ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রাজিল দলের সাম্বা নাচের সমালোচনায় রয় কিন

রুমেল খান

প্রকাশিত: ০১:১১, ৭ ডিসেম্বর ২০২২

ব্রাজিল দলের সাম্বা নাচের সমালোচনায় রয় কিন

রয় কিন

দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচে দুর্দান্ত খেলে এশিয়ার দেশকে দক্ষিণ কোরিয়াকে বিধ্বস্ত করে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে গেছে লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল। এ নিয়ে কোন মাথাব্যথা নেই আইরিশ ফুটবল কিংবদন্তি রয় কিনের। কিন্তু ম্যাচে প্রতিটি গোলের পর ব্রাজিলের ফুটবলাররা যেভাবে সাম্বা নাচ নেচেছেন, তাতে যথেষ্ট ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত হয়েছেন তিনি।

তিনি মনে করেন এভাবে নেচেকুঁদে ব্রাজিল দল এবং দলের কোচ তিতেও নেচে প্রতিপক্ষ দক্ষিণ কোরিয়াকে একপ্রকার অপমানই করেছে এবং এই নাচের মাধ্যমে তারা ফুটবল বিশ্বকে বিভক্ত করে দেবে! ভিনিসিয়াস জুনিয়র ম্যাচের সাত মিনিটের মাথায় গোল করলে এগিয়ে যায় ব্রাজিল। তখন থেকেই পাঁচবারের ব্রাজিল দলের নর্তন-কুর্দনের শুরু। গোলের পর উচ্ছ্বসিত ব্রাজিল দল একত্রিত হয়ে সাম্বা নাচ পরিবেশন শুরু করে দেয় এবং এটি প্রায় মিনিটখানেক ধরে চলে।

এরপর নেইমার, রিচার্লিসন এবং লুকাস পাকেতার প্রতিটি গোলের পর একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি ঘটে। আর টেলিভিশনের পর্দায় এসব নাচের দৃশ্য দেখে রয় কিনের মেজাজটাই বিগড়ে যায়। তিনি ব্যক্ত করেন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া, ‘দেখুন, আমি কখনো এত নাচ দেখিনি, মনে হচ্ছিল আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে এটি দেখানো হচ্ছে। এটি খেলার মাঠ, কোন নাচের প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠান নয়।’

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাবেক এই অধিনায়ক আরও বলেন, ‘এক্ষেত্রে আমি বরং ব্রাজিল দলকে পরামর্শ দেব, তাদের যদি এতই নাচের শখ, তাহলে তারা ব্রিটেনের একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় টেলিভিশন অনুষ্ঠান চলে যাক, যেখানে সেলিব্রিটিরা একটি নাচের প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।’ ৫১ বছর বয়সী এবং আয়ারল্যান্ডের হয়ে মিডফিল্ড পজিশনে খেলে (১৯৯১-২০০৫) ৬৭ ম্যাচে ৯ গোল করা রয় আরও যোগ করেন, ‘কি আর বলব, আমি যা দেখেছি, তা যেন বিশ্বাসই করতে পারছি না, সত্যিই পারছি না।’

বর্তমানে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দল নটিংহাম ফরেস্টের সহকারী কোচ হিসেবে কাজ করা রয় আরও বলেন, ‘আমি এটি মোটেই পছন্দ করি না। আমি মনে করি এটি সত্যিই প্রতিপক্ষ দলকে অসম্মান করেছে।’ এছাড়া ২৯তম মিনিটে রিচার্লিসন ব্রাজিলের হয়ে তৃতীয় গোলটি করার পর কোচ তিতেও তার খেলোয়াড়দের সঙ্গে ডাগআউটের সামনে সাম্বা ড্যান্সে যোগ দেন, যা হতবাক করেছে কিনকে, ‘এটা আমি কি দেখলাম, একজন কোচ পর্যন্ত তার খেলোয়াড়দের সঙ্গে নাচানাচি করছেন! আমি বিস্ময়ে বাকরুদ্ধ।

