ গোলের সঙ্গে ৩২ অ্যাসিস্ট রয়েছে তার।
জাতীয় দলের সতীর্থদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি, ‘আমার অনেক সুন্দর সুন্দর অনুভূতি হচ্ছে। আমি এই প্রজন্মের কাছে চিরকৃতজ্ঞ। তারা আমাকে সবকিছু দিয়েছে। যা প্রবলভাবে অর্জন করতে চেয়েছি তা পূরণ করতে সাহায্য করেছে। আর আমি এভাবে বিদায় বলছি। এর চেয়ে ভালো আর কী হতে পারে?’