
ছবি: প্রতীকী
বর্তমান প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বে কম্পিউটার সায়েন্স একটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ও চাহিদাসম্পন্ন বিষয়। এটি শুধু একটি একাডেমিক শাখা নয়, বরং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা, বিশ্লেষণাত্মক চিন্তাভাবনা এবং উদ্ভাবনী মানসিকতা গড়ে তোলার একটি ক্ষেত্র। তবে এই বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন সহজ নয়— এটি চ্যালেঞ্জিং এবং এতে রয়েছে উচ্চ পর্যায়ের গণিত ও প্রোগ্রামিং দক্ষতার প্রয়োজন।
কম্পিউটার সায়েন্স শুধুমাত্র প্রযুক্তির ব্যবহার শেখায় না, বরং শেখায় কীভাবে জটিল সমস্যা ভেঙে তার কার্যকর সমাধান খুঁজে বের করতে হয়। অনেক শিক্ষার্থী বিষয়টির গাণিতিক গভীরতা এবং বিশ্লেষণাত্মক প্রকৃতি দেখে চমকে ওঠে, যার কারণে তুলনামূলকভাবে এই বিষয়ে ড্রপআউটের হার বেশি।
আয়ারল্যান্ডের মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যক্রমের ধীর পরিবর্তনের জন্য সমালোচনা থাকলেও, প্রযুক্তি খাতে দেশের অগ্রগতি এই বিষয়ে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়িয়ে তুলেছে। ২০১৮ সালে পরীক্ষামূলকভাবে ৪০টি স্কুলে লিভিং সার্টিফিকেট পর্যায়ে কম্পিউটার সায়েন্স চালু করা হয়, এবং এরপর থেকে বিষয়টির জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এই বিষয়ে ভর্তি পেতে হলে ভালো ফলাফল অর্জন করতে হয়। গত বছর ট্রিনিটি কলেজ ডাবলিনে কম্পিউটার সায়েন্সে ভর্তি হতে ৫২১ পয়েন্টের প্রয়োজন হয়েছিল, ইউনিভার্সিটি অব গালওয়ে-তে ৪৯৮, ইউনিভার্সিটি কলেজ কর্ক-এ ৫০০ এবং ময়নুথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্টস রুটে ৩৮০, সায়েন্স রুটে ৪০১ ও ‘কম্পিউটেশনাল থিঙ্কিং’ কোর্সে ৫৭৭ পয়েন্টের দরকার হয়েছে।
ময়নুথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের প্রধান ড. এডেন মুন্নি জানান, “অনেকেই বুঝতে পারেন না যে এই বিষয়ে একটি নির্দিষ্ট মাত্রার গণিত দক্ষতা অপরিহার্য। কেউ কেউ বলে এটি গণিতের একটি শাখা, যদিও এটি শুধুমাত্র গণিতেই সীমাবদ্ধ নয়।”
তিনি আরও বলেন, “এই বিষয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো সমস্যা সমাধানের দক্ষতা। একটি জটিল সমস্যাকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে সমাধান খোঁজা হয়—এটাই কম্পিউটার সায়েন্সের মূল দর্শন। সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট হোক বা অন্য কোনো ক্ষেত্র, এই বিশ্লেষণক্ষমতাই আপনাকে এগিয়ে রাখে।”
বর্তমানে আয়ারল্যান্ড আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি খাতের একটি কেন্দ্রস্থল হওয়ায় এই বিষয়ে পড়াশোনা করে গুগল, মাইক্রোসফট, মেটা বা অ্যাপলের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোতে ইন্টার্নশিপ বা চাকরির সুযোগ পাওয়া যায়। অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করার আগেই চুক্তিভিত্তিক কাজের সুযোগ পেয়ে থাকেন।
ড. মুন্নি জানান, “কম্পিউটার সায়েন্স ডিগ্রির সবচেয়ে বড় শক্তি এর আন্তঃবিষয়ভিত্তিক ব্যবহার। প্রযুক্তি ছাড়াও অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, সরকার ও কৃষিক্ষেত্রে এই জ্ঞান কাজে লাগানো যায়। যে কোনো খাতেই এখন কম্পিউটার সায়েন্সের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।”
তিনি বলেন, “জেনারেটিভ এআই, গ্রিন কম্পিউটিং এবং টেকসই প্রযুক্তির মতো নতুন দিকগুলো শিক্ষার্থীদের কৌতূহল বাড়াচ্ছে। যদিও বেশিরভাগ শিক্ষার্থী সফটওয়্যার ডেভেলপার বা ডেটা ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়, তবে সমাজে আরও গভীর প্রভাব ফেলার ভাবনাও এখন দৃশ্যমান।”
সবশেষে তিনি বলেন, “এই ক্ষেত্রটি দ্রুত পরিবর্তনশীল। আজ যা শিখছি, কয়েক বছর পর তা পুরনো হয়ে যেতে পারে। যারা কৌতূহলী, নতুন কিছু শেখার আগ্রহ রাখে এবং সমস্যা সমাধানে পারদর্শী— তাদের জন্য কম্পিউটার সায়েন্স নিঃসন্দেহে একটি ফলপ্রসূ ও ভবিষ্যতমুখী পছন্দ।”
এম.কে.