
ছবি: দৈনিক জনকন্ঠ
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়ার ঢোলারহাট এলাকায় অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী গৌরলাল জমিদার বাড়ির শিব মন্দিরটি আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে।
প্রায় ৫০ ফুট উচ্চতার দ্বিতল এই মন্দিরটির নির্মাণশৈলী ও স্থাপত্যকলায় ঐতিহাসিক গুরুত্ব থাকলেও, দীর্ঘদিন ধরে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এটি এখন জীর্ণ-শীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। মন্দিরটির প্রথম তলায় ছিল পূর্ব ও দক্ষিণমুখী দুটি দরজা, যার মধ্যে দক্ষিণ দরজায় ছিল সতেরটি শিবলিঙ্গের প্রতিকৃতি, যার অধিকাংশই এখন বিলুপ্তপ্রায়। দ্বিতীয় তলায় ছিল চারটি দরজা ও জানালা, জানালাগুলোতে ছিল ত্রিভুজাকার ইটের জাল। প্রায় ১৮-১৯ বছর আগে এক ঝড়-বৃষ্টির রাতে মন্দিরের গম্বুজটি ধসে পড়ে। এর পর থেকে অব্যবহৃত ও অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে পুরো স্থাপনাটি।
মন্দিরের সামনে রয়েছে একটি বিশাল দিঘি এবং পাশে আরও দুটি ছোট মন্দির। জমিদার গৌরলালের মৃত্যুর পর তাঁর বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেলেও এই মন্দিরই তার অস্তিত্বের স্মারক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বাড়ির চারদিকে এখনও রয়েছে প্রতিরক্ষার জন্য খনন করা পরিখা। একসময় পাকিস্তান আমলে এই মন্দির ডাকাতদের আস্তানা হিসেবে ব্যবহৃত হতো। তখন এই এলাকা ছিল জনশূন্য ও জঙ্গলাকীর্ণ।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে গরু চোরদের নিরাপদ ঘাঁটিতে পরিণত হয় এই স্থান। বর্তমানে লোকালয় গড়ে ওঠায় এসব কার্যক্রম বন্ধ হলেও ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাটি থেকে গেছে অবহেলায়। মন্দিরের ভিতরে এখনও রয়েছে একটি বিশাল শিবলিঙ্গ, এবং স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন প্রতিবছর এখানে শিবরাত্রি উপলক্ষে পূজা ও তিন দিনব্যাপী পুণ্যস্নানের আয়োজন করেন।
এলাকার প্রবীণদের ভাষ্যমতে, মন্দির পরিষ্কার করে বছরে একবার পূজা হলেও, সাধারণ সময়ে এটি পরিত্যক্তই পড়ে থাকে। ভিতরে বাসা বেঁধেছে সাপ, ব্যাঙ ও ইঁদুর। মন্দির পরিচালনার জন্য একটি কমিটি গঠিত হয়েছে।
কমিটির অর্থ বিষয়ক সম্পাদক বিষক লাল (সুজন) বলেন, “মন্দিরটি ১০-১২ বছর পূর্বে সংস্কার করা হয়েছে। বর্তমানে মন্দিরটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এটি ঠাকুরগাঁও জেলার ইতিহাস ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। আমি অনতিবিলম্বে মন্দিরটি সংস্কারের জন্য সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি।”
২১ নং ঢোলারহাট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অখিল চন্দ্র রায় জানান, “এখানে প্রতিবছর শিব পূজা, দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এটি একটি পৌরাণিক ইতিহাসের নিদর্শন স্বরূপ। আমি বর্তমান সরকারের নিকট দাবি জানাবো এই মন্দিরটি জরুরী যেন সংস্কার করা হয়।”
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার খাইরুল ইসলাম বলেন, “মন্দির কমিটির সভাপতি ও সেক্রেটারি যদি সংস্কারের সহযোগিতা চেয়ে আবেদন করে তাহলে বিষয়টি দেখবো।”
মিরাজ খান