ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২২ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

আমতলীতে চাহিদার তুলনায় গবাদি পশু বেশী

বাজারে গবাদি পশুর দাম কিছুটা কম, সড়কে চাঁদা নিয়ে দুচিন্তায় ব্যবসায়ীরা

মোঃ হোসাইন আলী কাজী, আমতলী, বরগুনা

প্রকাশিত: ১৪:২২, ২২ মে ২০২৫; আপডেট: ১৪:২৮, ২২ মে ২০২৫

বাজারে গবাদি পশুর দাম কিছুটা কম, সড়কে চাঁদা নিয়ে দুচিন্তায় ব্যবসায়ীরা

ছবিঃ বাজারে বিক্রেতারা কুরবানির পশু নিয়ে আসছেন।

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে আমতলীর ৮ টি বাজারে বেশ পশু আসছে। উপজেলায় চাহিদার চেয়ে পশু বেশী রয়েছে। বিগত বছরের তুলনায় দাম কিছুটা কম। কিন্তু সড়কে চাঁদার ভয়ে পাইকারী ব্যবসায়ীরা বাজারে আসছেন না বলেন জানান স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। সড়কে চাঁদা বন্ধের দাবী জানিয়েনে তারা।    

আমতলী প্রাণী সম্পদ অফিস সূত্রে জানাগেছে, উপজেলায় কোরবানীর জন্য ৮ হাজার ৮’শ ১৩ টি গবাদি পশুর চাহিদা রয়েছে। চাহিদার বিপরীতে এ উপজেলার ৯ হাজার ৭০ টি পশু রয়েছে। এর মধ্যে ৫ হাজার ৯’শ ১২ টি গরু, ৫৯৫ টি মহিষ,২ হাজার ৫ টি ৬৩ টি ছাগল । চাহিদার তুলনায় ২’শ৫৭ টি পশু বেশী রয়েছে। শেষ সময়ে ভালো লাভের আশায় ব্যস্ত খামারীরা। খুব যত্ন সহকারে গবাদি পশুর দেখভাল করছেন তারা। ইতিমধ্যে খামারীরা বাজারে পশু নিয়ে আসছেন। আমতলী উপজেলার ৮ টি হাটের গরু দেশের যশোর, খুলনা, ঝিনাইদাহ, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, নওগা ও নেত্রকোনাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রপ্তানী হয়। ওই অঞ্চলগুলোর পাইকারী ব্যবসায়ীরা আমতলীর হাটগুলো গরুর হাট থেকে পশু ক্রয় করেন। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ সড়কের বিভিন্ন স্থানে চাঁদা দিতে হয়। চাঁদার ভয়ে পাইকারী ব্যবসায়ীরা বাজারে আসছেন না এমন অভিযোগ স্থানীয় ব্যবসায়ীদের। ফলে গরুর দাম কম যাচ্ছে। প্রশাসনকে দ্রæত সড়কের চাঁদা বন্ধের দাবী জানিয়েছেন তারা। 

আমতলী গাজীপুর বন্দরের গরু ব্যবসায়ী আলহাজ্ব মাহবুবুর রহমান হাওলাদার বলেন, এ বছর বাজারে গরু অনেক বেশী উঠছে। গত বছরর তুলনায় এ বছর বড় ও মাঝারি ধরনের গরু ৫ থেকে ১৫ হাজার টাকা কম দামে বিক্রি হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, এখন পর্যন্ত কোরবানী উপযুক্ত ৫২ টি গরু বিক্রি করেছি। তেমন বেশী লাভ হয়নি।  তিনি আরো বলেন, ব্যবসায়ীরা সড়কে চাঁদার ভয়ে বাজারে আসছেন না। ফলে গরুর দাম কম। ২৭ টি গরু ঢাকায় নেয়ার উদ্দেশ্যে ট্রাক লোড করছি। কিন্তু সড়কের চাঁদার জন্য ভয় হয়। এক ট্রাক গরু ঢাকায় পৌছতে সড়কের বিভিন্ন স্থানে অন্তত ১০ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হবে।  এ চাঁদা বন্ধের দাবী জানান তিনি।  

নেত্রকোনার ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলাম ও নওগাঁ ব্যবসায়ী গফুর মিয়া বলেন, গরু ক্রয় করে ট্রাক লোড দিয়েছি। কিন্তু যথাস্থানে যেতে সড়কের বিভিন্ন স্থানে চাঁদা দিতে হয়। এ নিয়ে আমরা ব্যবসায়ীরা বেশ সমস্যায় আছি। তারা আরো বলেন, সড়কে চাঁদা বন্ধ হলে আমরা অল্প লাভে গরু বিক্রি করতে পারতাম। এখন ওই সকল খরচ ক্রেতাদের ওপরে বর্তায়। খোঁজ খবর নিয়ে জানাগেছে, বাজারে চাহিদার তুলনা গরু বেশী উঠেছে। কিছুটা কম দামে পশু বিক্রি হচ্ছে। খামার মালিকার পশু বিক্রির জন্য প্রস্তুত করছেন। 

পশ্চিম চুনাখালী গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ৪০ হাজার টাকায় একটি ছোট গরু ক্রয় করেছি। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর গরুর দাম কম। জিমি এগ্রো ভেট এর মালিক আবুল বাশার নয়ন মৃধা বলেন,  আমার খামারে কোরবানী উপযোগী ১৭ টি গরু রয়েছে। ওইগুলো বিক্রি করা হবে। তিনি আরো বলেন, আমি গরু বাজারে নেব না। খামারে রেখেই বিক্রি করবো। অনেক ব্যবসায়ী আমার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। 

খামারী জাহাঙ্গির বলেন, খামারের ৮ টি গরু বিক্রি করেছি। কোরবানী কাছাকাছি আসলে হয়ত দাম বৃদ্ধি পেতে পারে কিন্তু সেই ঝুঁকি নেইনি। আমতলী গরু হাটের ইজারাদার আলাউদ্দিন মৃধা বলেন, বাজারে অনেক গরু আসছে। বিক্রিও ভালো। এ বাজারে ৫’শ গরু বিক্রি হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ঈদুল আজহা কাছাকাছি আসলে বিক্রি আরো বৃদ্ধি পাবে। তবে বিগত বছরের তুলনায় এ বছর গরুর দাম কিছুটা কম। 

আমতলী থানার ওসি মোঃ আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন, উপজেলার সকল বাজারে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা রয়েছে। বাজারে আসা ক্রেতা-বিক্রেতারা পশু ক্রয়-বিক্রি করে যাতে নির্বিঘ্নে বাড়ী ফিরতে পারে সেই ব্যবস্থা নিয়েছি। তিনি আরো বলেন, জাল টাকা লেনদেন যাতে না হয় বেশী ব্যাপারে নজরদারী থাকবে। সড়কের চাঁদা বন্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোন মতেই ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করা যাবে না। 

আমতলী উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ সাদেকুর রহমান বলেন, উপজেলায় প্রয়োজনের তুলনায় বেশী গবাদি পশু রয়েছে। কোরবানীর চাহিদা পুরণ হয়েও কিছু পশু উদ্ভুত্ত থাকবে। তিনি আরো বলেন, বাজার মনিটরিং করতে দুইটি টিম গঠন করা হয়েছে। তারা বাজারে পরিদর্শনে গিয়ে পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করবেন। আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রোকনুজ্জামান খাঁন বলেন, পশুর হাটগুলোর উপরে বেশ নজরদারী রয়েছে। কেউ সড়কে চাঁদা আদায় করতে পারবে না। সড়কে চাঁদা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে।   

নোভা

×