ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২২ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ট্রাম্পের জন্য বিলাসবহুল বিমান উপহার: প্রয়োজন পূরণ, নাকি কূটনৈতিক প্রভাব বিস্তার?

প্রকাশিত: ০৮:১৯, ২২ মে ২০২৫; আপডেট: ০৮:২০, ২২ মে ২০২৫

ট্রাম্পের জন্য বিলাসবহুল বিমান উপহার: প্রয়োজন পূরণ, নাকি কূটনৈতিক প্রভাব বিস্তার?

ছবি: সংগৃহীত

২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের জন্য নতুন এয়ার ফোর্স ওয়ান তৈরির কাজ শুরু হয়। বোয়িংয়ের সঙ্গে ৩৯০ কোটি ডলারের একটি চুক্তি হলেও, সেটি নানা জটিলতা ও বিলম্বে পড়েছে। এ সময়ই সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার জন্য আধুনিক, বিলাসবহুল ও কার্যকর একটি বিমান চাচ্ছিলেন। কারণ তখন তিনি ব্যবহার করতেন ৩৫ বছরের পুরনো একটি ৭৪৭ বিমান, যা একসময় ব্যবহৃত হয়েছিল জর্জ এইচ. ডব্লিউ. বুশের আমলেও।

 

এই প্রেক্ষাপটে ট্রাম্প প্রশাসন এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেয়। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু হয় একটি অব্যবহৃত বিলাসবহুল বোয়িং ৭৪৭-৮ বিমান নিয়ে। কাতার দীর্ঘদিন ধরেই বিমানটি বিক্রি করতে পারছিল না। সেই সুযোগেই মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক এক দূত, স্টিভেন উইথকফ-এর মধ্যস্থতায়, ট্রাম্পের সামনে উপস্থাপন করা হয় বিমানটি।

২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফ্লোরিডার মার-আ-লাগো রিসোর্টে অবস্থানকালে ট্রাম্প বিমানটি ঘুরে দেখেন এবং বিমানের রাজকীয় সাজসজ্জায় মুগ্ধ হন। বিমানটিতে ছিল বিলাসবহুল বেডরুম, স্যাটিন কাপড়ে মোড়ানো বিছানা, দামী কাঠ ও চামড়ার অভ্যন্তরীণ ডিজাইন, লাউঞ্জ, এমনকি মেডিকেল ইউনিটে রূপান্তরের সুবিধাও। অনেকেই একে উড়ন্ত রাজপ্রাসাদ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।

ট্রাম্প অবশ্য দাবি করেন, বিমানটি তার ব্যক্তিগত নয় বরং প্রতিরক্ষা দপ্তরের জন্য এবং ভবিষ্যতে এটি তার প্রেসিডেনশিয়াল লাইব্রেরির অংশ হতে পারে। অন্যদিকে, কাতার বলছে এটি সরকার-থেকে-সরকার পর্যায়ে উপহার হিসেবে হস্তান্তর হতে পারে, তাও বিনা মূল্যে।

 

 

তবে বিশ্লেষকরা সতর্ক করছেন, এই বিমানকে প্রেসিডেন্টের ব্যবহারের উপযোগী করতে হলে সংযোজন করতে হবে পারমাণবিক বিস্ফোরণ প্রতিরোধ ব্যবস্থা, ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ প্রযুক্তি, সাইবার নিরাপত্তা এবং গোপন যোগাযোগ প্রযুক্তি। এসব রেট্রোফিট করতে খরচ পড়বে প্রায় ১০০০ কোটি টাকা। এয়ারফোর্সের হিসেব অনুযায়ী প্রকল্পটি শেষ হতে সময় লাগবে ২০২৭ সাল পর্যন্ত।

এই প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠছে, বিমান উপহার দিয়ে কাতার কি যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণে প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে? কংগ্রেস এখনো এই উপহারের অনুমোদন দেয়নি এবং অনেক আইনপ্রণেতা বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ট্রাম্পের সাংবিধানিক ও নৈতিক এখতিয়ার নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে, যদিও হোয়াইট হাউস এবং বিচার বিভাগ বলছে যেহেতু এটি রাষ্ট্রীয় উপহার, তাই সংবিধান লঙ্ঘনের প্রশ্ন ওঠে না।

সাবেক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা এন্ড্রু হান্টার সতর্ক করে বলেন, এই বিমান চালাতে বছরে খরচ হতে পারে প্রায় ১৩৪০ কোটি ডলার, যা এতটাই ব্যয়বহুল যে কোনও বেসরকারি এয়ারলাইন্সও এটি টিকিয়ে রাখতে পারবে না।

 

 

শেষ পর্যন্ত প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে, এই বিমান কি ট্রাম্পের প্রয়োজন পূরণ করবে, নাকি যুক্তরাষ্ট্রের উপর বিদেশি প্রভাব বিস্তারের নতুন একটি দরজা খুলে দেবে?

 

আঁখি

×