ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

স্পেনকে বিদায় করে মরক্কোর ইতিহাস

শাকিল আহমেদ মিরাজ

প্রকাশিত: ০০:০৪, ৭ ডিসেম্বর ২০২২; আপডেট: ০২:৫৬, ৭ ডিসেম্বর ২০২২

স্পেনকে বিদায় করে মরক্কোর ইতিহাস

টাইব্রেকারে স্প্যানিসদের দুই শট ফিরিয়ে দিয়ে মরক্কোর ইতিহাস গড়ায় জয়ের নায়ক গোলরক্ষক ইয়াসিন বউনু

কাতার বিশ্বকাপে অবিস্মরণীয় কীর্তি গড়ল মরক্কো। মঙ্গলবার শেষ ষোলোর ম্যাচে অন্যতম ফেভারিট ও সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন স্পেনকে টাইব্রেকারে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে নিজেদের ফুটবল ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইানালে নাম লেখালো আফ্রিকান অঞ্চলের দেশটি। যেখানে তিন-তিনটি পেনাল্টি ঠেকিয়ে নায়ক মরক্কোর গোলরক্ষক ইয়াসিন বউনু। অন্যদিকে স্পেনের পাবলো সারাবিয়া, কার্লোস সোলের ও সার্জিও বুস্কেটস শট মিস করেন।

ফেভারিটের তকমা নিয়ে মাঠে নামা স্পেন মরক্কোর বিপক্ষে একদমই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। নির্ধারিত ৯০ মিনিট গোলশূন্য থাকলে খেলা গড়ায় অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে। আক্রমণাত্মক খেললেও আর গোলমুখ খুলতে পারেনি ২০১০ আসরের চ্যাম্পিয়ন স্প্যানিশরা। ১২০ মিনিটের লড়াইয়ে শেষ মুহূর্তে ম্যাচের নিষ্পত্তি প্রায় হয়েই যাচ্ছিল। পাবলো সারাবিয়ার প্রচেষ্টা বাধা পায় পোস্টে। পেনাল্টি শুটআউটেও তার শট পোস্টে লাগে!  
র‌্যাঙ্কিংয়ের ২২তম দল মরক্কোর এটি ষষ্ঠ বিশ্বকাপ। দলটি প্রথম সুযোগ করে নিয়েছিল ১৯৭০ সালে। ১৯৮৬ সালের পর মাত্র দ্বিতীয়বারের মতো নকআউটে খেলে তারা। রাশিয়ায় গত বিশ্বকাপে বিদায় নিয়েছিল গ্রুপ পর্ব থেকে। ইউরোপিয়ান পরাশক্তি স্পেনকে বিদায় করে এবার তো ইতিহাসই গড়ল মরক্কো। নির্ধারিত সময়ে রক্ষণাত্মক খেলার কৌশলটা ভালোই কাজে লাগাল ওয়াইল্ড রিগ্রাগুইর শিষ্যরা। বল দখলের লড়াইয়ে এগিয়ে থাকলেও সাজানো আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণ কিংবা অন-টার্গেট শটে হতাশ করে লুইস এনরিকের স্পেন। যে কয়েকটি সুযোগ পেয়েছে সেটিও কাজে লাগাতে পারেনি তারা।

ফলে গোলশূন্য অবস্থায় শেষ হয় নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা। এজন্য প্রতিপক্ষ মরক্কোর দায়ও কম নয়, নিজেদের ফুটবল ইতিহাসে মাত্র দ্বিতীয়বারের মতো নকআউটে ওঠা আফ্রিকান অঞ্চলের দলটির খেলার ধরন ছিল অতিমাত্রায় নেগেটিভ! আল রাইয়ানের এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে এদিন গ্রুপ পর্বে জাপানের বিপক্ষে হারা ম্যাচ থেকে একাদশে পাঁচটি পরিবর্তন এনে খেলতে নামে স্পেন। শুরু থেকে যথারীতি বল পায়ে রেখে খেলার চেষ্টা করে তারা। উল্লেখযোগ্য সুযোগ যদিও তৈরি করতে পারেনি। একাদশ মিনিটে বক্সের একটু বাইরে ফ্রি-কিক পায় মরক্কো। মাদ্রিদে জন্ম নেওয়া আশরাফ হাকিমির শট ক্রসবারের ওপর দিয়ে উড়ে যায়।