এসব হচ্ছেটা কী?’ সাম্বা হচ্ছে একধরনের ব্রাজিলীয় গান ও নৃত্য। আফ্রিকা মহাদেশের পশ্চিম আফ্রিকার দাস ব্যবসা ও আফ্রিকার ধর্মীয় সংস্কৃতি হয়ে এর উৎপত্তিগত বিকাশ লাভ ঘটেছে ব্রাজিলের বাহাই এবং রিও ডি জেনিরো প্রদেশে। ১৯২০-এর দশকে গান ও নৃত্যকলায় এটি সম্পৃক্ত হয়। এটি বিশ্বের সর্বত্র ব্রাজিলের প্রতীক এবং ব্রাজিলিয়ান উৎসবের স্বীকৃতি পায়। সবচেয়ে জনপ্রিয় ও আবেগ-অনুভূতিসম্পন্ন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে এটি ব্রাজিলের জাতীয় পরিচয় বহন করছে।

সাম্বা কারিওকার প্রধান শাখা বাহাইয়ের সাম্বা ডি রোডা বা বৃত্তাকারে নৃত্য ২০০৫ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক মানবধর্মী হেরিটেজের মর্যাদা পায়। সাম্বা কারিওকা রিও ডি জেনিরোতে প্রদর্শন ও নাচা হয়। ‘সাম্ব’া শব্দের উৎপত্তি আরবি শব্দ জুম্বা বা জাম্বা থেকে হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। কিংবা অনেক আফ্রিকান ভাষার একটি কিমবুনদু থেকে শব্দের উৎপত্তি হয়েছে; যেখানে স্যাম অর্থ দাও এবং বা অর্থ গ্রহণ কর। অষ্টাদশ শতকের শেষদিকে সাম্বার দ্বৈত নৃত্য শহরাভিমুখী অগ্রসর হয়।

১৯২০ ও ১৯৩০-এর দশকে আন্তর্জাতিকভাবে এটি অসম্ভব জনপ্রিয়তা লাভ করে। ১৯৬০-এর দশকে নতুন, কিঞ্চিৎ জাজ টাইপের বসা নোভা সংগীতের সুর, স্বর, ছন্দ ব্রাজিলে গভীরভাবে প্রভাব বিস্তার করে। আধুনিক সাম্বা নৃত্য কোরাস গান সহযোগে বিংশ শতকের শুরুতে বিকাশ লাভ করে। ঐতিহ্যগতভাবে সাম্বায় তার সহযোগে ক্যাভাকুইনহো, বিভিন্ন ধরনের গিটার ও নানাবিধ বাদ্যযন্ত্রের সংমিশ্রণ ঘটে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে আমেরিকান অর্কেস্ট্রায় এটি প্রভাব ফেলে।

যুদ্ধ-পরবর্তীকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাংস্কৃতিক অঙ্গন সমৃদ্ধিতে সাম্বা নৃত্যে ট্রমবোন, ট্রামপেট, বাঁশি, চোরো, বাদক ইত্যাদির ব্যবহার শুরু হয়। বিশ্বকাপের জমকালো আসরে প্রতি বছর বিশ্বকাঁপানো গানের তালে তালে জমে উঠে এই নৃত্য। কেননা, সাম্বা নাচ মানেই একেবারে উন্মুক্ত আঁটসাঁট পোশাক। অনেক ক্ষেত্রে নারীর শরীরে থাকে গহনার পোশাক। যেখানে কাপড়ের কোনো বালাই থাকে না! বৈশ্বিকভাবে জনপ্রিয়তা অর্জনের পাশাপাশি এটি ফুটবল ও উৎসবে জড়িয়ে পড়ে। ভাষাগত দূরত্ব থাকার পরও ইউরোপ ও জাপানে এর অগণিত সমর্থকদের মন জয় করে। কিন্তু রয় কিনের মন জয় করতে পারেনি, বরং ক্ষেপিয়ে দিয়েছে তাকে!

×