ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

শেষ আট নিশ্চিতের মিশনে স্পেন ও পর্তুগাল

জাহিদুল আলম জয়

প্রকাশিত: ০০:৪৪, ৬ ডিসেম্বর ২০২২

শেষ আট নিশ্চিতের মিশনে স্পেন ও পর্তুগাল

ম্যাচ সামনে রেখে অনুশীলনে পর্তুগালের ফুটবলাররা

কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করার মিশনে কাতার বিশ্বকাপে মাঠে নামছে দুই ইউরোপীয়ান পরাশক্তি স্পেন ও পর্তুগাল। শেষ ষোলোর ম্যাচে ২০১০ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন স্পেনের প্রতিপক্ষ চমক দেখিয়ে চলা আফ্রিকান দল মরক্কো। দোহার আল রাইয়ানের এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় আজ রাত ৯টায়।

দ্বিতীয় রাউন্ড অর্থাৎ প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালের শেষ ম্যাচে সুইজারল্যান্ডের মুখোমুখি হচ্ছে ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর পর্তুগাল। লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে এই ম্যাচটি মাঠে গড়াবে রাত ১টায়। ম্যাচ দুটিতে স্পেন ও পর্তুগাল ফেভারিট হলেও চমক অব্যাহত রেখে শেষ আটে খেলার স্বপ্ন বুনছে মরক্কো এবং সুইজারল্যান্ডও।
১৯৯৬ বিশ্বকাপে কিংবদন্তি ইউসেবিওর পর্তুগাল তৃতীয় হয়েছিল। ওইটাই পর্তুগিজদের বিশ্বমঞ্চে সেরা সাফল্য। তার মানে এখন পর্যন্ত ইউরোপের ব্রাজিল খ্যাত দেশটি ফাইনালে উঠতে পারেনি। শেষ তিনটি আসরের দুটিতেই নকআউট পর্বের প্রথম ম্যাচে বিদায় নিতে হয় রোনাল্ডো, পেপেদের। এবার সেই ব্যর্থতা ঘোচানোর লক্ষ্যে মরুর বুকে এসেছে কোচ ফার্নান্ডো সান্টোসের দল। ২০০৬ সালে রোনাল্ডোর অভিষেক বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে খেলেছিল পর্তুগাল। আধুনিক যুগে এটাই সেরা সাফল্য দলটির।

এবার গোল্ডেন জেনারেশন নিয়ে দেশটি সেরা সাফল্য পেতে চায়। অন্তত শেষ বিশ্বকাপ খেলা অধিনায়ক রোনল্ডোর জন্য তারা সোনার ট্রফি জিততে মরিয়া। যদিও সি আর সেভেনকে ছাপিয়ে এবার পর্তুগিজ দলে ব্রুনো ফার্নান্দেজকে নিয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে। গ্রুপ পর্বে উরুগুয়ের বিরুদ্ধে ২-০ গোলের জয়ের ম্যাচে দুটি গোলই করেছিলেন ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে খেলা তারকা এই মিডফিল্ডার।
ইউরো ২০১৬ জয়ী পর্তুগাল এবার বিশ^কাপে নতুন কিছু করে দেখাতে চায়। দলটির গোলমেশিন খ্যাত রোনাল্ডোর ফর্ম ও ফিটনেস নিয়ে শুরু থেকেই শঙ্কা নিয়ে বিশ^কাপে এসেছে পর্তুগাল। পাঁচবারের ফিফা সেরা তারকা এখনো নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। এরপরও পর্তুগাল কোচ পরিচিত প্রতিপক্ষ সুইজাল্যান্ডের বিরুদ্ধে চাপ নিতে চান না।

সবশেষ চলতি বছরের শুরুতে উয়েফা নেশন্স লিগে সুইসদের ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছিল পর্তুগিজরা। ওই ম্যাচে রোনাল্ডো প্রথমার্ধে দুই গোল করেছিলেন। এরপর জেনেভাতে ফিরতি ম্যাচে অবশ্য সুইজারল্যান্ডের কাছে ১-০ গোলে হেরেছিল পর্তুগিজরা। রোনাল্ডোদের হারানোর পর নেশন্স লিগে সুইসরা পালাক্রমে স্পেন ও চেক প্রজাতন্ত্রকে পরাজিত করে। এবারের বিশ^কাপেও গ্রুপ পর্বে তিন ম্যাচের দুটিতেই জয় তুলে নিয়েছে সুইজারল্যান্ড।