২৫তম মিনিটে নিজেদের ভুলে বিপদে পড়তে বসেছিল মরক্কো। তাদের দুর্বল পাসে বল পেয়ে যায় স্পেন। বক্সে দানি ওলমোর শট গোলরক্ষকের হাত ছুঁয়ে ক্রসবারে লাগে। যদিও অফসাইডের বাঁশি বাজে। দুই মিনিট পর জর্দি আলবার ক্রস নিয়ন্ত্রণে নিয়ে দুরূহ কোন থেকে পাশের জালে বল মারেন মার্কোস আসেনসিও। ৩৩তম মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে জোরালো শটে চেষ্টা করেন মরক্কোর মাসাওয়ি, ঠেকিয়ে দেন স্পেনের গোলরক্ষক উনাই সিমোন। বিরতির ঠিক আগে সোফিয়ান বুফালের ক্রসে কাছ থেকে নায়েফ আগের্দের হেড উড়ে যায় ক্রসবারের ওপর দিয়ে।

প্রথম ৪৫ মিনিটে গোলের জন্য কেবল একটি শট নিতে পারে স্পেন। তবে ৬৯ শতাংশ বলের দখল ছিল তাদের কাছে। ৩১ শতাংশ ছিল মরক্কোর কাছে। স্পেন ১০টি ফাউল করেছে। আর মরক্কো করেছে ৩টি। স্পেন একটি কর্নার পেলেও মরক্কো পায়নি একটিও। প্রথমার্ধে গোলের জন্য যে একটি শট নেয় স্পেন, সেটিও ছিল লক্ষ্যভ্রষ্ট। বিশ্বকাপের ম্যাচে প্রথম ৪৫ মিনিটে তাদের সবচেয়ে কম শট নেওয়ার ঘটনা এটি।
দ্বিতীয়ার্ধেরও শুরু থেকেই স্পেনের সঙ্গে সমানতালে লড়াই কওে মরক্কো। ৫৪ মিনিটে একটি সুযোগ পেয়েছিলেন ফোরান  তোরেস। কিন্তু তার নেওয়া শট ডান কোনা থেকে ধরে ফেলেন মরক্কোর গোলরক্ষক ইয়াসিন বাউনু। ৯০ মিনিটে ফ্রি কিক পেলেও তা থেকে গোল পায়নি মরক্কো। সর্বোপরি নকআউটে সাবেক চ্যাম্পিয়ন ও ইউরোপিয়ান প্রতিনিধি স্পেনার খেলা হতাশই করেছে। অতিরিক্ত সময়ের একেবারে শেষ মুহূর্তে ফ্রি কিক থেকেও বল জালে জড়াতে পারেনি সার্জিও বুস্কেটসের দল।
১৯৩৬ সালে বিশ্বকাপে পা-রাখা স্প্যানিশদের এটি ১৬তম আসর। ২০১০ দক্ষিণ আফ্রিকায় ‘ওয়াকা ওয়াকা’ বিশ্বকাপজয়ী দলটি ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে বিদায় নিয়েছিল শেষ ষোলো থেকে। র‌্যাঙ্কিংয়ের আট নম্বরে থেকে কাতার বিশ্বকাপ শুরু করা টিকিটাকাদের পারফর্মেন্স কার্যত এবার মিশ্র। হঠাৎ ঝলক থাকলেও ছিল না ধারাবাহিকতা।

সম্পর্কিত বিষয়:

×