
ছবিঃ সংগৃহীত
গাজায় ইসরায়েলি স্থল অভিযানের তীব্রতা ও নতুন করে মানুষ সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অবস্থা চরম সংকটে পৌঁছেছে বলে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)। সংস্থার প্রধান ড. টেড্রোস আদানম গেব্রেইসাস বলেন, বিগত এক সপ্তাহে অন্তত ২০টি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অথবা আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গেছে।
উত্তরের বেইত লাহিয়া ও জাবালিয়ার ইন্দোনেশিয়ান, কামাল আদওয়ান এবং আল-আওয়দা হাসপাতালগুলো একটি নতুন ঘোষিত সরিয়ে নেওয়ার এলাকার মধ্যে পড়েছে। কামাল আদওয়ান হাসপাতাল বন্ধ হয়ে গেছে আশপাশের সংঘর্ষের কারণে এবং ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতাল ঘিরে ইসরায়েলি বাহিনীর অবস্থানের কারণে তা এখন কার্যত অগম্য।
আল-আওয়দা এখনও কার্যক্রম চালিয়ে গেলেও, হাসপাতালের পরিচালক ড. মোহাম্মদ সালহা জানান, এটি এখন পুরোপুরি অবরুদ্ধ। তিনি বলেন, “কেউ বাইরে যেতে পারছে না, বাইরের কেউ আসতেও পারছে না। আমরা চারপাশে ড্রোন ও ট্যাংক থেকে গুলি শুনতে পাচ্ছি।”
ডব্লিউএইচও প্রধান বলেন, “হাসপাতালগুলো সরাসরি হামলার শিকার না হলেও সামরিক উপস্থিতি ও সংঘর্ষের কারণে রোগী ও স্বাস্থ্যকর্মীদের চলাচলে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে এবং ডব্লিউএইচও সরবরাহ পৌঁছে দিতে পারছে না, যা দ্রুতই এসব প্রতিষ্ঠানকে অকার্যকর করে ফেলছে।”
চিকিৎসা সহায়তা সংস্থা (MSF) জানিয়েছে, গাজা জুড়ে ইসরায়েলি অভিযান ও বোমাবর্ষণের কারণে গত এক সপ্তাহে বহু হাসপাতাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সংস্থাটি অভিযোগ করে, ইসরায়েল গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে দিচ্ছে এবং মানবিক অবরোধ সৃষ্টি করছে।
২ মার্চ ইসরায়েল গাজা পুরোপুরি অবরুদ্ধ করে এবং দুই সপ্তাহ পর হামাসের বিরুদ্ধে আবারও সামরিক অভিযান শুরু করে, যা দু’মাসের যুদ্ধবিরতির অবসান ঘটায়। তারা বলেছে, এখনও জীবিত থাকা ২৩ জনসহ ৫৮ জন জিম্মির মুক্তির জন্য হামাসের ওপর চাপ সৃষ্টিই এই অভিযান চালানোর লক্ষ্য।
দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের ইউরোপিয়ান হাসপাতাল ১৩ মে থেকে কার্যত অকার্যকর। ইসরায়েল দাবি করে, ওই এলাকায় হামাসের সামরিক প্রধান মোহাম্মদ সিনওয়ারের লুকিয়ে থাকার খবরে বোমা বর্ষণ চালানো হয়। এতে অন্তত ২৮ জন নিহত হন বলে জানায় গাজার সিভিল ডিফেন্স।
নাসের হাসপাতাল, আল-আমাল ও আল-আকসা হাসপাতালসহ আরও কিছু হাসপাতাল এখন নতুনভাবে ঘোষিত সরিয়ে নেওয়ার এলাকার ১ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থান করছে।
নাসের হাসপাতালের ব্রিটিশ সার্জন ড. ভিক্টোরিয়া রোজ জানান, এই হাসপাতালেই এখন গাজার একমাত্র নিউরোসার্জারি, কার্ডিয়াক ও ক্যান্সার চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, “যদি নাসের হাসপাতাল সরিয়ে নিতে হয়, তাহলে শত শত রোগীর মৃত্যু প্রায় নিশ্চিত কারণ তাদের স্থানান্তরের কোনও উপায় নেই।”
হাসপাতালটির চিকিৎসা সামগ্রীর গুদাম গত সোমবার ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংস হয় এবং ডব্লিউএইচও’র গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম নষ্ট হয়ে যায়।
গত মঙ্গলবার একজন প্যারামেডিক জানান, আল-আওয়দা ও কামাল আদওয়ান হাসপাতালের মধ্যে খাবার ও কর্মী পরিবহনের সময় তাঁর অ্যাম্বুলেন্সে ড্রোন থেকে গুলি চালানো হয়। দুটি অ্যাম্বুলেন্সের কাচে গুলির চিহ্ন দেখা গেছে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার অনুযায়ী, হাসপাতাল ও চিকিৎসা কর্মীরা বিশেষ সুরক্ষায় থাকে। তবে কেউ যদি সেখান থেকে হামলা চালায় বা অস্ত্র মজুদ রাখে, তখন তা হারাতে পারে। ইসরায়েল দাবি করেছে, তাদের হামলা ‘আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী’ হচ্ছে এবং হামাস হাসপাতালগুলোকে অপব্যবহার করছে, যদিও হামাস এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
খান ইউনিসের ফার্মাসিস্ট সুহা শাথ জানান, তাঁকে আল-মাওয়াসি এলাকায় যেতে বলা হলেও তাঁকে আশ্রয়ের কোনো জায়গা দেওয়া হয়নি। “মানবিক পরিস্থিতি ভয়াবহ— পানি নেই, খাবার নেই, জ্বালানি নেই, প্রতিনিয়ত বোমা পড়ছে,” বলেন তিনি।
সূত্রঃ বিবিসি
নোভা