ক্যামেরুনের  বিরুদ্ধে ১-০ গোলের জয় দিয়ে বিশ^কাপ শুরু করা দলটি ব্রাজিলের কাছে একই ব্যবধানে হেরে যায়। শেষ ম্যাচে এক পয়েন্ট হলেই সুইসদের পরের রাউন্ড নিশ্চিত হয়ে যেত। কিন্তু ব্রাজিলকে হারিয়ে দিয়ে ক্যামেরুন পুরো গ্রুপের চেহারা পাল্টে দেয়। শেষ পর্যন্ত সার্বিয়ার বিরুদ্ধে ৩-২ গোলের জয়ে নকআউট রাউন্ডে উঠেছে সুইসরা। এর আগে বিশ^কাপের কোন আসরে সুইসরা তিনটি ম্যাচ জিততে পারেনি। সাতবারের প্রচেষ্টায় কখনই কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছাতে পারেনি। কিন্তু এবারের কোচ মুরাত ইয়াকিনের দল সেই স্বপ্ন দেখছে।
অন্যদিকে ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপের রানার্সআপ ক্রোয়েশিয়া ও তৃতীয় হওয়া বেলজিয়ামের মতো পরাশক্তিদের পেছনে ফেলে ‘এফ’ গ্রুপের সেরা হয়ে নকআউট রাউন্ডে এসেছে মরক্কো। আর ‘ই’ গ্রুপে জাপানের পেছনে থেকে দ্বিতীয় হয়ে শেষ ষোলোতে এসেছে স্পেন। সেনেগালের পর দ্বিতীয় আফ্রিকান দল হিসেবে এবারের আসরে দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করেছে মরক্কো।

ক্রোয়েটদের বিরুদ্ধে গোলশূন্য ড্র দিয়ে আসর শুরু করার পর বেলজিয়ামকে ২-০ ও কানাডাকে ২-১ গোলে হারিয়ে গ্রুপে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয় মরক্কো। এবারসহ দ্বিতীয়াবারের মতো বিশ্বকাপের নক আউট পর্বে উঠেছে তারা। এর আগে ১৯৮৬ আসরে শেষ ষোলো থেকে বিদায় নিয়েছিল। সব ধরনের প্রতিযোগিতায় টানা আট ম্যাচে অপরাজিত আছে অ্যাটলাস লায়ন্সরা। এই ম্যাচগুলোতে মরক্কো মাত্র দুই গোল হজম করেছে।
বিপরীতে লুইস এনরিকের স্পেন কিছুটা হলেও পিছিয়ে আছে। গ্রুপের শেষ ম্যাচে এশিয়ার পরাশক্তি জাপানের কাউন্টার অ্যাটাকের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি স্প্যানিশ রক্ষণভাগ। যার পরিণতি ২-১ গোলে হার। আলভারো মোরাতার গোলে ম্যাচের শুরুর দিকেই লিড নিয়েছিল স্পেন। কিন্তু জাপানিজ কোচ হাজিমে মোরিইয়াসুর খেলোয়াড় বদলির কৌশলে কাছে হার মানতে বাধ্য হয় স্প্যানিশরা। ২০১৮ বিশ্বকাপে তারা শেষ ষোলো থেকে বিদায় নিয়েছিল।

এবার সেই হতাশায় ভুগতে চায় না তারুণনির্ভর দলটি। বিশ্বকাপে এর আগে মাত্র একবারই দেখা হয়েছে মরক্কো ও স্পেনের। সেটা চার বছর আগে রাশিয়া আসরে। গ্রুপ পর্বের ওই ম্যাচটি ২-২ গোলে ড্র হয়েছিল। তার মানে এবার টানা দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপে দেখা হচ্ছে দল দুটির। স্পেন ও মরক্কোর প্রথম দেখা ১৯৬১ সালে। এখন পর্যন্ত একে অপরের বিরুদ্ধে দল দুটি খেলেছে তিনটি ম্যাচ। যেখানে দুটিতে জয় স্পেনের, অপর ম্যাচটি ড্র হয়।

সম্পর্কিত বিষয়:

×